সাধন হত্যা: ক্লুলেস টার্গেট কিলিং

ফাইল ছবি
রাজধানীর মেরুল বাড্ডার গুদারাঘাট এলাকায় বিএনপি নেতা কামরুল আহসান সাধনকে গুলি করে হত্যা করার প্রায় তিন সপ্তাহ পরও হত্যাকারীদের শনাক্ত কিংবা গ্রেফতার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঘটনার তদন্তে এখনও পর্যন্ত একমাত্র সূত্র একটি সিসিটিভি ফুটেজ, যেখানে দুই হামলাকারীর একজনের চেহারা ধরা পড়েছে—তবে পরিচয় এখনও অধরা।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা যায়, ২৬ মে রাত আনুমানিক ১০টার পর, বাড্ডার গুদারাঘাট এলাকার চার নম্বর সড়কে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন গুলশান থানা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক কামরুল আহসান সাধন। ঠিক সেই সময়, পেছন দিক থেকে দুই অজ্ঞাত যুবক আচমকা এসে গুলি চালায়।
গুলির কয়েকটি সাধনের ঘাড়, কাঁধ, পিঠ, বুকের নিচের অংশ ও পেটে লাগে। হামলার পর আতঙ্ক ছড়াতে কিলাররা ফাঁকা গুলিও চালায় এবং এলাকা ত্যাগ করে। গুরুতর আহত অবস্থায় সাধনকে প্রথমে মহাখালীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ডিজিজেস অব দ্য চেস্টে নেওয়া হয় এবং পরে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে স্থানান্তর করা হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এস এন নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দুই যুবকের একজনের চেহারা শনাক্ত করা গেছে। তবে আমরা এখনও তার নাম বা পরিচয় নিশ্চিত হতে পারিনি। গোয়েন্দা বিভাগসহ (ডিবি) পুলিশ এই মামলার ওপর গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, ঘটনার দিন এলাকাজুড়ে থাকা কয়েকশ সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করা হয়েছে। কিন্তু শুধু একটি ফুটেজেই হামলাকারীদের গতিবিধি ধরা পড়ে। সেখানে দেখা যায়, তারা হেঁটে আসে এবং হামলার পর দ্রুত এলাকা ছেড়ে প্রগতি সরণির দিকের প্রধান সড়কে চলে যায়। তারা কোন গলি বা রাস্তাপথে ঢুকেছে, তা নির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি।
প্রাথমিকভাবে হত্যার পেছনে ইন্টারনেট ব্যবসা–সংক্রান্ত কোনো দ্বন্দ্ব থাকতে পারে বলে অনুমান করছিল পুলিশ। নিহত সাধন এ পেশার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তবে পরিবারের সদস্য এবং এলাকাবাসীরা তাকে কোনো বিরোধে জড়িত হিসেবে চিহ্নিত করতে পারেননি।
আরও পড়ুন: জামায়াতের অনুপস্থিতি নিয়ে প্রেস সচিবের ব্যাখ্যা
এ প্রসঙ্গে বাড্ডা থানার এক কর্মকর্তা জানান, পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে আমরা তেমন কোনো তথ্য পাইনি যাতে ব্যক্তিগত শত্রুতা বা দ্বন্দ্বের প্রমাণ মেলে। এলাকাবাসীর সঙ্গেও তার সম্পর্ক ছিল স্বাভাবিক। তার স্ত্রীর সঙ্গেও সম্পর্ক ছিল স্থিতিশীল, কোনো পারিবারিক কলহ ছিল না।
পুলিশের ধারণা, এ হত্যাকাণ্ড একটি পরিকল্পিত টার্গেট কিলিং। তারা মনে করছে, পেশাদার ভাড়াটে কিলারদের দিয়ে বাইরে থেকে এনে এই অপারেশন পরিচালনা করা হয়েছে। তাদের এলাকা সম্পর্কে ভালোভাবে জানা ছিল এবং ঘটনাস্থল রেকি করার পর নির্ধারিত সময়েই হামলা চালানো হয়।
এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের স্ত্রী দিলরুবা আক্তার ২৭ মে বাড্ডা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তবে মামলায় কোনো নাম উল্লেখ করা হয়নি। ফলে মামলাটি মূলত একটি ক্লুলেস (নির্দেশনাহীন) তদন্তে পরিণত হয়েছে।
ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় ডিএমপির বিভিন্ন ইউনিট এবং একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা।
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, হামলাকারীরা ওই এলাকার পরিচিত কেউ নয়। তাই তাদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
বিএনপি নেতাদের অনেকেই এই ঘটনা শুনে রাতেই হাসপাতালে ছুটে আসেন। তারা এটিকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অংশ বলে দাবি করলেও, পুলিশের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি।
কামরুল আহসান সাধন প্রায় ২৫ বছর আগে বিয়ে করেন। তার কোনো সন্তান ছিল না। এলাকায় তিনি একজন শান্ত, নিরপরাধ ব্যক্তি হিসেবেই পরিচিত ছিলেন।
স্থানীয়দের মতে, কোনো অপরাধচক্র কিংবা রাজনৈতিক সংঘর্ষের সঙ্গেও তার সম্পৃক্ততা ছিল না।
সূত্র: ঢাকা মেইল
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি