News Bangladesh

|| নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৭:৪৭, ১০ নভেম্বর ২০২৫

ইসির সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে আদালতের নির্দেশ

ইসির সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে আদালতের নির্দেশ

ফাইল ছবি

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রকাশিত গেজেটে বাগেরহাটের আসন সংখ্যা চার থেকে তিনে কমানোর সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করে সংসদীয় আসন সংখ্যা চারটি বহাল রাখার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে গাজীপুরে একটি আসন কমানোর সিদ্ধান্ত দিয়েছেন আদালত। 

সোমবার (১০ নভেম্বর) বিকেলে বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকার ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।

রায়ে বলা হয়েছে, বাগেরহাটে ৪টি আসন বহাল থাকবে এবং গাজীপুরে একটি আসন কমানো হবে। আদালত নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত আসন পুনর্নির্ধারণ সংক্রান্ত গেজেটকে “অবৈধ” ঘোষণা করে তা বাতিল করেন।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২০২৫ সালের ৩০ জুলাই নির্বাচন কমিশন (ইসি) ৩০০ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে খসড়া প্রকাশ করে। ওই প্রস্তাবে ভোটার সংখ্যা সামঞ্জস্য আনার লক্ষ্যে গাজীপুরে একটি আসন বাড়িয়ে ছয়টি করা হয় এবং বাগেরহাটে চারটি থেকে কমিয়ে তিনটি করার প্রস্তাব দেওয়া হয়।

এর বিরোধিতা করে স্থানীয় রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনগুলো সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটি গঠন করে আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় বাগেরহাট প্রেসক্লাব, জেলা আইনজীবী সমিতি, জেলা বিএনপি, জেলা জামায়াতে ইসলামী, জেলা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও জেলা ট্রাক মালিক সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠন হাইকোর্টে দুটি রিট দায়ের করে।

রিটে বিবাদী করা হয়—বাংলাদেশ সরকার, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশন সচিব এবং অ্যাটর্নি জেনারেলকে।

গত ১৬ সেপ্টেম্বর বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল জারি করেন। 

আরও পড়ুন: হাসিনাসহ ১২ জনের দুর্নীতি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ

রুলে জানতে চাওয়া হয় বাগেরহাটের চারটি সংসদীয় আসন বহাল রাখতে কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না এবং নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত গেজেটে আসন সংখ্যা চার থেকে তিনে কমানোর সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না।

একইসঙ্গে কমিশন ও সংশ্লিষ্ট পক্ষকে ১০ দিনের মধ্যে রুলের জবাব দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে সোমবার হাইকোর্ট রায় ঘোষণা করেন।

রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার শেখ মুহাম্মদ জাকির হোসেন। তাকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট বিপ্লব কুমার পোদ্দার, অ্যাডভোকেট ফয়সাল মোস্তফা, অ্যাডভোকেট রাজিয়া সুলতানা, ব্যারিস্টার কাজী সামান্তা এনাম, অ্যাডভোকেট আমিনুজ্জামান সোহাগ, অ্যাডভোকেট এনামুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান ও অ্যাডভোকেট তানভীর আহমেদ।

রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. ইকরামুল কবির।

নির্বাচন কমিশনের গেজেট প্রকাশের পর থেকেই বাগেরহাটের রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলো মাঠে নামে। 

তারা দাবি করে, আসন পুনর্বিন্যাসে জনগণের মতামত উপেক্ষা করা হয়েছে।

বাগেরহাট সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটি পরবর্তীতে হরতাল, অবরোধ, অবস্থান ও বিক্ষোভসহ ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করে।

চূড়ান্ত গেজেট অনুযায়ী,

  • বাগেরহাট-১: সদর-চিতলমারী-মোল্লাহাট
  • বাগেরহাট-২: ফকিরহাট-রামপাল-মোংলা
  • বাগেরহাট-৩: কচুয়া-মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা

এই পুনর্বিন্যাসে দীর্ঘদিনের বাগেরহাট-৪ আসনটি বাদ দেওয়া হয়, যা ১৯৬৯ সাল থেকে নির্বাচনী ইতিহাসের অংশ ছিল।

হাইকোর্টের এই রায়ে নির্বাচন কমিশনের গেজেট অবৈধ ঘোষণা হওয়ায় বাগেরহাট জেলায় পুনরায় চারটি সংসদীয় আসনই বহাল থাকবে।

গাজীপুরে আসন সংখ্যা পাঁচটিতে সমন্বয় করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

রায় ঘোষণার পর ব্যারিস্টার শেখ মুহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে জনগণের মতামত ও সংবিধানসম্মত প্রতিনিধিত্ব পুনরুদ্ধার হয়েছে। আদালত প্রমাণ করেছেন যে, নির্বাচনী সীমানা নির্ধারণে কোনো প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত জনগণের ইচ্ছাকে উপেক্ষা করতে পারে না।

হাইকোর্টের এই রায় অনুযায়ী, এখন নির্বাচন কমিশনকে নতুন করে সংশোধিত গেজেট প্রকাশ করতে হবে, যা পরবর্তী নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ভিত্তি হবে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়