আইসিসির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

ছবি: সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)-কে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সম্পূর্ণভাবে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনার কথা বিবেচনা করছে। এটি কার্যকর হলে আদালতের দৈনন্দিন কার্যক্রম বিপর্যস্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছয়টি সূত্রের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।
ওয়াশিংটন ইতোমধ্যে আইসিসির কয়েকজন বিচারক ও প্রসিকিউটরের ওপর ব্যক্তিগত নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তবে এবার আদালতকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হলে সেটি হবে বড় ধরনের কূটনৈতিক পদক্ষেপ।
একজন মার্কিন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন যে ‘এনটিটি স্যাংশন’ নিয়ে আলোচনা চলছে। যদিও তিনি সুনির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করেননি।
এদিকে সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে অভ্যন্তরীণ জরুরি বৈঠক করেছে আইসিসি আর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর কূটনীতিকরাও এ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন মুখপাত্র অভিযোগ করেছেন, আইসিসি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের ওপর “অবৈধ এখতিয়ার” দেখাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমাদের সশস্ত্র সদস্যদের সুরক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র অতিরিক্ত আরও পদক্ষেপ নেবে যতদিন পর্যন্ত আইসিসি আমাদের জাতীয় স্বার্থের জন্য হুমকি হয়ে থাকবে।
আদালতের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হলে ব্যাংকিং সেবা, সফটওয়্যার ব্যবহার এমনকি কর্মীদের বেতন পরিশোধেও সমস্যা হতে পারে। সম্ভাব্য ঝুঁকি এড়াতে আদালতের কর্মীদের ২০২৫ সালের বাকি সময়ের বেতন আগাম পরিশোধ করা হয়েছে বলে তিনটি সূত্র জানিয়েছে।
পাশাপাশি বিকল্প ব্যাংকিং ব্যবস্থা ও সফটওয়্যার সরবরাহকারীর সন্ধান করছে আইসিসি।
আরও পড়ুন: ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিল ফ্রান্স
হেগভিত্তিক এই আদালত সম্প্রতি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট এবং হামাসের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।
তিন কূটনৈতিক সূত্র বলছে, নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ অধিবেশনে আইসিসির ১২৫টি সদস্য রাষ্ট্রের কিছু দেশ যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারে। তবে কূটনৈতিক মহলের অভিমত, ওয়াশিংটন আরও কঠোর পদক্ষেপের পথে হাঁটবে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও আইসিসিকে “জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি” আখ্যা দিয়ে বলেছেন, এটি যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আইনযুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।
২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত আইসিসি গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের বিচার করার এখতিয়ার রাখে, যদি তা কোনো সদস্য রাষ্ট্রের নাগরিক বা ভূখণ্ডে ঘটে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল এর সদস্য নয়। কিন্তু আদালত ফিলিস্তিনকে সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে সংঘটিত অপরাধের ওপর এখতিয়ার দাবি করছে। যদিও এই অবস্থান প্রত্যাখ্যান করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল।
গত ফেব্রুয়ারিতে আদালতের প্রধান প্রসিকিউটর করিম খানকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনে হোয়াইট হাউস। তিনি নেতানিয়াহু ও গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চেয়েছিলেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এটি যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, গণহত্যা ও আগ্রাসনের অপরাধ বিচার করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত। আইসিসির সদস্য রাষ্ট্রের সংখ্যা ১২৫টি, তবে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া ও ইসরায়েল এই আদালতের সদস্য নয়। আইসিসির হাতে বিচারিক ক্ষমতা থাকলেও কোনো অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে পারে না। আইসিসি যা করতে পারে তা হলো, অভিযুক্ত ব্যক্তিকে বিভিন্ন দেশের সহায়তায় গ্রেফতার করা এবং গ্রেফতারের পরে তাকে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে তার কার্যালয়ে বিচারের জন্য হাজির করা।
যুক্তরাষ্ট্রের আইসিসির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তুতি আদালতের কার্যক্রমে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। এটি আন্তর্জাতিক আইন ও কূটনীতির ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া ও পরবর্তী পদক্ষেপ এই পরিস্থিতির উন্নতি বা অবনতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি