নির্বাচন থেকে কাউকে বাদ দেওয়ার পক্ষপাতী নয় বিএনপি

ফাইল ছবি
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্প্রতি ভারতের কলকাতার বাংলা দৈনিক ‘এই সময়’-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দলীয় অবস্থান, নির্বাচনের প্রত্যাশা এবং ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন।
সাক্ষাৎকারে তিনি স্পষ্ট করেন, বিএনপি একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পালাবদল চায় এবং অতীতের মতো কোনো দলকে নির্বাচনের বাইরে রাখার পক্ষে নয়।
তিনি প্রত্যাশা করেন, আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করবে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাক্ষাৎকারে বলেন, আগামী নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ করবে, এমন একটি সুষ্ঠু ও অবাধ ভোটের আয়োজন হওয়া উচিত।
তিনি উল্লেখ করেন, বিএনপি চায় আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, এবং অন্যান্য দলের পাশাপাশি জামায়াতও এই নির্বাচনে অংশ নিক। তবে জামায়াতের সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়ে টানাপোড়েন চলছে। জামায়াত ৩০টি আসন চেয়েছিল, যা বিএনপি গ্রহণযোগ্য মনে করেনি এবং এতে কোনো উৎসাহও দেখায়নি।
ফখরুল বলেন, জামায়াতকে তারা অতিরিক্ত গুরুত্ব দেননি, কারণ তাদের রাজনৈতিক শক্তি অনেক কম। তা সত্ত্বেও, জামায়াত নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং বিভিন্ন জায়গায় প্রার্থীর নামও ঘোষণা করছে।
তিনি আরও জানান, জামায়াতের পক্ষ থেকে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (PR) এবং সংখ্যানুপাতিক (TR) পদ্ধতির দাবি জানানো হয়েছে। ফখরুল এটিকে বিএনপির ওপর চাপ সৃষ্টির কৌশল হিসেবে দেখেন।
তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, আমরা প্রচলিত ভোট পদ্ধতিতেই নির্বাচন করতে চাই, যেখানে মানুষ ভোট দিতে পারে।
বিএনপির মহাসচিব জানান, তারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী যে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই বিষয়ে তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে তার বৈঠকের কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ড. ইউনূস এখন সর্বোচ্চ সিরিয়াস এবং আন্তরিকভাবে চান ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হোক।
ফখরুল আরও বলেন, ৫ আগস্ট ড. ইউনূস নির্বাচনের দিন ঘোষণা করার আগের রাতে তার বাসভবনে ড. ইউনূস ও সেনাপ্রধানের সঙ্গে তার দীর্ঘ আলোচনা হয়।
সেনাপ্রধান জানান, পুলিশ কম থাকায় এক বছর ধরে সেনাদের রাস্তায় ডিউটি করতে হচ্ছে, যা কাম্য নয়। তিনি প্রথমে ডিসেম্বরে ভোটের কথা বললেও ফেব্রুয়ারিতে কোনো আপত্তি নেই এবং সবরকম সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন।
তিনি চান, নির্বাচন করিয়ে বাহিনী তাদের ব্যারাকে ফিরে যাক।
ড. ইউনূসও জানান, তিনি ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়ে অব্যাহতি চান, কারণ তিনি আর চাপ নিতে পারছেন না। ফখরুল আশ্বস্ত করেন, সরকার গঠনের পরেও সংস্কার প্রক্রিয়া চলবে এবং স্বৈরাচারীদের বিচার প্রক্রিয়াও চলবে, তবে এটি অন্তর্বর্তী সরকারের ম্যান্ডেটের বাইরে।
ইউনূস সম্প্রতি বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি নেতৃত্বকে তার বাসভবনে ডেকে পাঠিয়ে একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: বিএনপি মাথা নত করেনি, ভয় পাওয়ার কিছু নেই: মির্জা ফখরুল
ফখরুল বলেন, ইউনূস সেদিন আমাদের জানিয়ে দেন, ফেব্রুয়ারিতে ভোটের বাস ধরতে না পারলে তিনি মার্চ থেকে আর থাকবেন না। এটি ছিল এক ধরনের ‘ফাইনাল বেল’, যা দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানের গুরুত্বের ওপর জোর দেয়।
সাক্ষাৎকারে মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের তিন দিকে ভারত এবং একদিকে সাগর থাকায় বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের প্রভাব থাকবেই।
তবে তিনি অভিযোগ করেন যে, ভারতের শাসকেরা বাংলাদেশকে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ হিসেবে দেখার ভুল করেছে।
তিনি স্পষ্ট করেন, বিএনপি ও জামায়াতের রাজনীতি ভিন্ন। বিএনপি একটি অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক দল, যা মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত সংবিধান রক্ষায় আজও স্বাধীনতা-বিরোধীদের সঙ্গে লড়াই করছে।
জামায়াতকে দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বিএনপির নির্বাচনি শরিক হিসেবে উল্লেখ করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি একটি ভুল ধারণা। আওয়ামী লীগ ভারতকে ভুলভাবে এই অপপ্রচার বিশ্বাস করিয়েছে। জামায়াত শুধু একটি নির্বাচনি শরিক, যারা ধর্মীয় রাজনীতি করে, যা বিএনপির রাজনীতির থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।
তিনি আরও বলেন, আসলে আওয়ামীর চশমা দিয়ে ভারত বাংলাদেশকে দেখেই ভুলটা করেছে।
ফখরুল আশ্বস্ত করেন যে, বিএনপি ক্ষমতায় এলে জামায়াতকে আর কোনো সুবিধা নিতে দেবে না এবং তারা চায় ভারত সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখুক।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, ভুল বোঝাবুঝির অবসান হবে এবং দুই দেশের জনগণের মধ্যে অবাধ যোগাযোগ বাড়বে।
জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (এনসিপি) প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে দলের সঙ্গে তাদের কোনো আলোচনা হয়নি।
তিনি বলেন, এনসিপিকে আমরা কোনো শক্তি বলেই আর মনে করি না।
তিনি দাবি করেন, এনসিপির একমাত্র লক্ষ্য হলো বিএনপিকে সরকার গঠনে সহায়তা না করা।
ফখরুল বলেন, এনসিপি কখনো তাদের কাছে আসন চায়নি, যদিও জামায়াত চেয়েছিল।
তিনি জানান, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভের স্ফুলিঙ্গ এই ছাত্ররাই জ্বালিয়েছিল, কিন্তু এখন তাদের কোনো শক্তি নেই এবং ডাকলে লোকও আসে না।
মির্জা ফখরুল বিশ্বাস করেন, মানুষ তাদের ভোটাধিকার ফিরে পেতে চায় এবং তারা উৎসবের মতো ভোট অনুষ্ঠানের প্রত্যাশা করছে।
তিনি বলেন, জনগণ এত রক্তপাত ও প্রাণহানি দেখেছে যে তাদের মধ্যে এখন তীব্র আওয়ামী-বিরোধিতা তৈরি হয়েছে।
তিনি আরও যোগ করেন, আওয়ামী লীগ ১৫ বছর ধরে প্রতিপক্ষকে ভোটে দাঁড়াতে দেয়নি, যার শাস্তি তারা পেয়েছে। একই ভুল বিএনপি করবে না।
তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পালাবদল হওয়া উচিত এবং বিএনপি কাউকে নির্বাচনের বাইরে রাখার পক্ষে নয়।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি