এখনই ইরান ত্যাগ করা সম্ভব না: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

ইরানে চলমান সংঘাতের প্রেক্ষিতে সেখানকার প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জরুরি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ সরকার। 

মঙ্গলবার (১৭ জুন) রাজধানীর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রুহুল আলম সিদ্দিকী এ তথ্য জানান।

ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, ইরান থেকে বাংলাদেশিদের ফেরত আনা আপাতত সম্ভব নয়। 

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ইরানে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের জন্য দেশটি এই মুহূর্তে ত্যাগ করা সম্ভব নয়। তবে যেকোনো সম্ভাব্য বিপদ এড়াতে তেহরান থেকে নিরাপদ দূরত্বে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তিনি জানান, যুদ্ধাবস্থার কারণে সড়ক, আকাশ ও নৌপথে চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত। একই সঙ্গে ব্যাংকিং ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হওয়ায় অর্থ পাঠানোর ক্ষেত্রেও সমস্যা হচ্ছে।

রুহুল আলম সিদ্দিকী বলেন, পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হলে সেখানে থাকা বাংলাদেশিদের কাজ হারানোর শঙ্কা রয়েছে।

ভারপ্রাপ্ত সচিব জানান, বর্তমানে তেহরানে প্রায় ৪০০ বাংলাদেশি অবস্থান করছেন। এর মধ্যে প্রায় ১০০ জন বাংলাদেশি দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এছাড়া দূতাবাসে কর্মরত ৪০ কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সরকারি ব্যয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

তিনি বলেন, তেহরানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সোমবার রাতেই নিরাপদ স্থানে সরে গেছেন। বাকি বাংলাদেশিদের সুরক্ষার দায়িত্ব নিয়েছে দূতাবাস। নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করা প্রবাসীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।

রেডিও তেহরান ভবনে কর্মরত বাংলা বিভাগের ৮ বাংলাদেশি নিরাপদে রয়েছেন বলেও তিনি আশ্বস্ত করেন।

ইসরায়েলের আকস্মিক হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে রুহুল আলম সিদ্দিকী বলেন, ইরানের ওপর সর্বশেষ এই ভয়াবহ হামলা আন্তর্জাতিক নীতিমালার সম্পূর্ণ লঙ্ঘন। এটি জাতিসংঘ সনদের পরিপন্থী। বাংলাদেশ সকল পক্ষকে উত্তেজনা বাড়াতে পারে এমন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাতিসংঘকে সক্রিয় হস্তক্ষেপের অনুরোধ জানানো হয়েছে, যাতে এ যুদ্ধাবস্থা দ্রুত থামে এবং মানবিক বিপর্যয় এড়ানো যায়।

আরও পড়ুন: লিবিয়া থেকে দেশে ফিরেছেন ১৫৮ বাংলাদেশি

১৭ জুন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ইসরায়েলি হামলায় ইরানে এখন পর্যন্ত ২২৪ জন নিহত হয়েছেন। আক্রান্ত হয়েছে তেহরানসহ দেশটির আরও একাধিক শহর। 

গত শুক্রবার (১৩ জুন) ইসরায়েল আকস্মিকভাবে ইরানের বিভিন্ন পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় হামলা চালায়। এতে একাধিক উচ্চপদস্থ ইরানি সামরিক কর্মকর্তা নিহত হন এবং বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়।

ইরান পাল্টা হামলা চালালে ইসরায়েলেও অন্তত ২৪ জন নিহত ও শতাধিক মানুষ আহত হয়। চলমান পাল্টাপাল্টি হামলায় উভয় দেশেই সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে চরম উদ্বেগ ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। হাজার হাজার মানুষ তেহরান ছেড়ে নিরাপদ দূরত্বে চলে যাচ্ছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের নির্ধারিত বৈঠকটি সফরের শেষ মুহূর্তে বাতিল হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব। 

তিনি বলেন, সফরের পূর্বেও বৈঠকটি চূড়ান্ত ছিল। শেষ সময়ে এটি বাতিল হওয়ায় কিছু দায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওপর এলেও সম্পর্কের ওপর প্রভাব পড়েনি।

তিনি আরও জানান, যুক্তরাজ্যে এই সফরকে সরকারি সফর হিসেবে পূর্ণ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে এবং বাংলাদেশের প্রতি ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ সম্মানজনক আচরণ করেছে। 

এ সফরকে আমরা সফল বলেই বিবেচনা করছি, বলেন রুহুল আলম সিদ্দিকী।

সীমান্তে ভারতের পুশইন নিয়ে প্রশ্নের জবাবে ভারপ্রাপ্ত সচিব বলেন, এ ঘটনা নিয়ে নিয়মিতভাবে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। আমরা কনস্যুলেট ডায়লগের প্রস্তাব দিয়ে ভারতকে চিঠি দিয়েছি।

এছাড়া, বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ভারতের সাময়িক আমদানি স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারে ইতিমধ্যেই কূটনৈতিকভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে ঝুঁকিতে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে। তবে জটিল আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির কারণে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নে সময় লাগছে। তেহরানে অবস্থিত দূতাবাস সক্রিয়ভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং প্রতি মুহূর্তে যোগাযোগ রক্ষা করছে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।