News Bangladesh

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৪:২৮, ১৫ জুন ২০২৫

বাঁচার জন্য নিরাপদ করিডোর চান ইরানের শীর্ষ নেতারা

বাঁচার জন্য নিরাপদ করিডোর চান ইরানের শীর্ষ নেতারা

ফাইল ছবি

মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক মানচিত্রে আবারও আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে ইসরায়েল-ইরান সংঘাত। বছরের পর বছর ধরে চরম উত্তেজনার মধ্য দিয়ে এগোনো এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রের দ্বন্দ্ব এবার রূপ নিয়েছে সরাসরি যুদ্ধের দিকে। 

ইসরায়েলের সর্বশেষ বিমান ও ড্রোন হামলা শুধু পারমাণবিক স্থাপনাই নয়, ইরানের রাজনৈতিক কাঠামোকেও নড়বড়ে করে তুলেছে।

শুক্রবার (১৩ জুন) ভোররাতে ইসরায়েল ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামে একযোগে একটি ব্যাপক সামরিক অভিযান চালায় ইরানের বিভিন্ন অঞ্চলে। লক্ষ্যবস্তু ছিল তেহরান, ইসফাহান, নাতানজ, ফোর্ডু ও কোম শহরের পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র, সামরিক ঘাঁটি এবং কিছু বেসামরিক স্থাপনা।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF) এবং গোপন সংস্থা মোসাদের সমন্বয়ে পরিচালিত এই হামলায় অন্তত ২০০টি ড্রোন, স্টিলথ জেট ও স্যাটেলাইট নির্ভর গাইডেড মিসাইল।

ইসরায়েলের দাবি অনুযায়ী, হামলার লক্ষ্য ছিল ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ও আইআরজিসি (ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস)-এর প্রধান ঘাঁটিগুলো।

তেহরান, ইসফাহান, কোম ও ইয়াজদ প্রদেশে প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং মোবাইল নেটওয়ার্কে বাধা সৃষ্টি হয়।

ইরানি সরকারি সূত্রের বরাতে জানা গেছে, এই হামলায় অন্তত ২১২ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন—

  • ২০ জন আইআরজিসি কমান্ডার, যার মধ্যে কুদস ফোর্সের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বও রয়েছে;
  • ১২ জন পরমাণুবিজ্ঞানী, যাদের মধ্যে রয়েছেন ড. ফেরেইদুন আব্বাসি, ড. মোহাম্মদ মেহদি তেহরাঞ্চি এবং ড. রেজা দরিয়ানী;
  • সাধারণ বেসামরিক নাগরিক ৭০+ জন, যার মধ্যে শিশু ও নারীও রয়েছে।

ইরান সরকার হামলাকে “আগ্রাসনের চূড়ান্ত প্রকাশ” আখ্যা দিয়ে তাৎক্ষণিক পাল্টা জবাব দেয়।

আরও পড়ুন: সংঘর্ষে রক্তাক্ত মধ্যপ্রাচ্য: ইরানে নিহত ৮০, ইসরায়েলে ৯

হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ইরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ব্যবহার করে তেলআবিব, হাইফা ও আশকেলন লক্ষ্য করে হামলা চালায়। 

ইসরায়েল দাবি করেছে, অধিকাংশ ক্ষেপণাস্ত্র আয়রন ডোম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গুঁড়িয়ে দিয়েছে। তবে হাইফায় ৩ জন সাধারণ নাগরিক নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম।

পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করেছে যখন ‘ইরান ইন্টারন্যাশনাল’ এক লাইভ প্রতিবেদনে জানায়—ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলী খামেনির ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা আলী আসগর হেজাজি দেশত্যাগের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, হেজাজি রাশিয়ার সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় রয়েছেন একটি ‘নিরাপদ করিডোর’ তৈরির বিষয়ে। রাশিয়ার পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে তাকে ও তার পরিবারকে মস্কোতে আশ্রয় দেওয়া হবে।

ইরানের বিভিন্ন গোয়েন্দা সূত্র বলছে, শীর্ষ পর্যায়ের আরও কয়েকজন কর্মকর্তা এরই মধ্যে দেশত্যাগ করেছেন বা প্রক্রিয়াধীন।

এই হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা নতুন করে দানা বাঁধছে।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকে উভয়পক্ষকে সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি হামলায় অংশ না নিলেও ইসরায়েলকে গোয়েন্দা ও প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়েছে বলে নিউইয়র্ক টাইমস ও রয়টার্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

রাশিয়া ও চীন একে "সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন" বলে নিন্দা জানিয়েছে এবং পরিস্থিতি ঠান্ডা করতে কূটনৈতিক হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে।

বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৯৮ ডলার থেকে বেড়ে ১১৩ ডলারে পৌঁছেছে, যা ২০২২ সালের পর সর্বোচ্চ।

ইসরায়েল-ইরান সংঘাত বর্তমানে এক বিপজ্জনক পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। দুই দেশই পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক হামলা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

আন্তর্জাতিক মহলের আশঙ্কা, এই সংঘাত যদি আরও বিস্তৃত হয়, তবে তা গোটা মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে বিস্ফোরক পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে—যার প্রভাব পড়বে বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতিতেও।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়