News Bangladesh

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২০:৪৬, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নেপো কিডদের বিলাসী জীবনেই জেন-জি বিক্ষোভের আগুন

নেপো কিডদের বিলাসী জীবনেই জেন-জি বিক্ষোভের আগুন

ছবি: সংগৃহীত

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধের সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া তরুণদের আন্দোলনে অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে নেপাল। মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই এ বিক্ষোভ ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি, ভেঙে পড়েছে পুরো সরকারব্যবস্থা। দেশ কার্যত নেতৃত্বহীন অবস্থায় আছে।

এনডিটিভি ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, পুলিশের দমন-পীড়নে এখন পর্যন্ত অন্তত ৩১ জন নিহত এবং ১,০০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। 

আবার অন্য একটি প্রতিবেদনে এই সংখ্যা ৫১ জন নিহত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। শত শত মানুষ এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

বিক্ষোভকারীরা কেবল রাজপথে অবস্থানই নেননি, বরং রাজধানী কাঠমান্ডু ও আশপাশের এলাকায় সরকারি ও ব্যক্তিগত স্থাপনায় হামলা চালিয়েছেন। জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে নেপালের সংসদ ভবন। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রী ওলির ভক্তপুরের বালকোটের বাসভবনে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর এবং মন্ত্রীদের বাড়িতে। নেপালি কংগ্রেস পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ ক্ষমতাসীন জোটের শরিকদের কার্যালয়েও হামলা হয়। পর্যটনকেন্দ্রের হোটেলগুলোতেও আগুন ধরানো হয়।

সরকার ভেঙে পড়ায় এখন দেশ কার্যত সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। তারা রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরে কারফিউ জারি করেছে এবং বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছে। সেনারা নিয়মিত টহল দিচ্ছে, অধিকাংশ এলাকায় চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। 

রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পৌডেল জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, বর্তমান সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।

সরকার যখন অভিযোগ তোলে যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া খবর ছড়ানো হচ্ছে, তখন তারা ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ, স্ন্যাপচ্যাটসহ ২৬টি প্ল্যাটফর্ম বন্ধ করে দেয়। টিকটক, ভাইবার ও উইটক নিবন্ধন নেওয়ায় সচল থাকে।

এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে প্রথমে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে, কিন্তু আন্দোলনের মূল কেন্দ্রে ছিল তরুণ প্রজন্মের দীর্ঘদিনের অসন্তোষ। জেন-জি প্রজন্মের তরুণরা নেতৃত্বে এসে আন্দোলনকে অভূতপূর্ব মাত্রায় নিয়ে যায়।

২৪ বছর বয়সী শিক্ষার্থী যুজান রাজভান্ডারী এএফপিকে বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধের বিষয়টি আমাদের ক্ষুব্ধ করেছে। কিন্তু শুধু এই কারণেই আমরা এখানে জড়ো হইনি, বরং নেপালে দুর্নীতি যেভাবে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে, আমরা তার বিরুদ্ধেই প্রতিবাদ করছি।

২০ বছর বয়সী আইক্সামা তুমরোক বলেন, আমরা পরিবর্তন চাই। আগের প্রজন্ম হয়তো সহ্য করেছে, কিন্তু আমাদের প্রজন্মে এর অবসান ঘটাতে হবে।

আন্দোলনের মূল ইস্যুতে উঠে আসে রাজনৈতিক নেতাদের সন্তান—যারা পরিচিত ‘নেপো কিডস’ বা ‘নেপো বেবি’ নামে। তাদের বিলাসবহুল জীবনযাপন সাধারণ মানুষের ক্ষোভের আগুনে ঘি ঢেলে দেয়।

আরও পড়ুন: নেপালে দুর্নীতিবিরোধী বিক্ষোভে নিহত ৫১

  • শৃঙ্খলা খাতিওয়াড়া: সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিরোধ খাতিওয়াড়ার মেয়ে, প্রাক্তন মিস নেপাল। তার বিদেশ ভ্রমণ ও বিলাসী জীবনযাত্রার ছবি ভাইরাল হলে বিক্ষোভকারীরা তার বাবার বাড়িতে আগুন ধরায়। ইনস্টাগ্রামে তিনি এক লাখের বেশি অনুসারী হারান।
  • শিবানা শ্রেষ্ঠা: জনপ্রিয় গায়িকা এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবার পুত্রবধূ। তিনি ও তার স্বামী জয়বীর সিং দেউবা বিলাসবহুল বাড়ি ও কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক হিসেবে সমালোচিত হন।
  • স্মিতা দহল: সাবেক প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দহল (প্রচণ্ড)-এর নাতনি। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় লাখ লাখ টাকার হ্যান্ডব্যাগ প্রদর্শন করায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন। প্রচণ্ডের বাড়িতেও হামলা হয়।
  • সৌগত থাপা: আইনমন্ত্রী বিন্দু কুমার থাপার ছেলে। তার বিলাসবহুল জীবনযাত্রার ছবি ভাইরাল হলে তিনি আন্দোলনের নিশানায় পরিণত হন।

টিকটক, ইনস্টাগ্রাম, এক্স ও রেডিটে #PoliticiansNepoBabyNepal, #NepoBabies এবং #NepoKids হ্যাশট্যাগগুলো লাখ লাখ ভিউ পেয়েছে। এসব পোস্টে সাধারণ নেপালিদের দারিদ্র্য ও বেকারত্বের সঙ্গে ধনী রাজনীতিবিদদের সন্তানের আড়ম্বরপূর্ণ জীবনের তুলনা করা হয়।

একটি ভাইরাল ভিডিওতে একজন টিকটক ব্যবহারকারী বলেন, নেপো কিডসরা ইনস্টাগ্রামে বিলাসী জীবন দেখায়, কিন্তু টাকা কোথা থেকে আসে, তা কখনো ব্যাখ্যা করে না।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের সমীক্ষায় নেপালকে ধারাবাহিকভাবে এশিয়ার অন্যতম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ বলা হয়েছে।

পোখারা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্পে অন্তত ৭ কোটি ১০ লাখ ডলার আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে (নিউ ইয়র্ক টাইমস)।

ভুটান থেকে বাস্তুচ্যুত নেপালিদের জন্য নির্ধারিত শরণার্থী কোটার বেচাকেনায়ও রাজনীতিবিদদের জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে।

এসব ঘটনার বিচার প্রায় হয়নি, যা সাধারণ মানুষের কাছে রাজনীতিবিদদের দায়মুক্তির চিত্র আরও স্পষ্ট করেছে।

আন্দোলনকারীরা এখন সংবিধান সংশোধনের দাবি জানাচ্ছেন এবং কোনো প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলকেই আর বিশ্বাস করতে চাইছেন না। সব মিলিয়ে বিশ্বের সর্বোচ্চ চূড়ার দেশটি আজ রাজনৈতিক শূন্যতার মধ্য দিয়ে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগোচ্ছে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়