জামায়াতের নিবন্ধন ফিরিয়ে দিতে নির্দেশ আপিল বিভাগের

ছবি: সংগৃহীত
রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বাতিল হওয়া নিবন্ধন ফিরিয়ে দিতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
রবিবার (১ জুন) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপার আপিল বেঞ্চ এই ঐতিহাসিক রায় দেন।
এ রায়ের মাধ্যমে হাইকোর্টের ২০১৩ সালের রায় বাতিল হয়ে গেল এবং প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় পর জামায়াতের রাজনৈতিক পুনর্বাসনের পথ উন্মুক্ত হলো।
২০০৯ সালে সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীর নেতৃত্বে ২৫ জনের একটি দল জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন। দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট হাইকোর্টের তিন সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে দলটির নিবন্ধন বাতিল ও অবৈধ ঘোষণা করেন।
আদালত রায়ে উল্লেখ করেন, জামায়াতের গঠনতন্ত্র সংবিধানবিরোধী এবং দলটির নিবন্ধন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত।
এই রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াত নিয়মিত আপিল করে এবং লিভ টু আপিলের মাধ্যমে সর্বোচ্চ আদালতে আইনি লড়াই চালিয়ে যায়। তবে মূল আইনজীবীর অনুপস্থিতিতে ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর আপিল বিভাগ ‘ডিসমিস ফর ডিফল্ট’ উল্লেখ করে আপিল খারিজ করে দেয়। এর ফলে হাইকোর্টের রায় বহাল থাকে এবং নিবন্ধন বাতিলের অবস্থান বহাল থাকে।
আরও পড়ুন: ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিচার সরাসরি সম্প্রচার হতে পারে
পরবর্তীতে, ২০২৪ সালের অক্টোবরে জামায়াত ২৮৬ দিনের বিলম্ব মার্জনার আবেদনসহ পুনরুজ্জীবিত আপিল দাখিল করে। আপিল বিভাগ বিলম্ব মঞ্জুর করে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করে এবং ২০২৫ সালের ১৪ মে পর্যন্ত পাঁচ কার্যদিবস শুনানি শেষে রায়ের জন্য ১ জুন নির্ধারণ করেন।
রায়ের ফলে ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন কর্তৃক জারি করা নিবন্ধন বাতিলের প্রজ্ঞাপন কার্যত অকার্যকর হয়ে গেল। দলটির ভবিষ্যৎ নির্বাচন অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো আইনি বাধা থাকছে না।
তবে দলের বহুদিনের প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ ফিরে পাবে কিনা— সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন। শুনানিতে ইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, আপিল বিভাগের আগের প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে প্রতীক তালিকা থেকে দাঁড়িপাল্লা সরিয়ে ফেলা হয়েছিল। ফলে পুনরায় নিবন্ধন ফিরে পেলেও জামায়াতকে ভিন্ন প্রতীক গ্রহণ করতে হতে পারে।
আপিল শুনানিতে জামায়াতের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার এহসান আবদুল্লাহ সিদ্দিক, ব্যারিস্টার ইমরান আবদুল্লাহ সিদ্দিক, অ্যাডভোকেট শিশির মনির, ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন ও ব্যারিস্টার মীর আহমেদ বিন কাশেম। আদালত পর্যবেক্ষণে বলেন, নিবন্ধনসংক্রান্ত বিষয়গুলোতে নির্বাচন কমিশন সংবিধান ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ১ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জামায়াত ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার ওই প্রজ্ঞাপন বাতিল করে।
এই রায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয় থাকা একটি রাজনৈতিক দল আইনি স্বীকৃতি পেলো। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে দলটির প্রতীক সংক্রান্ত ভাগ্য। তবে রাজনৈতিকভাবে জামায়াতে ইসলামী এখন আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণে সম্পূর্ণভাবে উপযুক্ত, যা দেশের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি