News Bangladesh

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১০:০৪, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় একদিনে ৯১ ফিলিস্তিনি নিহত

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় একদিনে ৯১ ফিলিস্তিনি নিহত

ছবি: সংগৃহীত

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের টানা বোমাবর্ষণে শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) একদিনেই অন্তত ৯১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে গাজা সিটিতেই প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ৪৫ জন। আহতদের ঢল নেমেছে হাসপাতালগুলোতে, তবে অধিকাংশ চিকিৎসাকেন্দ্র কার্যত ধ্বংসসীমায় পৌঁছে গেছে।

গাজার সরকারি গণমাধ্যম দফতর অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল যে এলাকাগুলোকে ‘নিরাপদ মানবিক অঞ্চল’ ঘোষণা করেছিল, সেখানেই সবচেয়ে বেশি হামলা চালানো হচ্ছে। 

তাদের দাবি অনুযায়ী, গাজা সিটি থেকে সাধারণ মানুষকে জোরপূর্বক দক্ষিণ ও কেন্দ্রীয় অঞ্চলে সরিয়ে নেওয়া হলেও গত ১১ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত ঐ এলাকাতেই ১৩৩ দফা হামলায় অন্তত ১ হাজার ৯০৩ জন নিহত হয়েছেন, যা ওই সময়ের মোট প্রাণহানির প্রায় ৪৬ শতাংশ।

সংস্থাটি বলেছে, “এটি প্রমাণ করে যে সাধারণ মানুষই ইসরায়েলি হামলার মূল লক্ষ্য।” তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জরুরি হস্তক্ষেপ দাবি করেছে এবং সতর্ক করেছে যে বৈশ্বিক নীরবতা ইসরায়েলকে আরও হত্যাযজ্ঞ চালানোর ‘সবুজ সংকেত’ দিচ্ছে।

আল জাজিরার প্রতিবেদক হানি মাহমুদ জানিয়েছেন, শনিবার সকাল থেকেই গাজা সিটিতে হামলার তীব্রতা বেড়েছে। এক পরিবার গাড়িতে করে পালানোর সময় ড্রোন হামলার শিকার হয়; ঘটনাস্থলেই অন্তত চারজন নিহত হন। তিনি বলেন, “শত শত মানুষ ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। ড্রোন ও যুদ্ধবিমান তাদের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় তাড়া করছে।

ইসরায়েলি গোলাবর্ষণের কারণে গাজা সিটির একাধিক হাসপাতাল আংশিক বা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। শনিবার সকালে শহরের অন্যতম চিকিৎসাকেন্দ্র জর্ডান ফিল্ড হাসপাতালে ভয়াবহ গোলাবর্ষণ হয়, ফলে ১০৭ জন রোগী ও কর্মীকে সরিয়ে নিতে হয়।

বর্তমানে গাজার অধিকাংশ হাসপাতালে অ্যানেসথেসিয়া ও অ্যান্টিবায়োটিকসহ মৌলিক ওষুধের অভাব দেখা দিয়েছে। চিকিৎসকরা প্রায় না খেয়েই চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন। দক্ষিণাঞ্চলের হাসপাতালগুলোও আহতদের প্রবল চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে।

আরও পড়ুন: কুয়ালালামপুরে অভিযান, বাংলাদেশিসহ গ্রেফতার ১৯৬ বিদেশি

আল-আকসা হাসপাতালের চিকিৎসক খলিল দিগরান অভিযোগ করেন, ইসরায়েলি সেনারা ইচ্ছাকৃতভাবে শিশুদের একমাত্র বিশেষায়িত হাসপাতাল আল-রান্তিসি পেডিয়াট্রিক হাসপাতাল লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। বর্তমানে গাজা সিটি ও উত্তরে কেবল দুটি হাসপাতাল—আল-শিফা ও আল-আহলি—সামান্য পরিসরে চালু আছে।

একজন বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি আল জাজিরাকে বলেন, এক বিছানায় এখন দুইজন রোগীকে শুইয়ে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। পরিস্থিতি ভয়াবহ।

শনিবার জার্মানির বার্লিন ও যুক্তরাজ্যের লিভারপুলসহ বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন শহরে যুদ্ধবিরতির দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার মন্তব্য করেন, মনে হচ্ছে গাজা নিয়ে একটা চুক্তি হতে যাচ্ছে। তবে তিনি বিস্তারিত তথ্য বা সময়সীমা উল্লেখ করেননি। ইসরায়েল থেকেও এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসেনি।

হামাস অবশ্য জানিয়েছে, তারা এমন কোনো প্রস্তাব পায়নি। হামাসের এক কর্মকর্তা আল জাজিরাকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমাদের কাছে কোনো পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়নি।

অন্যদিকে আল জাজিরা ও টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদনে জানা গেছে, গত বুধবার ট্রাম্পের সঙ্গে ৮ মুসলিম দেশের নেতাদের বৈঠকে গাজা যুদ্ধবিরতির জন্য ২১ দফা প্রস্তাব পেশ করা হয়। এ প্রস্তাবগুলোতে মূলত গাজাকে চরমপন্থা-মুক্ত ও সন্ত্রাস-মুক্ত অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলা, হামাসের সামরিক অবকাঠামো ধ্বংস করা, জিম্মিদের মুক্তি, কয়েকশো ফিলিস্তিনি বন্দির মুক্তি, প্রতিদিন অন্তত ৬০০ ট্রাক ত্রাণ ঢোকানো, গাজায় আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে একটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন গঠন এবং নতুন আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েনের কথা উল্লেখ রয়েছে।

প্রস্তাবে আরও বলা হয়, গাজার পুনর্গঠন ও অর্থনৈতিক পুনর্বাসনে যুক্তরাষ্ট্র, আরব ও ইউরোপীয় দেশগুলো যৌথভাবে তত্ত্বাবধান করবে। তবে গাজার শাসনে হামাসের কোনো ভূমিকা থাকবে না। হামাস এ প্রস্তাব গ্রহণে বিলম্ব করলে দফাগুলো হামাসের নিয়ন্ত্রণহীন এলাকায় প্রয়োগ করা হবে।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ হুমকি দিয়ে বলেছেন, লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত গাজায় যুদ্ধ চলবে। 

তিনি আরও জানান, গাজায় বর্বরতা বাড়ানো হবে। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জাতিসংঘের ভাষণে ঘোষণা করেছেন, গাজায় হামলা অব্যাহত থাকবে।

আগামী সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) ওয়াশিংটনে নেতানিয়াহুর সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক হবে। সেই বৈঠকেই স্পষ্ট হবে ইসরায়েল ২১ দফা প্রস্তাবে সায় দেবে কি না। এরই মধ্যে ট্রাম্প সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেছেন, আমরা হয়তো যুদ্ধবিরতিচুক্তির দ্বারপ্রান্তে আছি।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়