News Bangladesh

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৬:০৭, ১৩ জুন ২০২৫

ইসরাইলি হামলায় নিহত ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান

ইসরাইলি হামলায় নিহত ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান

ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েল ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামের এক বিস্তৃত সামরিক অভিযানে ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় নজিরবিহীন বিমান হামলা চালিয়েছে। 

শুক্রবার (১৩ জুন) ভোররাতে একযোগে চালানো অন্তত পাঁচ ধাপের এই হামলায় ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি নিহত হয়েছেন।

ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ইরিন এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। 

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, অভিযানের লক্ষ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি, সামরিক কমান্ড স্ট্রাকচার এবং ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি।

ইসরায়েলি হামলায় নিহতদের তালিকায় রয়েছেন:

  • মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি – ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান
  • হোসেইন সালামি – ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর (IRGC) প্রধান
  • ঘোলাম আলি রশিদ – খাতাম আল-আনবিয়া সেন্ট্রাল হেডকোয়ার্টারের কমান্ডার
  • ফেরেয়দুন আব্বাসি – ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থার সাবেক প্রধান
  • মোহাম্মদ মাহদি তেহরানচি – পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির বিজ্ঞানী

তবে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ হল জেনারেল বাঘেরির মৃত্যু। তিনি ২০১৬ সাল থেকে ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন এবং ইরান-ইরাক যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে শুরু হয় ইসরায়েলের ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’।

টাইমস অব ইসরায়েল ও বিবিসি জানায়, ইরানে অন্তত ৮টি শহরে ১০০টির বেশি লক্ষ্যবস্তুতে ৩৩০টির বেশি মারণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানগুলো নিশ্চিত করেছে যে হামলা চালানো হয়েছে:

  • তেহরান – সামরিক ঘাঁটি ও বিমান প্রতিরক্ষা স্থাপনায়
  • নাতানজ – ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র
  • তাবরিজ – পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র
  • ইস্পাহান ও আরাক – ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা
  • কেরমানশাহ – সামরিক কমান্ড হাব

তেহরানের বিভিন্ন স্থানে ৬ থেকে ৯টি বড় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। আহত অন্তত ৫০ জনকে রাজধানীর চামরান হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ৩৫ জন নারী ও শিশু।

আরও পড়ুন: ইসরায়েলি হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ড প্রধান নিহত

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি এক বিবৃতিতে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, এই বর্বর আক্রমণের জন্য ইসরায়েলকে চরম মূল্য দিতে হবে। 

তিনি আরও বলেন, এটি আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার ওপর সরাসরি হামলা।

ইরানের সামরিক মুখপাত্র আবুল ফজল শেকারচি ঘোষণা করেছেন, ইসরায়েল এই আগ্রাসনের জন্য ভয়াবহ মূল্য দেবে।

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, জাতিসংঘ সনদের অধীনে আত্মরক্ষার আইনি অধিকার আমাদের রয়েছে। ইসরায়েল ও এর পৃষ্ঠপোষক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই হামলার পরিণতির জন্য দায়ী থাকবে।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, এই অভিযানে যুক্তরাষ্ট্র জড়িত নয়। এটি ছিল ইসরায়েলের একক পদক্ষেপ। 

তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটি বা স্বার্থ লক্ষ্য করলে এর জবাবও হবে কড়া।

এই হামলার ঠিক আগেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু ‘রাইজিং লায়ন’ অপারেশন এই প্রতিশ্রুতির পরই সংঘটিত হওয়ায় আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

ইরানে পাল্টা হামলার আশঙ্কায় ইসরায়েলজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। 

ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স (IDF) জানায়, ইরানের পাল্টা আক্রমণ প্রতিহত করতে আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত।

ইতোমধ্যে ইরান ১০০টির বেশি ড্রোন ইসরায়েলের দিকে পাঠিয়েছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।

বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েল-ইরান দ্বন্দ্ব এবার পূর্ণমাত্রিক অঞ্চলের যুদ্ধের দিকে এগোচ্ছে। ইসরায়েলের এই পূর্ব প্রতিরোধমূলক আক্রমণ যে পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারে, তা পুরো মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তাকে বিপর্যস্ত করতে পারে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়