News Bangladesh

স্টাফ রিপোর্টার || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৭:৩৭, ৯ নভেম্বর ২০২৫
আপডেট: ১৭:৫৮, ৯ নভেম্বর ২০২৫

ঢাকায় ২৮ বছরে সবুজ ও ফাঁকা জায়গা কমেছে ২৯ কি.মি.

ঢাকায় ২৮ বছরে সবুজ ও ফাঁকা জায়গা কমেছে ২৯ কি.মি.

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকায় ২৮ বছরে ঢাকায় সবুজ ও ফাঁকা জায়গা ৫২.৪৮ বর্গ কিলোমিটার থেকে ২৯.৮৫ বর্গ কিলোমিটারে নেমে এসেছে বলে এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে। 

২০২৩ এক সমীক্ষায় এ তথ্য জানা যায়। এতে দেখা যায়, ২০২৩ সালের এক সমীক্ষায় দেখা যায়, অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণের কারণে পূর্ববর্তী ২৮ বছরে ঢাকায় সবুজ ও ফাঁকা জায়গা ৫২.৪৮ বর্গ কিলোমিটার থেকে ২৯.৮৫ বর্গ কিলোমিটারে নেমে এসেছে। এ মহানগরে ২০ শতাংশ সবুজ এলাকা প্রয়োজন; আছে মাত্র ৮ শতাংশের কিছু বেশি। ফলে ঢাকা এক প্রকার নরককুণ্ডে পরিণত হয়েছে। গ্রামাঞ্চলের চেয়ে ঢাকায় তাপমাত্রা বেশি থাকে গড়ে সাড়ে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকার উষ্ণতম স্থান এবং শহরের বাইরের প্রাকৃতিক পরিবেশসমৃদ্ধ এলাকার মধ্যে দিন ও রাতে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রার পার্থক্য দাঁড়িযেছে যথাক্রমে ৭ ও ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা যে কোনো মানদণ্ডে ভয়ংকর। 

বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা– ঢাকার চার নদীর জল আজ দূষণে কালো। বুড়িগঙ্গার পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ প্রায় শূন্যের কোঠায়। ফলে মাছ বাঁচে না; জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। নদীপারের মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে ত্বকের রোগ, ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টে। ঢাকার চারপাশের নদ–নদী তো বহু আগেই বিষে ভরেছে; এখন এর বাতাসও বিষাক্ত। বায়ুর মান সূচক অনুযায়ী ঢাকার গড় স্কোর এখন ২২১, যা অস্বাস্থ্যকর স্তরের অনেক ওপরে। গত বছরের নভেম্বর থেকে প্রায় প্রতি তিন দিনের মধ্যে এক দিন ঢাকার বায়ু মান ৩৩০-এর ওপরে ছিল।

২০২৪ সালে দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ছিল বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বাধিক দূষিত দেশ; নগর হিসেবে ঢাকা ছিল তৃতীয়। ২০২৩ সালে বাংলাদেশ ছিল প্রথম, আর ঢাকা ছিল দ্বিতীয় স্থানে। নিয়ন্ত্রণহীন যানবাহনের ধোঁয়া, নির্মাণ সাইটের ধুলাবালি, ইটভাটা ও শিল্পকারখানার কালো ধোঁয়া, খোলা জায়গায় বর্জ্য পোড়ানো ইত্যাদির জন্য প্রধানত দায়ী। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকায় প্রতিদিন প্রায় ৮০ টন ধুলাবালি বাতাসে মিশছে। এতে থাকা অতিক্ষুদ্র ধূলিকণা (পিএম ২.৫ ও পিএম ১০) শ্বাসনালির মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে ফুসফুস, হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্কে ভয়াবহ ক্ষতি করছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় এক লাখ মানুষ বায়ুদূষণজনিত রোগে মৃত্যুবরণ করছে। শহরের শিশুদের মধ্যে কম ওজন নিয়ে জন্ম, হাঁপানি ও নিউমোনিয়ার হার বেড়েছে।

সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকার বায়ুর মান যদি উন্নত হয়, তবে গড় আয়ু ছয় বছর পর্যন্ত বাড়তে পারে। চোখ বন্ধ করা যায়, কিন্তু কান নয়। ঢাকায় শব্দদূষণ এখন এক নীরব মৃত্যুঘণ্টা। পরিবেশ অধিদপ্তরের এক জরিপে দেখা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় শব্দের মাত্রা ১৩০ ডেসিবেল ছাড়িয়েছে, যা স্বাভাবিক সীমার আড়াই থেকে তিন গুণ। যানবাহনের হর্ন, নির্মাণকাজ, মাইকের অতিরিক্ত ব্যবহার সব মিলিয়ে শহরবাসী এখন স্থায়ী মানসিক চাপের মধ্যে বসবাস করছে।

আরও পড়ুন: বন্যপ্রাণী হত্যার মামলায় জামিনের সুযোগ থাকছে না: পরিবেশ উপদেষ্টা

শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৭৯ সালে জাতীয়ভাবে ‘বন সপ্তাহ’ চালু করেন। ‘এক ব্যক্তি, এক গাছ’ স্লোগান দেন এবং গণমাধ্যমে ‘সবুজ বাংলাদেশ’ প্রচারণা শুরু করেন। তাতে প্রাকৃতিক বন ধ্বংসের আয়োজন বন্ধ হয়েছে, বলা যায় না। খালেদা জিয়া সরকারের আমলে ১৯৯২ সালে গঠিত হয় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়। ১৯৯৫ সালে প্রণীত হয় বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন এবং প্রতিষ্ঠিত হয় পরিবেশ অধিদপ্তর। কিন্তু এসব মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব এখনও খুব কম টের পাওয়া যায়। ২০০২ সালে জারি হয়েছিল পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধকরণ বিধিমালা; ২০০৩ সালে ঢাকায় টু-স্ট্রোক ইঞ্জিন নিষিদ্ধ, যা ছিল বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে যুগান্তকারী পদক্ষেপ। কিন্তু প্রথমটি টেকেনি। অল্প সময়ের মধ্যেই পরিবেশ-প্রতিবেশের মারাত্মক শত্রু, বিশেষত নগরীগুলোতে জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ পলিথিন পূর্বাবস্থায় ফিরে আসে। যানবাহনের কারণে বায়ু ও শব্দদূষণ পৌছেছে রেকর্ড মাত্রায়। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নিয়ে পলিথিনকে বিদায় দেওয়া এবং যানবাহনের ধোঁয়াজনিত দূষণ বন্ধে কঠোর প্রতিশ্রুতি দিয়েচিল, যা আজও ফাঁকা বুলি রয়ে গেছে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/এসবি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়