পশুত্ব বর্জন করে মনুষ্যত্ব অর্জনের আহ্বান তারেক রহমানের

ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, অসহিষ্ণুতা কাটিয়ে আমরা যদি সত্যিকারের মানুষ হতে চাই, তবে আমাদের সবার অঙ্গীকার হোক—মনুষ্যত্ব অর্জন এবং পশুত্ব বর্জন।
শনিবার রাজধানীর চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত ‘প্রাণী ও প্রাণের মিলন মেলা’-তে ভার্চুয়াল সংযোগে দেওয়া বক্তৃতায় তিনি এ আহ্বান জানান।
তারেক রহমান বলেন, দীর্ঘ দেড় দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের জনগণ নাগরিক হিসেবে মৌলিক গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। এই অধিকারহীনতা মানুষের মধ্যে এক ধরনের অসহিষ্ণুতা তৈরি করেছে, যা সমাজে অশান্তি বাড়াচ্ছে।
তিনি বলেন, গণতন্ত্র যেমন মানুষের অধিকার রক্ষার নিশ্চয়তা দেয়, তেমনি বাস্তুতন্ত্র রক্ষা করলেই প্রাণী ও প্রকৃতির অধিকার সুরক্ষিত হয়। রাষ্ট্রে গণতন্ত্র ও শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠিত থাকলে বাস্তুতন্ত্রও নিরাপদ থাকে।
তারেক রহমান বাংলাদেশের প্রাণী ও বন্যপ্রাণীর বর্তমান অবস্থার ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেন।
তিনি উল্লেখ করেন, একসময় দেশে ১,৬০০ প্রজাতির বেশি প্রাণী ছিল, অথচ বর্তমানে প্রায় ৩০০–৩৯০ প্রজাতি বিলুপ্তির মুখে। সুন্দরবনে ১৯৮০–এর দশকে যেখানে ৪০০–৫০০ বাঘ ছিল, সেখানে সর্বশেষ জরিপে সংখ্যা নেমে এসেছে মাত্র একশ’র কাছাকাছি। একইভাবে বন্য হাতির সংখ্যা এখন ২০০-এর নিচে।
তিনি বলেন, এটি কেবল প্রাণীর অস্তিত্ব সংকট নয়, বরং মানুষের জীবন ও বাস্তুতন্ত্রের জন্য এক ভয়াবহ বিপদ।
তারেক রহমান প্রাণীদের প্রাকৃতিক ভূমিকার উদাহরণ টেনে বলেন, শহরে ব্যাঙ না থাকলে এডিস মশার লার্ভা বাড়বে, আর তা ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়িয়ে তুলবে।
আরও পড়ুন: মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসীদের নিয়ে উদ্বিগ্ন তারেক রহমান
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ফড়িং, মৌমাছি, প্রজাপতি, জোনাকি পোকা—এসব প্রাণী পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অপরিহার্য। এদের বাঁচিয়ে রাখাই মানুষের স্বাস্থ্য ও সমাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
তিনি প্রাণী কল্যাণের জন্য বিদ্যমান আইনগুলোকে আরও কার্যকর ও সময়োপযোগী করার প্রতিশ্রুতি দেন।
তারেক রহমান বলেন, প্রাণীকল্যাণ আইন ২০১৯, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন, জীববৈচিত্র্য রক্ষা আইন, পরিবেশ উন্নয়ন আইন, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট আইন—সবগুলো আইন আমরা ইনশাআল্লাহ সময়োপযোগী করব।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, শুধু আইন থাকলেই হবে না, বরং নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে যাতে তারা প্রাণী ও প্রকৃতিকে নিজেদের দায়িত্ব মনে করে রক্ষা করে।
তারেক রহমান ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে প্রাণী সংরক্ষণের কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি ধর্মেই শেখানো হয় প্রকৃতির প্রতিটি সৃষ্টিকে সম্মান জানাতে। প্রাণী ও প্রকৃতি কেবল সৌন্দর্যের জন্য নয়, মানবজীবনের জন্য অপরিহার্য।
অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে বাংলাদেশ অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের আহ্বায়ক ছিলেন চিত্রনায়ক আদনান আজাদ। উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সম্পাদক আবদুল হাই শিকদার, কোষাধ্যক্ষ রশিদুজ্জামান মিল্লাত, সহ-স্থানীয় সরকার সম্পাদক শাম্মি আকতার, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবদুল লতিফ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনোয়ার হোসেন তুহিন, জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল, ক্রিকেটার শফিউল আলম, এবং অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান উদ্যোক্তা আতিকুর রহমান রুমনসহ শিল্পী, আইনজ্ঞ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।
বক্তৃতার শেষে তারেক রহমান সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, গণতন্ত্র রক্ষা, প্রাণী রক্ষা এবং পরিবেশ রক্ষা—এই তিনটি কাজ একে অপরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। আমরা যদি মনুষ্যত্ব অর্জন করতে চাই, তবে অবশ্যই পশুত্ব বর্জন করতে হবে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি