News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২১:৩৭, ১৩ জুন ২০২৫

বান্দরবানে নিখোঁজ আরও এক পর্যটকের মরদেহ উদ্ধার

বান্দরবানে নিখোঁজ আরও এক পর্যটকের মরদেহ উদ্ধার

ছবি: সংগৃহীত

বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় বেড়াতে এসে নিখোঁজ হওয়া পর্যটক স্মৃতি আক্তারের (২৪) মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে গত দুই দিনে নিখোঁজ তিন পর্যটকের মধ্যে দু’জনের মরদেহ উদ্ধার হলো। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন সহ-সমন্বয়কারী ও ট্যুর অপারেটর মো. হাসান চৌধুরী।

শুক্রবার (১৩ জুন) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আলীকদম সদর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের আমতলী ঘাট এলাকায় তৈন খালে স্থানীয়রা একটি নারীর মরদেহ ভাসতে দেখে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসে খবর দেন। পরে আলীকদম থানা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস মরদেহটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।

পরিচয় শনাক্ত করতে গিয়ে নিহতের সঙ্গে থাকা জাতীয় পরিচয়পত্র থেকে জানা যায়, তার নাম স্মৃতি আক্তার (বয়স ২৩–২৪ বছর), পিতা মো. হাবিবুর রহমান, মাতা রুপিয়া বেগম; বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার ভাটি সাভার (বা বাকি সাভার) গ্রামে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত সহযাত্রীরা মরদেহটি স্মৃতির বলে নিশ্চিত করেন।

আলীকদম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মির্জা জহির উদ্দিন বলেন, শুক্রবার সকাল ১০টা ৩০ মিনিটের দিকে তৈন খাল থেকে বিবস্ত্র অবস্থায় স্মৃতি নামের এক নারী পর্যটকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এটি তার সহপাঠীরা শনাক্ত করেছেন। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য বান্দরবান সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিখোঁজ আরেকজন পর্যটক মো. হাসান চৌধুরীর সন্ধানে উদ্ধার অভিযান চলছে। তবে দুর্গম ও নেটওয়ার্কবিহীন এলাকায় অভিযান চালাতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।

সোমবার (৯ জুন) ‘ট্যুর এক্সপার্ট’ নামের একটি ভ্রমণ গ্রুপ ময়মনসিংহ, ঢাকা ও অন্যান্য স্থান থেকে ৩৩ জন সদস্য নিয়ে বান্দরবানের আলীকদম ভ্রমণে আসে। গ্রুপের নেতৃত্বে ছিলেন এক নারী ট্যুর অপারেটর ‘বর্ষা ইসলাম’। গ্রুপের সহ-সমন্বয়কারী ছিলেন হাসান চৌধুরী, এবং স্থানীয় গাইড ছিলেন সিদ্ধার্থ তঞ্চঙ্গ্যা। তাদের মূল গন্তব্য ছিল আলীকদমের ক্রিসতং পাহাড়, থানচির লিমান লিবলু ও সাকাহাফং চূড়া।

আরও পড়ুন: কক্সবাজারে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ, রোহিঙ্গাসহ শনাক্ত ৫

পর্যটক দলটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যাত্রা করে: একটি দলে ২২ জন, অপর দলে ১১ জন ছিলেন।

বুধবার (১১ জুন) রাতে ২২ জনের দলটি তৈন খাল হয়ে পাহাড়ি পথে রওনা দেয়। পথিমধ্যে শামুক ঝরনার একটি পাহাড়ি ঝিরি পার হওয়ার সময় হঠাৎ প্রবল বর্ষণের ফলে পানির স্রোত বেড়ে যায়। এ সময় স্মৃতি আক্তার, শেখ জুবাইরুল ইসলাম ও মো. হাসান চৌধুরী পানির স্রোতে ভেসে যান।

বৃহস্পতিবার (১২ জুন) ভোরে একই খালপাড়ে, উপজেলা সদর বাজার পাড়ার তাহের মল্লিকের জমির পাশ থেকে প্রথমে উদ্ধার করা হয় শেখ জুবাইরুল ইসলাম (২৫)-এর মরদেহ। তিনি ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা এবং ছিলেন ‘ট্যুর এক্সপার্ট’ দলের একজন সদস্য।

শুক্রবার (১৩ জুন) পর্যন্ত দুইজনের মরদেহ উদ্ধার করা গেলেও এখনও নিখোঁজ রয়েছেন হাসান চৌধুরী, যিনি ছিলেন এই অভিযানের কো-অর্ডিনেটর। স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস যৌথভাবে তল্লাশি অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।

পুলিশ ও উদ্ধারকারী দল জানিয়েছে, দুর্গম পাহাড়ি পরিবেশ, খালপথের অপ্রত্যাশিত জলপ্রবাহ এবং মোবাইল নেটওয়ার্কহীন অবস্থান উদ্ধার কাজকে বিশেষভাবে ব্যাহত করছে। ট্যুর অপারেটরের অব্যবস্থাপনা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলছেন।

এই ট্র্যাজেডি পর্যটন নিরাপত্তা, আবহাওয়ার সতর্কতা ব্যবস্থা এবং ট্যুর অপারেটরের দায়িত্ববোধ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। স্থানীয় প্রশাসন ঘটনার তদন্ত করছে এবং পরবর্তী সময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়