রমজানের আগেই ভোট চান তারেক

ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে লন্ডনে অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক। বৈঠকের মূল প্রতিপাদ্য ছিল—আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে এবং কী প্রক্রিয়ায় হবে।
শুক্রবার (১৩ জুন) স্থানীয় সময় দুপুর ২টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত লন্ডনের একটি নিরপেক্ষ ভেন্যুতে এ দুজনের মধ্যে প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে রমজান শুরু হওয়ার আগেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তারেক রহমান বৈঠকে জোরালোভাবে প্রস্তাব দেন যে, আগামী বছরের রমজান শুরু হওয়ার আগেই নির্বাচন আয়োজন করা উচিত, যাতে রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনের পাশাপাশি জনগণের আস্থাও পুনঃস্থাপিত হয়।
তিনি এও উল্লেখ করেন যে, দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও এ সময়ে নির্বাচনের পক্ষে।
এই প্রস্তাবে সতর্কভাবে ইতিবাচক সাড়া দেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, যদি প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক ও আইনগত প্রস্তুতি সম্পন্ন করা যায়, এবং বিচার ও কাঠামোগত সংস্কারে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়, তবে রমজানের আগের সপ্তাহেই নির্বাচন আয়োজন সম্ভব।
উল্লেখ্য, ২০২৬ সালের রমজান শুরু হওয়ার সম্ভাব্য সময় ২৭ মার্চ – ২৯ মার্চের মধ্যে।
বৈঠক শেষে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান সাংবাদিকদের সামনে উভয় পক্ষের সম্মতিসূচক যৌথ বিবৃতি পাঠ করেন।
পরে অনুষ্ঠিত হয় যৌথ সংবাদ সম্মেলন, যেখানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এবং বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির।
ড. খলিলুর রহমান বলেন, আমরা যৌথভাবে উল্লেখ করেছি, নির্বাচন কমিশনকে আমরা আহ্বান করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তারিখ ঘোষণার জন্য। এতে কোনও অস্পষ্টতা নেই।
আমীর খসরু বলেন, এই আলোচনার মাধ্যমে একটি সমন্বিত জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তি তৈরি হয়েছে, যা নির্বাচনের আগে ও পরে গঠিত বাংলাদেশে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
আরও পড়ুন: ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক শেষে হাসিমুখে হোটেল ছাড়লেন তারেক
প্রসঙ্গত, ঈদুল আজহার আগে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ড. ইউনূস বলেছিলেন, নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে হতে পারে। কিন্তু লন্ডনের এই বৈঠকের পর, উভয় পক্ষই রমজানের আগেই নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে পরিস্থিতিনির্ভর যৌথ সম্মতি প্রকাশ করে।
আমীর খসরু বলেন, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। নির্বাচনের আগে কিছু সংস্কার হবে, নির্বাচনের পরও কাঠামোগত সংস্কার চলবে। আমরা এটিকে আলাদা কিছু হিসেবে দেখছি না।
সাংবাদিকদের প্রশ্নে আমীর খসরু জানান, তারেক রহমান নিজেই দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেবেন। বিষয়টি আলোচনায় আসেনি এবং আসার প্রয়োজনও নেই।
‘জুলাই সনদ’ নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে কি না—এমন প্রশ্নে আমীর খসরু বলেন, জুলাই সনদ নিয়ে আমাদের মধ্যে সিদ্ধান্ত হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যেই একটি ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে এটি চূড়ান্ত হবে।
ড. মাহবুবুল হাসান, সাবেক অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বলেন, রমজানের আগেই নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে ড. ইউনূসের নমনীয়তা এবং তারেক রহমানের সক্রিয়তা দেখায়—উভয় পক্ষ দায়িত্বশীল ভূমিকা নিচ্ছে। এই বৈঠক রাজনৈতিক সমঝোতার সম্ভাব্য টার্নিং পয়েন্ট।
অনেক পর্যবেক্ষক মনে করছেন, এই আলোচনা সরকারি কাঠামোয় বিরোধী দলের অংশগ্রহণের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে এবং দীর্ঘদিন পর গণতান্ত্রিক চর্চার দিকে একটি বাস্তবসম্মত অগ্রগতি ঘটেছে।লন্ডনে অনুষ্ঠিত তারেক রহমান ও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এই ঐতিহাসিক বৈঠক বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ গতি আনতে পারে। এটি কেবল একটি নির্বাচনের প্রস্তুতি নয়, বরং একটি সম্ভাব্য নতুন রাষ্ট্রনৈতিক কাঠামোর পথনির্দেশও বটে। এখন নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত ঘোষণাই বলে দেবে—এই ঐক্যকামনা কতটা ফলপ্রসূ হয়।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি