বাংলাদেশি নারী বিয়েতে চীনের সতর্কবার্তা

ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে অবস্থানরত চীনা নাগরিকদের উদ্দেশে আন্তঃসীমান্ত বিয়েকে ঘিরে মানবপাচার ও প্রতারণার ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্কতা জারি করেছে ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাস।
রবিবার (২৫ মে) রাতে প্রকাশিত এ সতর্কবার্তায় বিবাহের নামে সংঘটিত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ও এর আইনি জটিলতা সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।
চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমস-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাস সরাসরি অনুরোধ করেছে যেন চীনা নাগরিকরা বিদেশি—বিশেষ করে বাংলাদেশি—নারীদের বিয়ের আগে নিজ দেশের আইন কঠোরভাবে মেনে চলেন এবং সাবধানতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
দূতাবাস সতর্ক করে জানিয়েছে, কিছু অসাধু এজেন্সি অর্থের বিনিময়ে বিদেশি স্ত্রী খুঁজে দেওয়ার কথা বলে চীনা নাগরিকদের প্রতারণা করছে। এসব কার্যক্রমের আড়ালে রয়েছে সংঘবদ্ধ মানবপাচার চক্র। অনেক সময় শর্ট ভিডিও প্ল্যাটফর্মে ‘আন্তঃসীমান্ত প্রেম’ বা ‘ডেটিং’ সম্পর্কিত ভিডিও দেখিয়ে বিভ্রান্ত করা হয়, যা আদতে একটি প্রতারণামূলক প্রক্রিয়ার অংশ।
চীন সরকার স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, আন্তঃসীমান্ত বিবাহের জন্য কোনো প্রকার বাণিজ্যিক ম্যাচমেকিং এজেন্সিকে তারা অনুমোদন দেয় না। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এমন সেবা চালালে তা আইনবিরুদ্ধ বলে গণ্য হবে।
দূতাবাসের বার্তায় বাংলাদেশের মানবপাচারবিরোধী আইনের কঠোরতা তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কোনো বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশে অবৈধভাবে বিয়েতে জড়িত থাকলে মানবপাচারের সন্দেহে তাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে।
আরও পড়ুন: প্রধান উপদেষ্টার কাছে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন
বাংলাদেশি আইন অনুযায়ী, মানবপাচারে জড়িতদের জন্য ন্যূনতম সাত বছর থেকে শুরু করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড কিংবা মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত শাস্তির বিধান রয়েছে। এ ছাড়া, মানবপাচারে সহায়তাকারীদের ক্ষেত্রেও তিন থেকে সাত বছরের কারাদণ্ড এবং আর্থিক জরিমানার বিধান প্রযোজ্য।
সতর্কবার্তায় আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বিচারিক প্রক্রিয়া দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে। মানবপাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার হলে মামলা নিষ্পত্তি ও চূড়ান্ত রায় পেতে কয়েক মাস থেকে কয়েক বছর পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। এতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ব্যক্তিগত জীবন, পরিবারিক সম্পর্ক এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় চরম নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
চীনা দূতাবাস চীনা নাগরিকদের উদ্দেশে জোর দিয়ে বলেছে, ‘বিদেশি স্ত্রী কেনা’র মতো ধারণা পরিত্যাগ করতে হবে। কোনো অনলাইন রোমান্স স্ক্যামে জড়িত হলে বা সন্দেহ হলে দ্রুত চীনের জননিরাপত্তা কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যাতে ব্যক্তি অর্থনৈতিক ও মানসিক ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে পারেন।
এই সতর্কবার্তা শুধু একটি আইনি সতর্কতা নয়; বরং এটি আন্তঃসীমান্ত মানবিক সম্পর্কের পেছনের জটিল বাস্তবতা ও অপরাধ সম্ভাবনার ইঙ্গিত বহন করে। বাংলাদেশি নারীদের বিয়ের মাধ্যমে অবৈধ কার্যক্রমে না জড়িয়ে, সচেতন ও আইনসম্মত পথে চলার পরামর্শই মূলত বার্তাটির কেন্দ্রবিন্দু।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি