News Bangladesh

|| নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৭:৩৭, ৩১ আগস্ট ২০১৫
আপডেট: ০৮:৫৫, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০

তোমরা যারা জাফর ইকবাল কর

তোমরা যারা জাফর ইকবাল কর

জি স্যার। আমরা সৈয়দ আশরাফের নষ্ট প্রজন্ম, হেলোওইন পালন করে বড় হওয়া প্রজন্ম না- মাসুদ রানা, মিসির আলি পড়ে বড় হওয়া প্রজন্ম । আমরা মুক্তিযুদ্ধ দেখি নাই, মুক্তিযুদ্ধ আমাদের কাছে অদ্ভুত একটা ফ্যাসিনেশান যখন সময়ের কিছু সূর্য সৈনিক, নিজেদের জীবনকে তুচ্ছ করে আমাদের জন্যে বাংলাদেশ নামের এই দেশটাকে জন্ম দিয়েছে। আমরা তাদেরকে নত হয়ে সালাম জানাই।

কিন্তু, যেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আপনারা আমাদের গলার মধ্যে “বাবু খাও” বলে গেলান সেই চেতনাকে আমরা এখন প্রশ্ন করি । কারণ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নামের এই কুল এইডটাকে এমনভাবে পলিটিসাইয করা হইছে যে এইটা আমরা আর এবসোলিউট হিসেবে মেনে নিতে রাজি না।

চোখের সামনে এই আমাদের খুব কোমল এই ভ্যালুটাকে রেপ হতে দেখতে দেখতে, সেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হতে প্রতি দিন লক্ষ লক্ষ অন্যায়ের জন্ম হতে দেখার পরেও কেন আপনি মনে করতেছেন যে দেশপ্রেমে বুঁদ হয়ে অন্ধ আর বধিরের মত আপনারা যা বলবেন তাই বিশ্বাস করবো?

কেন আমরা নিজের চোখ আর কানকে অস্বীকার করবো শুধুমাত্র আপনার মত বিবেকদের মুখের কথায়?

আপনারা যখন পেপারে লেখালেখি করেন, ধর্মীয় কুপমণ্ডুকতা নিয়ে, আমাদের অনেকের তখন মনে হয় আপনাদের সুশীলিয়, সেকুলার কূপমণ্ডুকতা নিয়ে লেখাটাও প্রয়োজন।

এই লেখাটা অনেক ভয়ে লিখছি। এর পর কি ব্যক্তি আক্রমণ শুরু হয়ে যায় সেই ভয়ে। মুক্ত চিন্তার পথে ভয় দেখিয়ে বাধা সৃষ্টি করে আরেকটা দল- ধর্মীয় মৌলবাদীরা। ওদের সাথে আপনাদের পার্থক্য এখন মাত্র আরাই ইঞ্চি। সেইটাও দিনে দিনে ঘুচে যাচ্ছে।

স্যার, আপনার লেখাটায় আজকে দেশকে ভালোবাসার সাথে আপনি এক করছেন, শহিদ মিনারে যাওয়া, স্মৃতিসৌধে মালা দেয়া, রবীন্দ্র সংগিত গাওয়া আর পয়লা বৈশাখে পান্তা ভাত খাওয়ার সাথে।

দ্বিমত পোষণ করার জন্যে দুঃখিত স্যার।

এত সহজে যদি মানুষ দেশপ্রেমিক হয়ে যায় তাহলে দেশের জন্যে ব্যক্তিগত স্যাক্রিফাইস করবে কে?

আজকে স্যার, আমাদের ডিকশনারি থেকে দেশপ্রেম শব্দটা বরং তুলে দেওয়াই বাঞ্ছনীয়। ওইটা একটা ভুয়া শব্দ। ওই দেশপ্রেমের নামে সব অন্যায়, লুটপাট আর অবিচার করা হচ্ছে।

দেশকে কে কত বেশি ভালবাসে আর কে দালাল তা এখন আর কার দেশপ্রেম কত বেশি সেই উত্তরে নির্ধারিত হবেনা। তা নির্ধারিত হবে সময়ের প্রয়োজনে দেশের প্রতি যার যে কর্তব্য তা কে করছে না করছে সেই উত্তর দিয়ে।

জাহির রায়হান তার "সময়ের প্রয়োজনে" বলেছিলেন ঠিক এই কথা। তারা অস্ত্র ধরেছিলেন সময়ের প্রয়োজনে।

আজ আমাদের সময়ের প্রয়োজন হচ্ছে, নিজেকে শিক্ষিত করে তোলা, ট্যাক্স দেয়ার সময় সরকার আমার জন্যে কি করছে না জিজ্ঞাস করা, রাস্তায় সিরিয়াল না ভেঙ্গে রঙ সাইড দিয়ে সবাই কে ফেলে সামনে চলে না যাওয়া, ফিক্সড প্রাইস গ্যাস চুলার আগুন দিয়ে আন্ডারওয়ার না শুকানো, সবাই ঘুষ খাচ্ছে দেখেও নিজেকে দুর্নীতি মুক্ত রাখা, দুর্নীতি না করা, পরিশ্রম করে মেধা দিয়ে বিশ্ব বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মত যোগ্য মানুষ হয়ে দেশের জন্যে কিছু করা, ভারতীয় সাংস্কৃতিক আধিপত্যবাদ থেকে নিজেকে আর নিজের পরিবারকে রক্ষা করা, তেল গ্যাস রক্ষা কমিটির মিটিংয়ে গিয়ে সরকারকে দেশের সম্পদ বিদেশিদের হাতে তুলে দিতে বাধা দেয়া। আজকের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক চেতনা এইগুলো।

এই কাজগুলো যে করে, তার ধর্মীয় বিশ্বাস যদি মৌলবাদও হয় তো সেই যুবক, যে দেশপ্রেমিক ১৬ ডিসেম্বরে দলবল নিয়ে সৃতিসৌধে ফুল দেয় আর হরতালে বিশ্বজিতদের মত নিরপরাধ নাগরিকদের টেক্সাস চেইনস মাসাকারের মত ছুরি দিয়ে কেটে কেটে ফালা ফালা করে তার চেয়ে বড় দেশপ্রেমিক।

আজ আপনি দেশপ্রেমের যে সহজ তরিকা দেখিয়ে দিচ্ছেন, তত সহজেই যদি দেশপ্রেমিক হওয়া যায় তো আর কয় দিন পর আর দেশের জন্যে পারসনাল সাকরিফাইস করার লোক পাওয়া যাবে না, সবাই দেশের পেছন দিক থেকে মেরে দিয়ে, স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে, দুই পাতা রবিন্দ্র সংগিত পড়ে দেশপ্রেমিক হয়ে যাবে।

এমন লক্ষ লক্ষ সার্টিফিকেটধারী দেশপ্রেমিকের ছবি আপনি পেপার খুললেই পাবেন, টিভি খুললেই পাবেন।

এই দেশপ্রেমিকেরা এবং কনফ্রন্টেশনাল রাজনীতি দেশকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তার একটা ছোট্ট উদাহরণ দেই। ভিয়েতনাম ১৯৯৬ সালে তার গৃহযুদ্ধ থেকে বের হয়ে আসে। এই সময়ে তারা আমাদের থেকে অনুন্নত একটা দেশ ছিল। এই ১৮ বছরে তারা তাদের ইলেক্ট্রিসিটি ক্যাপাসিটি ২০০০ মেগাওয়াট থেকে আজ নিয়ে গেছে ২৫০০০ মেগাওয়াটে।

বোঝেন তারা কি পরিমাণ এগিয়েছে। আর আমরা একই সময়ে ২০০০ থেকে পৌঁছেছি ৬০০০ মেগাওয়াটে। দেখেন এই বিভাজনের রাজনীতি আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। কেন আপনারা আজ আরো বেশি বিভাজন আর বিভক্তি সাজেস্ট করছেন? আমাদের সবার তো আমেরিকার ভিসা নাই স্যার।

সব শেষে আমার বেয়াদবির জন্য আবার ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আপনাকে অনেক শ্রদ্ধা করি। আপনি জাতির বিবেক। আমাদের অনেকের কাছে নিয়ার পারফেক্ট একটা মানুষ। কিন্তু আপনার চেয়ে বেশি শ্রদ্ধা করি, আপনার বড় ভাই কে, যিনি ভুলে ভরা একটা মানুষ কিন্তু সারা জীবনে হিপক্রেসি করেন নাই।

ভুল-ত্রুটি, বেয়াদবি আপন মহানুভবতায় মাফ করে দিবেন। এই আশায়।

নিউজবাংলাদেশ.কম/এফই

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়