News Bangladesh

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১১:১৬, ১৫ জুন ২০২৫

সংঘর্ষে রক্তাক্ত মধ্যপ্রাচ্য: ইরানে নিহত ৮০, ইসরায়েলে ৯

সংঘর্ষে রক্তাক্ত মধ্যপ্রাচ্য: ইরানে নিহত ৮০, ইসরায়েলে ৯

ছবি: সংগৃহীত

মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান উত্তেজনা সরাসরি সামরিক সংঘাতে রূপ নিয়েছে। 

শনিবার রাত (১৪ জুন) ও রবিবার (১৫ জুন) ভোরে ইরান দ্বিতীয় দফায় একযোগে ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়। পাল্টা জবাবে ইসরায়েলও হামলা চালিয়েছে তেহরানে অবস্থিত বিভিন্ন সামরিক ও পারমাণবিক অবকাঠামোয়। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত ৯ জন নিহত এবং ১০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। 

দুই পক্ষের সামরিক বিবৃতি, সাংবাদিক প্রতিবেদন এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তথ্যে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

১৪ জুন (শনিবার) রাত ১১টা থেকে শুরু করে ১৫ জুন (রবিবার) সকাল পর্যন্ত ইরান ‘ট্রু প্রমিজ ৩’ নামক সামরিক অভিযানের দ্বিতীয় ধাপে প্রায় ১০০টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন নিক্ষেপ করে ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরের দিকে। লক্ষ্যবস্তু ছিল হাইফা, তেলআবিব, বাত ইয়াম, রামাত গান, রেহেভোত, কিরিয়াত, এবং উত্তরাঞ্চলীয় আরব-ইসরায়েলি বসতিগুলো।

বাত ইয়াম শহরে একটি আবাসিক ভবনে সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতে তিনজন নিহত হন। এমডিএ (ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম) জানায়, নিহতদের একজন ছিলেন প্রায় ৬০ বছর বয়সী নারী। হামলায় আরও ৩০ জন আহত হন, যাদের কয়েকজনের অবস্থা সংকটজনক।

উত্তরাঞ্চলের আরব-ইসরায়েলি শহর—খাতিব পরিবারের পাঁচ সদস্য নিহত হন বলে টাইমস অব ইসরায়েল নিশ্চিত করেছে। শহরটি মূলত ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত নাগরিকদের বসতি, যেখানে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রের অভাব রয়েছে।

রেহেভোত শহরে দুইজন গুরুতর আহত হন, পাশাপাশি তেলআবিব ও রামাত গান শহরে বিভিন্ন অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং বেশ কিছু হতাহতের ঘটনা ঘটে। তবে এই দুই এলাকায় ক্ষয়ক্ষতির নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

হাইফা ও কিরিয়াত শহরে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে, যদিও ক্ষেপণাস্ত্রগুলো লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে নাকি প্রতিহত করা হয়েছে তা স্পষ্ট নয়।

ইসরায়েলি জরুরি সেবা সংস্থা এমডিএর তথ্য অনুযায়ী, সব মিলিয়ে অন্তত ৭ জন ইসরায়েলি নাগরিক নিহত এবং ১০০-এর বেশি আহত হয়েছেন। এর মধ্যে চারজন—দুইজন ৪০ বছর বয়সী নারী, একজন ২০ বছর বয়সী তরুণী এবং একজন ১৩ বছরের কিশোরী—উত্তরাঞ্চলে সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে প্রাণ হারান।

আরও পড়ুন: ইরান-ইসরায়েল সংঘাত বিপজ্জনক ও অযৌক্তিক: পুতিন

ইরান হামলা শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইসরায়েলি বিমান বাহিনী তেহরান ও অন্যান্য শহরে পাল্টা হামলা চালায়। 
ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (IDF) জানায়, তারা ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, ডিফেন্সিভ ইনোভেশন অ্যান্ড রিসার্চ সংস্থা, এবং জ্বালানি ও পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে আঘাত হেনেছে, যেগুলোকে পারমাণবিক অস্ত্র উন্নয়নকেন্দ্র হিসেবে উল্লেখ করেছে।

ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে তেলআবিব আকাশে বিস্ফোরণের সরাসরি দৃশ্য সম্প্রচার করা হয়, যা প্রমাণ করে যে এটি একটি বিস্তৃত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণ ছিল।

ইরানি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (IRGC) এক বিবৃতিতে জানায়, তারা ইসরায়েলের ছোড়া ৩টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, ১০টি ড্রোন ও বহু মাইক্রো UAV শনাক্ত করে ধ্বংস করেছে। একই সঙ্গে তারা সতর্ক করে জানায়—ইসরায়েল হামলা চালিয়ে গেলে ইরানের প্রতিক্রিয়া হবে আরও ভয়াবহ।

ইরানের সরকারি সংবাদমাধ্যম ও আলজাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত দুই দিনে ইসরায়েলি হামলায় ইরানে অন্তত ৮০ জন নিহত এবং ৮০০ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ২০ জন শিশু রয়েছে বলে জানায় ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন।

আরব-ইসরায়েলি ফিলিস্তিনিদের বঞ্চনা ফের সামনে
আলজাজিরা এবং টাইমস অব ইসরায়েল জানায়, যেসব শহরে আরব-ইসরায়েলি ফিলিস্তিনিরা বাস করেন, সেসব অঞ্চলে আশ্রয়কেন্দ্রের অভাব এবং সরকারি অবহেলার কারণে হতাহতের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি। ইসরায়েলের নাগরিক হয়েও তারা সরকারি সেবা ও নিরাপত্তা থেকে দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত। এই হামলার মাধ্যমে ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ বৈষম্য ও অবকাঠামোগত অসাম্য আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

ইসরায়েল প্রথমে নাগরিকদের নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলেও পরে তা প্রত্যাহার করে নেয়।

ইসরায়েলের ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, উপকূলীয় এবং উত্তরাঞ্চলে বহু ভবনে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। উদ্ধার বাহিনী ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া মানুষদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে।

১৫ জুন সকাল পর্যন্ত মধ্য ও উত্তর ইসরায়েলের মানুষদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তবে নিরাপত্তা সতর্কতা বলবৎ রয়েছে।

এই প্রথমবারের মতো ইরান এবং ইসরায়েল সরাসরি সামরিক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে, যেখানে দুই পক্ষই পরস্পরের মূল ভূখণ্ডে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে। আন্তর্জাতিক কূটনীতিক মহল একে মধ্যপ্রাচ্যের জন্য ‘যুদ্ধের সংকেত’ বলে চিহ্নিত করছে।

ইরান হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছে, হামলা অব্যাহত থাকলে পরবর্তী ধাপ আরও বিধ্বংসী হবে। একইসঙ্গে ইসরায়েলও তার প্রতিরক্ষা সক্ষমতা ও প্রতিশোধমূলক নীতি বজায় রাখার ঘোষণা দিয়েছে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়