News Bangladesh

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৫:৫৭, ৪ মে ২০২৫

তেল আবিবে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, দুই ইসরায়েলি সেনা নিহত

তেল আবিবে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, দুই ইসরায়েলি সেনা নিহত

ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েলের তেল আবিবে অবস্থিত দেশটির প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বেন গুরিয়নে এক হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান সমর্থিত ইয়েমেনি বিদ্রোহী গোষ্ঠী হুতি। এতে  ২ জন ইসরায়েলি সেনা নিহতের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে বিমানবন্দরের সব ফ্লাইট স্থগিত করা হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ পরিস্থিতিতে নতুন উত্তাপ ছড়াচ্ছে হুতিদের এ হামলা। 

রবিবার (৪ মে) এ হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছে টাইম অব ইসরাইয়েলসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যম। হামলার বেশ কয়েকটি ভিডিও ইতোমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিকমাধ্যমেও। 

গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন বলা হয়েছে, রবিবার সকালে ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে হঠাৎ করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সতর্কতা সাইরেন বেজে ওঠে। কিছুক্ষণের মধ্যেই জানা যায়, ইয়েমেন থেকে ছোড়া বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে একটি তেলআবিবের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরের কাছেই আঘাত হেনেছে।

ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, বিমানবন্দরের পাশে বিশাল একটি ধোঁয়ার কুণ্ডলী উপরের দিকে উঠছে—যা ক্ষেপণাস্ত্র বিস্ফোরণের স্পষ্ট প্রমাণ।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীও (আইডিএফ) নিশ্চিত করেছে, বেন গুরিওন বিমানবন্দর এলাকায় আঘাত হানা ইয়েমেনি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়েছে তারা। বিমান বাহিনীর আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার এ ব্যর্থতায় তদন্তও শুরু করেছে তারা। 

পাশাপাশি আইডিএফের এক মুখপাত্র জানায়, বিস্ফোরণের প্রভাবের বিষয়ে রিপোর্ট পাওয়া গেছে এবং দুই সেনা সদস্য নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। তদন্ত চলছে। বর্তমানে নিরাপত্তা বাহিনী ও অনুসন্ধান দল ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করছে।

এদিকে, হামলার পর তাৎক্ষণিকভাবে বিমানবন্দরের সকল ফ্লাইট স্থগিত করে দিয়েছে ইসরায়েলি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অনেকগুলো  ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে; কিছু ফ্লাইট বিকল্প রুটে পাঠানো হয়েছে।

অবশ্য।,  হামলার দায় এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেনি হুতিরা। তবে, আইডিএফ বলছে, একইদিন লোহিত সাগরে মার্কিন রণতরী এবং ইসরায়েলের কয়েকটি সামরিক ও বিমানঘাঁটিতেও হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইয়েমেনি সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। 

আঞ্চলিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইয়েমেন যদি সত্যিই হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইসরাইলের অভ্যন্তরে আঘাত হানে, তাহলে তা এক নতুন সামরিক বাস্তবতার সূচনা করবে। ইসরায়েলের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যেমন ‘আয়রন ডোম’, ‘ডেভিড’স স্লিং’ বা ‘অ্যারো’ প্রযুক্তি সাধারণত সাবসনিক বা সুপারসনিক গতির ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধে সক্ষম। কিন্তু হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করা এখনো অনেক দেশের জন্যই কঠিন।

আরও পড়ুন: এবার বিএসএফের হাতে পাকিস্তানি রেঞ্জার আটক, নিয়ন্ত্রণরেখায় ভয়াবহ সংঘর্ষ

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েলের বাণিজ্যিক, কূটনৈতিক ও সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। সেখানে এমন একটি হামলা ইসরায়েলের জাতীয় মর্যাদা ও নিরাপত্তার ওপর সরাসরি আঘাত। এই হামলা কেবল ইসরায়েলের ভেতরের নিরাপত্তার প্রশ্ন নয়; এটি একটি বৃহৎ আঞ্চলিক সংকটের ইঙ্গিত, যেখানে ইয়েমেন, লেবানন, ইরানসহ একাধিক পক্ষ জড়িত হতে পারে। অন্যদিকে ইয়েমেনি হামলার প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র, জর্ডান, মিসর এবং ইউরোপীয় শক্তিগুলোর মধ্যেও উদ্বেগ ক্রমাগত বাড়ছে। কারণ, এটি মধ্যপ্রাচ্যকে আরও অনিরাপদ ও অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।

গাজা উপত্যকার ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে গত ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে লোহিত সাগর, আরব সাগর, বাবেল মান্দেব প্রণালী ও এডেন উপসাগর দিয়ে চলাচলকারী ইসরায়েল ও এর মিত্র দেশগুলোর জাহাজ লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে আসছে হুতিরা। প্রায় ১৫ মাসের সংঘাতের পর চলতি বছরের জানুয়ারিতে গাজায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর হুতিরাও হামলা স্থগিত করে। তবে গত মাসে ইসরাইল নতুন করে গাজায় হামলা শুরু করলে আবারও ইসরায়েল ও সাগরে পশ্চিমা জাহাজ লক্ষ্য করে হামলা শুরু করে হুতিরা। 

হুতিদের এসব হামলার প্রতিক্রিয়ায় নিয়মিত তাদের অবস্থান লক্ষ্য করে ইয়েমেনেও হামলা চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল। হুতি বাহিনীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত ইয়েমেনে ১ হাজার ২০০টিরও বেশি বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেড় হাজারেরও বেশি মানুষ হতাহত হয়েছেন এসব হামলায়।

নিউজবাংলাদেশ.কম/এসবি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়