News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২০:৫৬, ১৩ জুন ২০২৫

গণতন্ত্র একদিনের বিষয় নয়: ফখরুল

গণতন্ত্র একদিনের বিষয় নয়: ফখরুল

ছবি: সংগৃহীত

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে লন্ডনে অনুষ্ঠিত বহুল আলোচিত বৈঠককে ‘দেশের গণতন্ত্রের পথে একটি টার্নিং পয়েন্ট’ বলে অভিহিত করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

বৈঠকের ফলাফলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়সূচি ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ের দিকে এগিয়ে আসার সম্ভাবনার কথা উঠে এসেছে, যা দেশের রাজনীতিতে নতুন গতি সঞ্চার করেছে।

শুক্রবার (১৩ জুন) লন্ডনে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণে। বৈঠক শেষে লন্ডন থেকে ফোনে মহাসচিব মির্জা ফখরুলের সঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে কথা বলেন তারেক রহমান। এরপর বিকেলে ঢাকার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন মহাসচিব।

তিনি বলেন, জাতি বহুদিন ধরে একটি সুসংবাদের জন্য অপেক্ষা করছিল। সেই সুসংবাদ আজ এসেছে। বৈঠকের পরপরই প্রকাশিত যৌথ ঘোষণায় বলা হয়েছে—দুই নেতার মধ্যে অত্যন্ত সৌহার্দপূর্ণ ও সুন্দর পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। এর প্রধান বিষয় ছিল নির্বাচন। তারেক রহমান স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, এপ্রিল উপযুক্ত সময় নয়। প্রধান উপদেষ্টা এতে সম্মত হয়ে নির্বাচন ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে আয়োজনের সময়সূচি প্রস্তাব করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, এই বৈঠকটি সত্যিকার অর্থেই একটি টার্নিং পয়েন্ট। বহু অনিশ্চয়তার মধ্যে এই আলোচনা আশার আলো দেখিয়েছে। দেশবাসী এখন দেখেছে, প্রয়োজনের সময়ে রাজনৈতিক নেতৃত্ব ঐক্যবদ্ধ হতে পারে। আমরা আশা করি, অতীতের ছোটখাটো মতবিরোধ ভুলে গিয়ে সবাই মিলে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথে হাঁটব।

আরও পড়ুন: ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক শেষে হাসিমুখে হোটেল ছাড়লেন তারেক

তিনি বলেন, ১৫ বছর পরে দেশের জন্য গণতন্ত্রে উত্তরণের একটি সুযোগ এসেছে। এই সুযোগকে আমরা যেন জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে কাজে লাগাতে পারি। এটি শুধু নির্বাচন নয়, বরং গণতান্ত্রিক কাঠামোর পুনর্গঠনের শুরু।

দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ভূমিকায় সন্তোষ প্রকাশ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তারেক রহমান আবারও প্রমাণ করলেন, তিনি একজন রাষ্ট্রনায়কোচিত নেতা। তার কূটনৈতিক দক্ষতা, সময়োপযোগী প্রস্তাব এবং নেতৃত্ব দেশকে একটি সংকটময় মুহূর্ত থেকে সম্ভাবনার পথে নিয়ে এসেছে। আমি দলের পক্ষ থেকে তাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের ভূমিকার প্রশংসা করে তিনি বলেন, তিনি অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে সংকট নিরসনে ইতিবাচক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। একটি অনিশ্চিত পরিবেশ থেকে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথ খুলে দিয়েছেন।

এই ঐতিহাসিক আলাপচারিতার পটভূমিতে গত ১৫ বছর ধরে বিএনপি আন্দোলনে যেসব নেতাকর্মী জীবন দিয়েছেন, বিশেষ করে জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণ করেন মির্জা ফখরুল। 
তিনি বলেন, তাদের আত্মত্যাগই আজকের এই সম্ভাবনার ভিত্তি। দলের পক্ষ থেকে তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

মির্জা ফখরুল বলেন, গণতন্ত্র একদিনের বিষয় নয়। এটি একটি কালচার, একটি চর্চা। আসুন, দলীয় হিংসা, গালিগালাজ ও বকাবকির রাজনীতি থেকে বের হয়ে নতুন এক রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলি। জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির মাধ্যমে দেশ পুনর্গঠনের পথে এগিয়ে যাই।

তিনি আরও বলেন, তারেক রহমান তার মায়ের পথেই চলেছেন। তিনি নিজেই বৈঠকের পরে আমাদের জানিয়েছেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দিকনির্দেশনার প্রতি তিনি কৃতজ্ঞ। সেই নেতৃত্বেই আজকের আলোচনার সফলতা এসেছে।

এই তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানানোর সময় উপস্থিত ছিলেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহির উদ্দিন স্বপন, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, মিডিয়া সেলের আতিকুর রহমান রুমন, শায়রুল কবির খান, এবং চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন নসু।

বিএনপি ও অন্তর্বর্তী সরকারের এই সদ্যঘটিত বৈঠক বাংলাদেশ রাজনীতিতে বহুদিন পর একটি আশাব্যঞ্জক পরিবর্তনের বার্তা বয়ে এনেছে। নির্বাচনী সময়সূচি এগিয়ে আসা, সৌহার্দপূর্ণ রাজনৈতিক আলোচনা এবং জাতীয় ঐক্যের ডাক—সব মিলিয়ে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়