শেখ হাসিনা-জয়সহ ২২২ জনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা

গত বছর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত সোহেল রানা (৩৮) নামে এক ব্যক্তির দায়ের করা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ২২২ জনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগে মামলা হয়েছে।

ভুক্তভোগী সোহেল রানা ১১ জুন ২০২৫, বুধবার মোহাম্মদপুর থানায় মামলাটি দায়ের করেন। 

শুক্রবার (১৩ জুন) মামলার এজাহার ঢাকার মহানগর হাকিম (মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট) সেফাতুল্লাহ'র আদালতে পৌঁছায়। আদালত অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে আগামী ২০ জুলাই'র মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত বছর ৫ আগস্ট ২০২৪, দুপুর আনুমানিক আড়াইটার দিকে, মোহাম্মদপুর থানাধীন তিন রাস্তার মোড়ে ময়ূর ভিলার সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে অংশ নেন সোহেল রানা। এসময়, এজাহার অনুযায়ী, শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিলে হামলা চালায়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন সোহেল রানা। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং দীর্ঘ সময় ধরে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। ফলে মামলা করতে বিলম্ব হয় বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি

মামলায় যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন দেশের সাবেক অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি। উল্লেখযোগ্যরা হলেন—

• শেখ হাসিনা – সাবেক প্রধানমন্ত্রী
• সজীব ওয়াজেদ জয় – শেখ হাসিনার ছেলে, তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা
• ওবায়দুল কাদের – আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেতুমন্ত্রী
• আসাদুজ্জামান খান কামাল – সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
• আনিসুল হক – সাবেক আইনমন্ত্রী
• সালমান এফ রহমান – সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা
• হাসানুল হক ইনু – সাবেক মন্ত্রী ও জাসদ সভাপতি
• রাশেদ খান মেনন – ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী
• ডা. দীপু মনি – সাবেক শিক্ষামন্ত্রী
• মমতাজ বেগম – কণ্ঠশিল্পী ও সাবেক সংসদ সদস্য
• শমী কায়সার – অভিনেত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য
• হারুন অর রশিদ – ডিএমপির সাবেক গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান

ঢাকার মোহাম্মদপুর থানার আদালতের প্রসিকিউশন বিভাগের এসআই মিজানুর রহমান নিশ্চিত করেছেন, মামলাটি গ্রহণ করা হয়েছে এবং আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী তদন্ত কার্যক্রম শুরু হবে।

এই মামলা বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সাবেক মন্ত্রী ও বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগে ক্ষমতার অপব্যবহার, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং আন্দোলন দমন নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠতে পারে।

মামলাটির তদন্ত এবং আদালতের পরবর্তী সিদ্ধান্ত দেশের রাজনীতি ও প্রশাসনে একটি বড় প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।