News Bangladesh

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২১:২৫, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ঐক্যের আহ্বান গুতেরেসের

বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ঐক্যের আহ্বান গুতেরেসের

ছবি: সংগৃহীত

নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশন শুরু হয়েছে মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫)। অধিবেশনের উদ্বোধনী ভাষণে মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেস একাধিক বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপের আহ্বান জানান। 

জলবায়ু পরিবর্তন থেকে শুরু করে ইসরাইল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্ব, ইউক্রেন ও সুদানের যুদ্ধ, সোমালিয়া, সাহেল, হাইতি ও মিয়ানমারের অস্থিতিশীলতা—প্রায় প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতেই তিনি স্পষ্ট অবস্থান তুলে ধরেন।

নিজের বক্তব্যে গুতেরেস সর্বাগ্রে জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় বিশ্বকে এক হওয়ার আহ্বান জানান। 

তিনি বলেন, আমাদের অবশ্যই জলবায়ু ন্যায়বিচার বেছে নিতে হবে। মহাসচিব সতর্ক করে দেন যে পরিষ্কার জ্বালানির ভবিষ্যৎ এখন আর কোনো দূরের প্রতিশ্রুতি নয়, বরং বাস্তব ও উপস্থিত একটি সমাধান। 

তিনি জীবাশ্ম জ্বালানিকে ‘বাজিতে হেরে যাওয়া’ বলে অভিহিত করেন এবং দাবি করেন, নবায়নযোগ্য শক্তির পথে বাধা সৃষ্টি করা মানে কেবল অর্থনীতির ক্ষতি করা নয়, বরং ঐতিহাসিক সুযোগ হাতছাড়া করা।

তার এই বক্তব্য সরাসরি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জ্বালানি নীতির সঙ্গে বৈপরীত্য তৈরি করে। দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর ট্রাম্প বারবার বায়ু ও সৌরশক্তিকে অবিশ্বস্ত ও ব্যয়বহুল আখ্যা দিয়ে এসেছেন। 

তার দাবি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি নির্ভরযোগ্য বিকল্প নয়, বরং বিদেশি-নিয়ন্ত্রিত সরবরাহ শৃঙ্খলের ওপর নির্ভরশীল এবং পরিবেশকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। অথচ এ পথই ছিল সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জলবায়ু নীতির মূল ভিত্তি। ফলে গুতেরেসের এই অবস্থানকে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির প্রতি সরাসরি চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, কোনো সরকার, শিল্প বা বিশেষ স্বার্থগোষ্ঠী এই অগ্রযাত্রা থামাতে পারবে না। তবে কিছু পক্ষ সচেতনভাবে পরিষ্কার জ্বালানির পথে বাধা সৃষ্টি করছে, যা জ্বালানির দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে এবং এক ঐতিহাসিক সুযোগকে নষ্ট করছে। 

তিনি মনে করিয়ে দেন, আজকের বিশ্ব জাতিসংঘের কাছ থেকে অনন্য বৈধতা, আহ্বান জানানোর ক্ষমতা ও বিভক্তি দূর করার দৃষ্টিভঙ্গি প্রত্যাশা করছে। এজন্য সংস্থাটিকে আরও শক্তিশালী, কার্যকর ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হতে হবে।

গুতেরেস প্রতিনিধিদের উদ্দেশে বলেন, সঠিক সিদ্ধান্ত কী, তা জানা যথেষ্ট নয়। সেগুলো বাস্তবায়ন করা এবং একসঙ্গে করা জরুরি। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বিশ্বকে কখনও হাল ছেড়ে দেওয়া উচিত নয় এবং শান্তি, মর্যাদা, ন্যায়বিচার ও মানবতার লক্ষ্যে তিনিও কখনও হাল ছাড়বেন না।

আরও পড়ুন: আইসিসির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

গুতেরেসের ভাষণের একটি বড় অংশ জুড়ে ছিল ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংকট। গাজায় বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে এবং পশ্চিম তীরে অস্থিতিশীলতা তীব্র হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই সংঘাত এখন নৈতিক, আইনি ও রাজনৈতিকভাবে পুরোপুরি অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। 

তিনি স্পষ্ট করে দেন, একমাত্র সমাধান হলো দুটি স্বাধীন, সার্বভৌম ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র—ইসরাইল ও ফিলিস্তিন—১৯৬৭ সালের পূর্বের সীমানার ভিত্তিতে নিরাপদ ও স্বীকৃত সীমানার মধ্যে সহাবস্থান করবে, যেখানে জেরুজালেম হবে উভয় রাষ্ট্রের যৌথ রাজধানী।

এর আগের দিন, সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর), সৌদি আরব ও ফ্রান্সের যৌথ সভাপতিত্বে জাতিসংঘে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে জোরালো সমর্থন দেখা যায়। এদিন ফ্রান্সের পাশাপাশি যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও পর্তুগাল আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। একই সঙ্গে বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা, অ্যান্ডোরা ও সান মারিনোও স্বীকৃতি ঘোষণার মধ্য দিয়ে এই অবস্থানকে আরও জোরালো করে তোলে। বর্তমানে ১৯৩টি জাতিসংঘ সদস্য দেশের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে।

তবে বিতর্কিতভাবে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে এবার অধিবেশনে উপস্থিত থাকতে দেওয়া হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র তার ভিসা বাতিল করায় তিনি ভিডিওবার্তার মাধ্যমে অংশ নেন। অনেক বিশ্লেষক এই পদক্ষেপকে ওয়াশিংটনের রাজনৈতিক বার্তা হিসেবে দেখছেন।

গুতেরেস জলবায়ু পরিবর্তন ও মধ্যপ্রাচ্য ছাড়াও একাধিক বৈশ্বিক সংকটের প্রসঙ্গ টানেন। 

তিনি সুদান ও ইউক্রেনের যুদ্ধ, আফ্রিকার সাহেল অঞ্চল ও সোমালিয়ার অস্থিরতা, হাইতি ও মিয়ানমারের চলমান সংকট তুলে ধরে বলেন, এগুলো মানবিক বিপর্যয়কে আরও গভীর করছে। 

একই সঙ্গে তিনি আরও ন্যায়ভিত্তিক বিশ্ব অর্থনীতি, উন্নয়নের জন্য তহবিল বৃদ্ধি এবং উদীয়মান প্রযুক্তি, বিশেষত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) প্রতি মনোযোগ বাড়ানোর আহ্বান জানান।

জাতিসংঘ মহাসচিবের ভাষণ বৈশ্বিক বাস্তবতায় এক জোরালো অবস্থান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে তার মন্তব্য ট্রাম্প প্রশাসনের জ্বালানি নীতিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। 

অপরদিকে ইসরাইল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে সাম্প্রতিক রাষ্ট্র স্বীকৃতির ধারা ও গুতেরেসের দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের ডাক আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে নতুন মোড় এনেছে।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দেওয়া আন্তনিও গুতেরেসের ভাষণ শুধু রাজনৈতিক আহ্বান নয়, বরং জলবায়ু সংকট, যুদ্ধবিগ্রহ ও মানবিক বিপর্যয়ের মুখে বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য এক তীব্র সতর্কবার্তা। শান্তি, মর্যাদা, ন্যায়বিচার ও মানবতার লক্ষ্যে তিনি যেমন নিজের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন, তেমনি বিশ্ব নেতাদের কাছ থেকেও বাস্তব পদক্ষেপের প্রত্যাশা করেছেন।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়