রেকর্ড ভাঙা রেমিট্যান্স প্রবাহে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নতুন গতি
ফাইল ছবি
বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহে নজিরবিহীন উল্লম্ফন ঘটেছে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে। অর্থ পাচার ও হুন্ডি কমে আসায় প্রবাসীরা বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন, যার প্রভাব পড়েছে জাতীয় অর্থনীতিতে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই ২০২৪ থেকে ৭ মে ২০২৫ পর্যন্ত দেশে এসেছে ২৫ দশমিক ২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অর্থবছরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স প্রাপ্তির নতুন রেকর্ড।
এর আগে, ২০২০-২১ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল।
এ বছর মার্চ ও এপ্রিল মাসে মাসিক ভিত্তিতে রেমিট্যান্স প্রবাহে তৈরি হয়েছে সর্বোচ্চ ও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেকর্ড। মার্চ মাসে দেশে এসেছে ৩২৯ কোটি ৫৬ লাখ ডলার এবং এপ্রিল মাসে এসেছে ২৭৫ কোটি ১৯ লাখ ডলার। চলতি মে মাসেও এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। শুধু প্রথম সাত দিনেই এসেছে ৭৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার (৭৩৫ মিলিয়ন), যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার বেশি—অর্থাৎ ২২.৩% প্রবৃদ্ধি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, মে মাসের প্রথম সাত দিনে প্রতিদিন গড়ে দেশে আসছে ১০ কোটি ৫০ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ হাজার ২৮১ কোটি টাকা (ডলারপ্রতি ১২২ টাকা হিসাবে)। এই গতি অব্যাহত থাকলে মে মাসে রেমিট্যান্স তিন বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।
আরও পড়ুন: লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনালে ৮০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে মায়ের্স্ক
মার্চ ও এপ্রিল মাসে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে সৌদি আরব থেকে, যার পরিমাণ ৪৯ কোটি ১৪ লাখ ২০ হাজার ডলার। এরপর রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (৩৭ কোটি ২১ লাখ ৭০ হাজার), যুক্তরাষ্ট্র (৩৩ কোটি ৭ লাখ ৪০ হাজার), যুক্তরাজ্য (২৯ কোটি ৪১ লাখ), এবং মালয়েশিয়া (২১ কোটি ৯ লাখ ডলার)। এছাড়া কুয়েত, ইতালি, ওমান, সিঙ্গাপুর ও কাতার থেকেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে।
প্রবাসী আয় এসেছে আরও বহু দেশ থেকে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে: বাহরাইন (৬ কোটি ৪৫ লাখ), ফ্রান্স (৩ কোটি ১৭ লাখ), দক্ষিণ আফ্রিকা, দক্ষিণ কোরিয়া, কানাডা, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, গ্রিস, জর্ডান, মালদ্বীপ, স্পেন, মরিশাস, ব্রুনাই, জাপান, পর্তুগাল, ইরাক, লেবানন, পোল্যান্ড, সুইডেন এবং ফিনল্যান্ড। অন্যান্য দেশ মিলে প্রবাসী আয় এসেছে চার কোটি ২১ লাখ ৮০ হাজার ডলার।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে ৭ মে পর্যন্ত রেমিট্যান্স প্রবাহে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৮.২ শতাংশ। গত অর্থবছরের (২০২৩-২৪) একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৯ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলার। সে তুলনায় চলতি বছরে ৫ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার বেশি এসেছে। এই প্রবৃদ্ধি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে, যা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, আমদানি ব্যয় মেটানো এবং মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের রেমিট্যান্স পাঠানোর এই উৎসাহ এবং বৈধ পথে অর্থ প্রেরণের সংস্কৃতি অর্থনীতির জন্য আশাব্যঞ্জক। সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি সহায়তা অব্যাহত থাকলে এই ইতিবাচক ধারা আরও গতিশীল হবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








