‘বহু বছর পর উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দেবে মানুষ’

ছবি: সংগৃহীত
অস্ট্রেলিয়ার নবনিযুক্ত হাইকমিশনার সুসান রাইলের সঙ্গে এক সৌজন্য সাক্ষাতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে, দেশের মানুষ বহু বছর পর উৎসবমুখর পরিবেশে স্বাধীনভাবে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবে।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়।
এতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের সম্প্রসারণ, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি, প্রশাসনিক ও সাংবিধানিক সংস্কার, রোহিঙ্গা সংকট এবং ঢাকায় পুনরায় ভিসা কার্যক্রম চালুর মতো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনায় উঠে আসে।
অস্থায়ী সরকারের চলমান সংস্কার কর্মসূচি তুলে ধরে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আমরা অশান্ত একটি সময় পেরিয়ে এখন সাংবিধানিক, বিচারিক ও প্রশাসনিক সংস্কারের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। এগুলোই একটি শক্তিশালী বাংলাদেশের ভিত্তি গড়ে দেবে।
তিনি জানান, সরকার সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে যাতে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের পথ সুগম হয়।
তিনি আরও বলেন, আগামী জুলাই মাসে ঐতিহাসিক জুলাই অভ্যুত্থানের বার্ষিকী উপলক্ষে ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণা করা হবে, যা রূপান্তরের পথে একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে।
জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে ড. ইউনূস উল্লেখ করেন, এই প্রথমবারের মতো বহু বছর পর জনগণ, বিশেষত প্রথমবার ভোটাররা, স্বাধীনভাবে ভোট দেওয়ার বাস্তব সুযোগ পাবে। আমি মনে করি এটি হবে একটি উৎসবমুখর ও আশাব্যঞ্জক মুহূর্ত।
নির্বাচনী প্রক্রিয়া শক্তিশালী করতে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষ থেকে উল্লেখযোগ্য অর্থ সহায়তার ঘোষণা দেন হাইকমিশনার রাইল।
তিনি জানান, অস্ট্রেলিয়া জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) মাধ্যমে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের প্রাতিষ্ঠানিক, কারিগরি ও কার্যক্রমগত সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ২০ লাখ (২ মিলিয়ন) অস্ট্রেলিয়ান ডলার সহায়তা দেবে।
অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার জানান, বর্তমানে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে বার্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ৫ বিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলারে পৌঁছেছে, যা গত পাঁচ বছরে গড় বার্ষিক ১৬.২ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি বলেন, এই বাণিজ্যিক সম্পর্কের উন্নয়ন উভয় দেশের অর্থনীতির জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এই অংশীদারত্ব আরও প্রসারিত করতে চাই।
অস্ট্রেলিয়ায় বর্তমানে ৬৫ হাজারের বেশি বাংলাদেশি বসবাস করছেন এবং সেখানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৪ হাজারের বেশি।
এদের অবদানের কথা উল্লেখ করে রাইল বলেন, অস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ডস প্রোগ্রামের আওতায় তিন হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি অ্যালামনাই একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে, যারা বাংলাদেশের অগ্রগতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছেন।
আরও পড়ুন: বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়লেও দেশে মূল্য বাড়ানোর চিন্তা নেই: ড. সালেহউদ্দিন
এ সময় ড. ইউনূস বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তির সংখ্যা আরও বাড়ানোর অনুরোধ জানান।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বাংলাদেশে অবস্থানরত প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার জন্য মানবিক সহায়তা আরও বাড়ানো জরুরি।
এর জবাবে হাইকমিশনার রাইল জানান, সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া তার প্রধান অংশীদারদের মাধ্যমে অতিরিক্ত ৯.৬ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার মানবিক সহায়তা দিয়েছে।
তিনি আরও জানান, ২০১৭ সাল থেকে রোহিঙ্গা ও আশ্রয়দাতা স্থানীয় জনগণের জন্য অস্ট্রেলিয়ার মোট সহায়তা দাঁড়িয়েছে ৫৫৩.৬ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার।
রাইল বলেন, অস্ট্রেলিয়া রোহিঙ্গা জনগণের নিরাপদ, স্বেচ্ছামূলক, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের পাশে থাকবে, যখন মিয়ানমারে উপযুক্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।
ঢাকায় পুনরায় অস্ট্রেলিয়ার ভিসা প্রসেসিং কার্যক্রম চালু করায় কৃতজ্ঞতা জানান ড. ইউনূস।
তিনি বলেন, এটি বাংলাদেশি শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী ও প্রবাসীদের জন্য বড় সুবিধা এনে দেবে।
সুসান রাইল জানান, এখন থেকে অস্ট্রেলিয়ার ভিসা আবেদন অনলাইনের মাধ্যমে জমা দেওয়া যাবে, যা সময় ও প্রক্রিয়ার দিক থেকে আরও সহজতর হবে।
বাংলাদেশে তার নতুন দায়িত্ব পেয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার রাইল।
তিনি বলেন, আমি এখানে এসে অত্যন্ত আনন্দিত। বহুদিন ধরে আমি বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও গতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশের প্রতি মুগ্ধ। এখন সরাসরি এই অভিজ্ঞতার অংশ হতে পেরে আমি রোমাঞ্চিত।
সাক্ষাতে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব ও এসডিজি সমন্বয়কারী লামিয়া মোরশেদ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় উইংয়ের মহাপরিচালক মোহাম্মদ নূরে আলম।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি