সেনাপ্রধান সালামির মৃত্যু, নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগ

ছবি: সংগৃহীত
ইরানের রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বিস্তৃত বিমান হামলা চালায়। এই হামলায় ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) প্রধান মেজর জেনারেল হোসেইন সালামিসহ দেশটির উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তারা নিহত হন। পাশাপাশি ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তুতে ব্যাপক ক্ষতি হয়।
হামলার তীব্র প্রতিক্রিয়ায় ইরান থেকে ইসরায়েলের দিকে প্রায় ১০০টি ড্রোন ছোঁড়া হয়, যদিও ইসরায়েল দাবি করেছে সেগুলো সব সফলভাবে ভূপাতিত হয়েছে।
হামলার পরই ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি দুটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক পদে নতুন নেতৃত্ব দিয়েছেন। মেজর জেনারেল আবদুর রহিম মুসাভিকে ইরানের সেনাবাহিনীর নতুন প্রধান এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ পাকপুরকে ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডের (আইআরজিসি) নতুন কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে।
শুক্রবার (১৩ জুন) ভোররাতে ‘অপারেশন রাইসিং লায়ন’ নামের অভিযানে ইসরায়েল তেহরানসহ ইরানের একাধিক শহরে সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনা, বিশেষত আইআরজিসির সদর দপ্তর এবং আবাসিক এলাকা লক্ষ্য করে হামলা চালায়।
এই হামলায় নিহত হয়েছেন:
- সেনাবাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল হোসেইন বাকেরি
- ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) প্রধান মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি
- খাতাম আল-আন্বিয়া সেন্ট্রাল হেডকোয়ার্টারের কমান্ডার মেজর জেনারেল গোলাম আলি রাশিদ
ছয় পারমাণবিক বিজ্ঞানী: মোহাম্মাদ মাহদি তেহরাঞ্চি, ফেরিদুন আব্বাসি, আব্দুল্লাহ মিনৌচেহর, আহমাদ রেজা জলফাঘারি, সায়েদ আমির হোসেন ফাকহি ও মোতলাবিজাদেহ।
আরও পড়ুন: ইসরাইলি হামলায় নিহত ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান
হামলার দিনই আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি দুই শীর্ষ পদে নতুন নেতৃত্বের ঘোষণা দেন। নতুন সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন মেজর জেনারেল আবদুর রহিম মুসাভি, যিনি ইরানের সামরিক বাহিনীর উচ্চতর পর্যায়ে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন একজন কর্মকর্তা। আর আইআরজিসির কমান্ডার পদে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ পাকপুরকে নিয়োগ দেয়া হয়, যিনি পূর্বে আইআরজিসির স্থল বাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পাকপুরকে মেজর জেনারেলের পদমর্যাদায় উন্নীত করা হয়েছে।
আয়াতুল্লাহ খামেনি শহীদ সালামির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নতুন কমান্ডারদের ‘দেশের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধি’ এবং ‘শত্রুদের বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রস্তুতি’ রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
ইরানের তরফ থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রায় ১০০টি ড্রোন ছোঁড়া হয়।
তবে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা সব ড্রোন সফলভাবে ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে। একই সঙ্গে, ইসরায়েলের হোম ফ্রন্ট কমান্ড জনগণকে আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থানের প্রয়োজন নেই জানিয়ে সতর্ক ও সজাগ থাকার পরামর্শ দিয়েছে। পরিস্থিতির উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় ইসরায়েলে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানিয়েছে, ইরানি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের পর তারা নিশ্চিত হয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় ইরানের স্পাহান পারমাণবিক স্থাপনা কোনো ক্ষতির সম্মুখীন হয়নি।
ইরান ইসরায়েলের হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এই আক্রমণ তাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ও ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা আরও জোরালো করেছে। দেশটির সরকার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘শিকারি রাষ্ট্র’ ইসরায়েলের সঙ্গে ক্ষমতার ভাষায়ই কথা বলা উচিত এবং তারা তাদের পারমাণবিক ও প্রতিরক্ষা ক্ষমতা আরও শক্তিশালী করতে বাধ্য হবে।
মেজর জেনারেল মোহাম্মদ পাকপুর একজন অভিজ্ঞ সৈনিক, যিনি ইরান-ইরাক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে সন্ত্রাস দমন অভিযানে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। আইআরজিসি গ্রাউন্ড ফোর্সের সাবেক প্রধান হিসেবে তার কৌশলগত দক্ষতা নতুন দায়িত্বে দেশের নিরাপত্তা পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি