শাওন–নিশি দ্বন্দ্বে নাটকীয় মোড়: তদন্তে উল্টে গেল অভিযোগ

ফাইল ছবি
অভিনেত্রী ও গায়িকা মেহের আফরোজ শাওনের সৎ মা নিশি ইসলামকে ঘিরে করা প্রতারণা ও বলপ্রয়োগ করে বিয়ে ও অর্থ আদায়ের মামলায় অভিযোগের কোনো সত্যতা খুঁজে পায়নি পুলিশ।
মামলার চূড়ান্ত তদন্ত শেষে বাড্ডা থানার সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) কাজী ইকবাল হোসেন আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন, যেখানে বলা হয়েছে, এজাহারনামীয় আসামি নিশি ইসলাম ও তার সাবেক স্বামী আল মাহফুজ খানের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রাথমিকভাবে মিথ্যা এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
২০২৪ সালের ৫ এপ্রিল, শাওনের বোন মাহিন আফরোজ শিঞ্জন বাড্ডা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, তার বাবা ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আলীকে নিশি ইসলাম (২৯) ও আল মাহফুজ খান (২৪) নামের দুই ব্যক্তি মিথ্যা পরিচয়ে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে জোর করে বিয়ে করেন এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা আদায়ের চেষ্টা করেন।
অভিযোগ অনুযায়ী, তারা নিজেদের ভাইবোন পরিচয় দিয়ে মোহাম্মদ আলীর সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং ২০২৪ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি উত্তর বাড্ডার পদ্মা গার্ডেন এলাকার একটি বাসায় নিয়ে গিয়ে নিশি ইসলাম জোর করে বিয়েতে বাধ্য করেন। এমনকি একটি রেজিস্ট্রার বইয়ের মতো কাগজে স্বাক্ষরও করানো হয় বলে দাবি করা হয়।
মামলার তদন্ত চলাকালে, পুলিশ নিশি ইসলামকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তবে তদন্ত শেষে এসআই কাজী ইকবাল হোসেন চূড়ান্ত প্রতিবেদনে জানান, মামলার এজাহারে উল্লেখিত তথ্য, সাক্ষ্য, বিকাশ ট্রান্স্যাকশন ও অন্যান্য নথিপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে—মাহিন আফরোজ শিঞ্জনের অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নিশি ইসলাম ও আল মাহফুজ খান পূর্বে দাম্পত্য সম্পর্কে আবদ্ধ থাকলেও ২০২৩ সালের ৫ মে তাদের মধ্যে আইনি বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর ২০২৪ সালের জানুয়ারি নাগাদ ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আলী ম্যারেজ মিডিয়ার মাধ্যমে নিশি ইসলামের সঙ্গে পরিচিত হন এবং ঘনিষ্ঠতার ভিত্তিতে উভয়ের সম্মতিতে ২১ ফেব্রুয়ারি বিয়ে সম্পন্ন হয়।
পুলিশ জানায়, ওইদিন হাস্যোজ্জ্বল পরিবেশে নিকাহনামায় স্বাক্ষর করে ‘আলহামদুলিল্লাহ কবুল’ উচ্চারণের মাধ্যমে তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এতে কোনো জবরদস্তি বা ভয়ভীতি প্রদর্শনের প্রমাণ মেলেনি।
মাহিন আফরোজ শিঞ্জনের এজাহারে ১ লাখ টাকা আদায়ের অভিযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ কর্তৃক সংগ্রহকৃত বিকাশ স্টেটমেন্টে এর কোনো ভিত্তি মেলেনি। অর্থাৎ চাঁদা আদায়ের অভিযোগও প্রমাণিত হয়নি।
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনা-জয়সহ ২২২ জনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মামলার সাক্ষী মান্নাক আফরোজ সেঁজুতি (বাদীর বোন) এবং হাসানুজ্জামান (বাদীর বন্ধু) মূলত শোনা তথ্যের ভিত্তিতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তারা প্রত্যক্ষদর্শী না হওয়ায় তাদের বক্তব্য নিরপেক্ষ ও নির্ভরযোগ্য নয়।
এসআই কাজী ইকবাল হোসেন প্রতিবেদনে আদালতকে অনুরোধ জানান, নিশি ইসলাম ও আল মাহফুজ খানকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পাশাপাশি, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা মামলা করায় মাহিন আফরোজ শিঞ্জনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি দণ্ডবিধির ২১১ ধারায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
বাড্ডা থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই জারি হোসেন জানান, চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। আদালত বাদীকে নোটিশ ইস্যু করেছে এবং পরবর্তী শুনানির দিন ১০ জুলাই নির্ধারণ করেছেন।
প্রতিবাদ জানিয়ে মন্তব্য করতে চাইলে মাহিন আফরোজ শিঞ্জন সাংবাদিকদের বলেন, এটা কোর্ট প্রসিডিউর। চার্জশিট নাকি ফাইনাল রিপোর্ট, তা আদালতের বিষয়। আমি সাংবাদিকদের সামনে এ নিয়ে মন্তব্য করতে আগ্রহী নই।
অন্যদিকে, চলমান মামলার প্রতিক্রিয়ায় ২০২৫ সালের ১৩ মার্চ নিশি ইসলাম ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আরেকটি মামলা করেন।
তিনি অভিযোগ করেন, তাকে হত্যাচেষ্টা ও মারধর করা হয়েছে।
এ মামলায় ১২ জনকে আসামি করা হয়। তারা হলেন:
- ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আলী (শাওনের বাবা)
- মেহের আফরোজ শাওন
- মাহিন আফরোজ শিঞ্জন (শাওনের বোন)
- মান্নাক আফরোজ সেঁজুতি (শাওনের আরেক বোন)
- শিঞ্জনের স্বামী সাব্বির
- এডিসি নাজমুল
- সুব্রত দাস
- মাইনুল হোসেন
- সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ
- পুলিশ পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়া
- উপ-পরিদর্শক শাহ আলম
- মোখলেছুর রহমান মিল্টন (শাওনের বাবার ভাগনে)
২০২৫ সালের ২২ এপ্রিল মামলার শুনানির সময় সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়া ও শাহ আলম আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পান। তবে বাকি ১০ আসামি অনুপস্থিত থাকায় আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
পরবর্তীতে আদালত বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মেহের আফরোজ শাওন, সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদসহ ১২ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ২০২৫ সালের ১ জুলাই নির্ধারিত।
নিশি ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আমাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। রিমান্ডে নিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে, আমি এর ন্যায়বিচার চাই।
অন্যদিকে, মাহিন আফরোজ শিঞ্জন এই মামলাকে ‘আদালতের বিচারাধীন বিষয়’ আখ্যা দিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি