ইরান-ইসরায়েল সংঘাত বিপজ্জনক ও অযৌক্তিক: পুতিন
ফাইল ছবি
মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার সামরিক সংঘাত এক ভয়াবহ মোড় নিয়েছে। দুই দেশের পাল্টাপাল্টি হামলায় বড় ধরনের যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে সতর্ক করেছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।
শুক্রবার (১৩ জুন) রাতে ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পিত এক সামরিক অভিযান শুরু করে। লক্ষ্যবস্তু ছিল ইরানের নিউক্লিয়ার স্থাপনা, সামরিক ঘাঁটি এবং দক্ষিণ পারস গ্যাসক্ষেত্র। এর জবাবে ১৪ জুন শনিবার ভোররাতে ইরান শতাধিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে তেলআবিব ও জেরুজালেমে।
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান এক বিবৃতিতে বলেন, জায়োনিস্ট আগ্রাসন যদি অব্যাহত থাকে, তবে আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনী আরও তীব্র ও শক্ত প্রতিক্রিয়া জানাবে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ শনিবার এক সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকের পর কড়া হুঁশিয়ারি দেন।
তিনি বলেন, ইরান ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া বন্ধ না করলে তেহরান জ্বলতে থাকবে। আমাদের নাগরিকদের ওপর আঘাত এলে ইরানকে চড়া মূল্য দিতে হবে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই সংঘর্ষকে ‘অযৌক্তিক ও বিপজ্জনক’ বলে আখ্যা দিয়ে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
শনিবার (১৪ জুন) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে এক টেলিফোন আলাপে পুতিন বলেন, ইসরায়েলের এই আগ্রাসন সংঘাতকে ভয়ানক মাত্রায় নিয়ে যেতে পারে।
টেলিফোন আলাপটি প্রায় ৫০ মিনিট ধরে চলে এবং বিষয়বস্তু ছিল ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ পরিস্থিতি, পারমাণবিক আলোচনা, এবং রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক। পুতিন আলোচনায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানকে ‘নিন্দনীয়’ বলে উল্লেখ করেন এবং মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা হ্রাসে সতর্কবার্তা দেন।
ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু আলোচনা পুনরায় শুরুর সম্ভাবনার কথাও জানান তিনি।
আরও পড়ুন: যেকোনো স্বার্থ রক্ষায় ইরানের পাশে আছি: পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী
ক্রেমলিনের বৈদেশিক নীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ বলেন, এই আলাপ ছিল “গঠনমূলক ও তাৎপর্যপূর্ণ”।
তিনি আরও জানান, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ একই দিনে ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচির সঙ্গে ফোনে কথা বলেন।
লাভরভ বলেন, মস্কো ইরানের ওপর ইসরায়েলের শক্তি প্রয়োগের নিন্দা জানায় এবং মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা প্রশমনে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এক বিবৃতিতে জানায়, তারা ইরানের পারমাণবিক ইস্যু ঘিরে সমস্যা সমাধানে আগ্রহী। লাভরভ ইরানে ইসরায়েলি হামলায় নিহতদের জন্য শোক প্রকাশ করেন।
শনিবার ডোনাল্ড ট্রাম্প এক বিবৃতিতে জানান, আজ সকালে প্রেসিডেন্ট পুতিন আমাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি ইরান বিষয়েও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছেন—একটি দেশ যা তিনি ভালো করেই চেনেন।
ট্রাম্প বলেন, আমি যেমন মনে করি, তিনিও মনে করেন— ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বন্ধ হওয়া উচিত।
তিনি যোগ করেন, আমি তাকে বলেছি, তার যুদ্ধটিও (ইউক্রেন) শেষ হওয়া দরকার।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই মন্তব্য একটি সমান্তরাল বার্তা বহন করে— যেখানে তিনি যুদ্ধ বিরোধী অবস্থান নিচ্ছেন, তবে রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসনের প্রতি সরাসরি চাপ প্রয়োগ এড়িয়ে যাচ্ছেন।
শনিবার (১৪ জুন) ওমানে অনুষ্ঠেয় ইরান-যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু আলোচনা বাতিল করা হয়েছে। ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাদর আল বুসাইদি এক্স প্ল্যাটফর্মে লেখেন, কূটনীতি ও সংলাপই একমাত্র পথ, তবে রবিবারের বৈঠক আর হচ্ছে না।
এই সংঘর্ষের প্রেক্ষাপটে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধবিমানসহ সামরিক সরঞ্জাম পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, এটি একটি নিরাপত্তা সংকট এবং আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।
এদিকে ভারত সরকার ইরানে অবস্থানরত ভারতীয় নাগরিকদের জন্য বিশেষ জরুরি নম্বর চালু করেছে। পাশাপাশি, ইরান-ইসরায়েল সংঘর্ষ নিয়ে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (SCO) বিবৃতি থেকে নিজেদের বিরত রেখেছে। নয়াদিল্লি জানায়, তারা কূটনীতি ও সংলাপের মাধ্যমেই উত্তেজনা নিরসনের পক্ষপাতী।
বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন, এই সংঘাত এখন আর শুধুই ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং এটি গোটা মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। আন্তর্জাতিক মহল যুদ্ধ বন্ধে চাপ সৃষ্টি করলেও সংঘর্ষ আরও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি
