News Bangladesh

|| নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১১:১১, ৯ আগস্ট ২০১৫
আপডেট: ১৯:৪১, ৮ আগস্ট ২০২০

ক্ষমা করবেন, নিলয় নীল, আপনার দেশকে

ক্ষমা করবেন, নিলয় নীল, আপনার দেশকে

জাতীয়তা, ধর্ম, পুজি- এই তিনটি মাধ্যমকে কেন্দ্র করে, এই পৃথিবীতে অনেক যুদ্ধ বিগ্রহ, বিরোধ, অশান্তি, হত্য নির্যাতন হয়েছে।কিন্তু, আপনি পৃথিবীর অতীত এবং বর্তমানের ইতিহাসকে যদি ঘনিষ্ঠ ভাবে দেখেন তবে দেখবেন, এই তিনটি মাধ্যম মূলত ব্যবহৃত হয়েছে, ক্ষমতার লড়াইয়ের হিসেবে নিকেশে।

ইরাক থেকে সিরিয়া, সিসি, থেকে আইসিস, নাইজেরিয়া থেকে বাংলাদেশে- কোথাও ধর্ম, কোথাও জাতীয়তা, কোথাও, পুজি - সকল দ্বন্দ্বের মূল- ক্ষমতার সুরক্ষা এবং অধিগ্রহণ। তাই আজকের বাংলাদেশের ধর্ম নিয়ে বিরোধকেও, ক্ষমতার লড়াইয়ের হিসেবের বাহিরে দেখলে, নাবালকতা করবেন।
এবং বাংলাদেশের বর্তমান পলিটিক্স অনেক ডীপ পলিটিক্স। এইটা ৯০ সালের পরের বিশ বছরের জনগনের, এক দিনের বাদশাহির পলিটিক্স না, যেই খানে, ইম্পারকফেশান থাকলেও, জনগনের ইচ্ছায় ক্ষমতা পরিবর্তিত হয়েছে।

বাংলাদেশের এই ডীপ পলিটিক্সে, ১৬ কোটি মানুষের সংখ্যা গরিষ্ঠ অংশের ইচ্ছার বিরুদ্ধে একটা সরকার ক্ষমতায় বসে আছে, যাকে ক্ষমতায় টিকে থাকতে অনেক গুটি চালতে হয়। এই গুটি চালানো থেকেই, শাহবাগ হয়, রাজীব হত্যা হয়, মউলানা সাইদিকে চাদে দেখা যায়, হেফাজত মতিঝিলে নামে, যেখানে গভীর রাতে হামলা হয় আবার হাটহাজারিতে রেলওয়ের জমি ইজারা দেয়া হয়, হেফাজতের মালিকদের মাদ্রাসার নামে।

আজকে তাই, প্রতি মাসে, একজন করে ব্লগার হত্যা কে করছে, কে করতে পারে -সেইটা যে যে যার যার নিজের পক্ষ মত নির্ধারণ করে নিতে পারেন। কিন্তু, ঘুরে ফিরে সত্য যেইটা ধ্রুব, সেইটা হইলো, এই খুন, হত্যা, হত্যাকারীরা ক্ষমতার পলিটিক্সের একটা ঘুঁটি মাত্র। সেই ঘুঁটি চাল সরকারও দিতে পারে, আবার মৌলবাদী জঙ্গিরাও দিতে পারে। কিন্তু, কে কোন চাল দিচ্ছে সেইটা জানার ক্ষমতা আমাদের নাই। এই অজানা গুলোর সময়ে, শুধু মাত্র, ইসলাম, মৌলবাদ এই প্রশ্ন দিয়ে- এই ঘটনা গুলোকে বিচার করলে, ভুল হবে। যে করবে, সে হয় অসৎ নয় নির্বোধ।

অবশ্য কে খুন করেছে কে করেনি, সেইটা বের করা পাব্লিকের দায়িত্ব না। দায়িত্ব, আইন শৃঙ্খলা রক্ষা কারী বাহিনীর। কিন্তু, যেই দেশে মন্ত্রীরা ডিও পাঠিয়ে বলে, এই কেন্ডিডেট আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান, একে নিয়োগ দাও। যেই দেশে, পুলিশ, প্রশাসন এবং সরকার হাতে হাত মিলিয়ে লুণ্ঠনে মত্ত, সেই দেশে, অপরাধের শাস্তি হবেনা এবং নতুন নতুন খুন হতে থাকবে, এক দল আরেক দলকে দোষারোপ করবে, তাই নিত্যতা।

তাই যথেষ্ট ইনফরমেশান যেহেতু আমাদের নাই, তাই একটা নিরাবেগ প্লাটফর্ম থেকে দাড়িয়ে, আপনি একটা ক্রাইটেরিয়া ব্যবহার করতে পারেন, অপরাধী কে এই সিদ্ধান্তে আসতে।
সেই ক্রাইটেরিয়া হইলো এই ঘটনা গুলোর বেনেফিশিয়ারি কে সেইটা খুঁজে বের করা?

এই ডীপ পলিটিক্সের সময়ে, ক্ষমতার সুরক্ষা আর অধিগ্রহণের নব্য কাঠামোতে যাচাই করলে দেখবেন, বিগত প্রতিটা ব্লগার হত্যার প্রধান বেনেফিশিয়ারি রয়ে যাচ্ছে, ১৫২ টি সিট বিনা ভোটে নির্বাচিত একটি অনৈতিক সরকার, যে , আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের এক্সটেনশান হিসেবে দেশকে মৌলবাদে আক্রান্ত দেশ হিসেবে দেখিয়ে এই হত্যা গুলোর মাধ্যমে নিজের একটা গ্রহনযোগ্যতা সৃষ্টি করতে পারছে ।

কারন, এই সরকার রঙ পাল্টানো গিরগিটির মত একই দিকে মদিনা সনদের সরকার আবার আরেক দিকে, ধর্ম নিরপেক্ষ সরকার। এই সরকার, এক দিকে, অভিজিতের পিতাকে সহানুভূতি জানায়, আরেক দিকে, বলে, অভিজিতের খুনিদের ধরা সম্ভব না। কিন্ত, শেষ পর্যন্ত তারা নিজেদেরকে ধর্ম নিরপেক্ষ হিসেবেই দাবী করে, যা দেশে বিদেশে অনেক পক্ষকে সন্তুষ্ট করে।

অনেকে বলেন, সরকার বেনেফিশিয়ারি নয় কারন, তাতে সরকারের ভাবমূর্তি খুন্ন হয়। খেয়াল রাখবেন, এই সরকার ভাবমূর্তির থোড়াই কেয়ার করে। তাদের এক মাত্র চেতনা হচ্ছে সারভাইভাল।

আজ যদি পুলিশ, বা আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত বিরতিতে হয়ে যাওয়া এই খুন গুলোর অপরাধীদের এবং মূলহোতাদের ধরতে পারতো তবে আমরা সুনির্দিষ্ট ভাবে , ধর্মীয় জঙ্গি বা তাদের কোন একটা দলকে পরিষ্কার ভাবে দায়ী করতে পারতাম। এবং তাদের শাস্তি চাইতাম। কিন্তু সেই সুযোগ তো এখন আর থাকছেনা। কারন, এতো গুলো ঘটনা ঘটলো , এবং এমন কি একটা খুঁনের ঘটনায়, হাতে নাতে কিছু অপরাধীদেরকে ধরা হলো। কিন্তু তবুও নাটের গুরুরা এখনো ধরা ছোঁয়ার বাহিরে থাকছে আর নিয়িমত বিরতিতে খুন হয়ে যাচ্ছে।

নাস্তিকদের হত্যার হুমকি আজকে অত্যন্ত নিয়মিত বিরতিতে ঘটছে এবং এই ঘটনা গুলো পুরো বিশ্বে নিউজ হয় এবং আলোড়ন সৃষ্টি করে। ইতোপূর্ফবে অভিজিৎ রায়ের ঘটনায় এফবিআই পর্লেযন্ত বাংলাদেশে ঘুরে গ্যাছে। ফলে, এই অপরাধীদের ধরার বিষয়ে প্রতি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বোচ্চ সচেতনতা থাকার কথা।

আইন শৃঙ্খলা বাহিনী চাইলে বাংলাদেশের যে কোন অপরাধিকে খুঁজে বের করা সম্ভব, বলে আমরা জানি। কিন্তু যেহেতু এখনো নাটের গুরুরা আড়ালে এবং আসল অপরাধীকে ধরা যাচ্ছেনা তখন অন্তত, স্পেকুলেট করার ক্ষেত্রে আমরা শুধু মাত্র মৌলবাদ এবং জঙ্গি তত্ত্ব বারে বারে ব্যবহার করে যেতে পারছিনা। আমাদেরকে সন্দেহের ক্ষেত্র আরও বাড়াতে হচ্ছে।

কিন্তু, নাস্তিকদের হত্যার হুমকি আজকে অত্যন্ত নিয়মিত বিরতিতে ঘটছে এবং এই ঘটনা গুলো পুরো বিশ্বে নিউজ হয় এবং আলোড়ন সৃষ্টি করে। ইতোপূর্ফবে অভিজিৎ রায়ের ঘটনায় এফবিআই পর্লেযন্ত বাংলাদেশে ঘুরে গ্যাছে। ফলে, এই অপরাধীদের ধরার বিষয়ে প্রতি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বোচ্চ সচেতনতা থাকার কথা।

প্রথম বার জঙ্গিদের সন্দেহ করলাম, ঠিক আছে। দ্বিতীয়বার দায়ী করলাম ঠিক আছে। কিন্তু বার বার যখন একই ঘটনা ঘটছে এবং মূল অপরাধী আড়ালে রয়ে যাচ্ছে, এখন আরও পর্যালোচনা করাটা জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে । এবং, এই প্রশাসনের নাকের ডগায় এই নিয়মিত হত্যা গুলোকে, শুধুমাত্র মৌলবাদ আর জঙ্গি মিলিয়ে আর পার করা যাচ্ছেনা।
তার মানে নয়, আমরা ধর্মীয় জঙ্গিদের সন্দেহ করবো না । করতেই হবে। কারন, বাংলাদেশের ধর্মীয় জঙ্গিদের চাপাতির চর্চার দীর্ঘ ইতিহাস আছে। এবং আমাদের মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর মধ্যে নাস্তিকদের বা ইসলাম ধর্ম বিরোধীদের ডিহিউমানাইজ করে তাদের খুন করার যে গ্রহনযোগ্যতা সৃষ্টি হয়েছে, সেইটাকেও আমাদের দায়ী করতে হবে।
কিন্তু, তারপরেও একটা পরে একটা হত্যার ঘটনাকে, শুধুমাত্র জঙ্গি দেখিয়ে পাড় করা যাবেনা। আমি নিজেও, অনন্ত বিজয় দাশ, অভিজিৎ রায় এবং বাকি খুন গুলোর পরে, মৌলবাদী জঙ্গিদেরকে এবং খুনের প্রতি নীরব সমর্থনদান কারীদেরকে অভিযুক্ত করেছি। কিন্তু, একটার পর একটা ঘটনা ঘটে যাওয়াতে, সেই সন্দেহের তালিকায় এখন ডীপ পলিটিক্সকেও ঢোকাতে হচ্ছে।

তাই আজকে আমাদেরকে বেনেফিশিয়ারি কে সেইটা যাচাই করে, সেই বেনেফিশিয়ারির শাস্তি চাইতে হবে, অথবা তার বেনেফিটটাকে অপরাধের মূল কারন হিসেবে দেখতে হবে।
বেনেফিশিয়ারিকে বেনেফিট অফ ডাউট আর দেয়া যাবেনা।
ইন্টেরেস্টিংলি খেয়াল করবেন, দায় স্বীকার করে, যে মেইলটি আজ প্রচার হচ্ছে, সেইটার দায় স্বীকারকারীরা এই প্রথম বারের মত নিজেদেরকে ভারতীয় উপমহাদেশের জঙ্গি হিসেবে পরিচয় দিয়েছে। বাংলাদেশ পলিটিক্সে ধর্মীয় জঙ্গিদের এই লেটেস্ট ভারতীয় পরিচয় দাবী করার ঘটনা বর্তমান উপমহাদেশের রাজনীতিতেও নতুন মাত্রা যোগ করবে, যা ডীপ পলিটিক্সের খেলোয়াড়দের জন্যে, নতুন সহযোগিতার দরোজা উন্মোচন করবে । সেই বেনেফিশিয়ারি থিওরি এপ্লাই করে দেখবেন, চরিত্র গুলো সঠিক সময়ে সঠিক কাজটাই করছে, যার বেনেফিসিয়ারি হচ্ছে, ক্ষমতাধারিরা।
আরও দেখবেন, এখন যে ব্লগাররা খুন হচ্ছেন, তারা খুব একটা এক্সট্রিম এথিস্ট না এবং হিন্দু ধরমালম্বী ব্লগার যাদের লেখা যথেষ্ট মডারেট। অভিজিৎ রায়, অনন্ত বিজয় দাশ্ নীলয় নীল। কেন? নিশ্চয়ই এই পরিচয়ের কোন মোজেজা আছে। যা বোঝার ক্ষমতা বা যথেষ্ট তথ্য আমাদের নাই। কিন্তু, সেই অপরাধীদেরকে ধরার দায়িত্ব, ব্লগারদের রক্ষা করার দায়িত্ব এই অনৈতিক সরকারের , পুলিশ এবং বিচার বিভাগেরই। তাই প্রতিষ্ঠান গুলো যখন ব্যর্থ , এবং আমাদের হাতে যখন যথেষ্ট ইনফরমেশান নাই তখন, খুজতে হবে, বেনেফিশিয়ারি কে ?

এই বেনেফিশিয়ারি ক্রাইটেরিয়া দিয়েই এখন যাচাই করতে হবে, এই ডিপ পলিটিক্সের সময়ে, এই ক্ষমতা রক্ষা আর দখলের কাঠামোতে কে কাকে ছুরি ঢোকাচ্ছে।

ক্ষমা করবেন, নিলয় নীল, আপনার দেশকে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/এসজে

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়