ইরানে ইসরায়েলের হামলায় বাংলাদেশের নিন্দা ও উদ্বেগ

ছবি: সংগৃহীত
ইরানে ইসরায়েলের সামরিক আগ্রাসনের ঘটনায় বাংলাদেশ সরকার কড়া ভাষায় নিন্দা জানিয়েছে এবং একই সঙ্গে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
শুক্রবার (১৩ জুন) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত এক দ্ব্যর্থহীন বিবৃতিতে বাংলাদেশ এই হামলাকে জাতিসংঘ সনদ ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন এবং ইরানের সার্বভৌমত্বের প্রতি সরাসরি আঘাত বলে অভিহিত করে।
বাংলাদেশ সরকার বিবৃতিতে বলেছে, এই ধরনের নির্লজ্জ সামরিক আগ্রাসন আন্তর্জাতিক আইনের মৌলিক নীতিমালার বিরুদ্ধে। এটি শুধু ইরানের ওপর আক্রমণ নয়, বরং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য একটি গুরুতর হুমকি। এর রয়েছে সুদূরপ্রসারী পরিণতি।
বাংলাদেশ জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একযোগে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছে, স্থিতিশীল মধ্যপ্রাচ্যের স্বার্থে সম্মিলিতভাবে কাজ করতেই হবে। শুধু সামরিক প্রতিক্রিয়া নয়, কূটনীতি এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বোঝাপড়া হচ্ছে স্থায়ী শান্তির একমাত্র কার্যকর উপায়।
বর্তমান উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সব পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের অনুরোধ জানিয়েছে, যেকোনো এমন পদক্ষেপ যা এই অঞ্চলকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে, তা থেকে বিরত থাকতে হবে। বিদ্যমান উত্তেজনা ঘনীভূত হলে তা পুরো অঞ্চলকেই যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে।
স্থানীয় সময় শুক্রবার (১৩ জুন) ভোররাতে ইরানের রাজধানী তেহরানসহ একাধিক শহরে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ও ছবি থেকে জানা যায়, ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু ও সামরিক স্থাপনাগুলোতে বিস্ফোরণ ঘটেছে, এবং সেখান থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখা গেছে।
আরও পড়ুন: রমজানের আগেই ভোট চান তারেক
ইসরায়েলের এই হামলায় ইরানের বেশ কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা এবং পরমাণু বিজ্ঞানী প্রাণ হারিয়েছেন বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো নিশ্চিত করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত ভবন, জ্বলে যাওয়া গাড়ি, ছিন্নভিন্ন অবকাঠামোর ছবি ইতিমধ্যেই গণমাধ্যমে জায়গা করে নিয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৪ সালের দুই দফা ইসরায়েলি হামলার সঙ্গে এবারের হামলার তুলনা চলেই না। আগেরবার ছিল সতর্কবার্তা, আর এবারের ঘটনা একটি সরাসরি যুদ্ধের আহ্বান।
হামলার পরপরই ইরান প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ হিসেবে ১০০টিরও বেশি ড্রোন ইসরায়েলের দিকে ছুড়েছে, যা ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (IDF) দাবি অনুযায়ী আকাশেই ভূপাতিত করা হয়েছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইরান এখানেই থেমে থাকবে না। পরিস্থিতি সম্পূর্ণরূপে যুদ্ধাবস্থায় পরিণত হতে পারে, যা যুক্তরাষ্ট্রসহ আরও বৃহৎ শক্তিকে জড়িয়ে ফেলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ তার শান্তিপূর্ণ ও দায়িত্বশীল কূটনৈতিক অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে। বাংলাদেশের বিবৃতিতে একাধিকবার ‘পারস্পরিক সম্মান’, ‘সংযম’, ও ‘আন্তর্জাতিক আইন’ মেনে চলার কথা বলা হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে শেষ পর্যন্ত বলা হয়, বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, টেকসই শান্তির একমাত্র পথ হল সংলাপ, কূটনীতি এবং আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধা। আমাদের দায়িত্ব এই অঞ্চলকে যুদ্ধের দিকে ঠেলে না দিয়ে শান্তির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি