News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৬:৫৫, ১৭ জুন ২০২৫

বাংলাদেশি পাইলটের চোখে মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধশুরুর দৃশ্য

বাংলাদেশি পাইলটের চোখে মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধশুরুর দৃশ্য

ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েল-ইরান সাম্প্রতিক সংঘাত যখন ভয়াবহ মোড় নেয়, তখন সেই উত্তপ্ত পরিস্থিতির সরাসরি সাক্ষী হয়ে পড়েন বাংলাদেশি একজন পাইলট—বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ক্যাপ্টেন ইনামুল হক তালুকদার। মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে চলা এক ব্যতিক্রমী ও প্রাণঘাতী মুহূর্তের মধ্য দিয়ে যাত্রা করে তিনি যা দেখেছেন, তা যেন যুদ্ধকালীন সিনেমার বাস্তব সংস্করণ।

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ১৪ জুন, রাত ২টা ১৫ মিনিটে রিয়াদগামী একটি নির্ধারিত ফ্লাইট উড্ডয়ন করে। বিমানটির ককপিটে ছিলেন ফ্লাইট সেফটি বিভাগের প্রধান ক্যাপ্টেন ইনামুল হক তালুকদার এবং তার সহকারী কো-পাইলট রাফসান রিয়াদ। আকাশ পরিষ্কার ছিল, আবহাওয়াও অনুকূল।

বিমানটি ভারত, ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের আকাশসীমা অতিক্রম করে যখন বাহরাইনের আকাশসীমার সন্নিকটে পৌঁছে—স্থানীয় সময় তখন ভোর প্রায় ৫টা—তখনই শুরু হয় ঘটনাপ্রবাহ।

৪০ হাজার ফুট উচ্চতা থেকে পৃথিবীর দৃশ্য সাধারণত চমৎকার মনে হলেও, সেদিন তা মুহূর্তেই বদলে যায়। বিমানটি পারস্য উপসাগরের ওপর দিয়ে উড়ছিল—ডানদিকে ইরান, আর বামে কিছুটা দূরে বাহরাইন। পূর্ব আকাশে সূর্যোদয়ের আভা ফুটে উঠছিল মাত্র।

এমন সময়, ইরানের আকাশে আচমকা দেখা যায় উজ্জ্বল আলোর ঝলকানি। প্রথমে পাইলটেরা ভেবেছিলেন, এটি হয়তো কোনো সামরিক মহড়ার অংশ। কিন্তু কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বাস্তবতা ভিন্ন হয়ে ওঠে— তারা দেখতে পান ডজন ডজন ক্ষেপণাস্ত্র আকাশ চিরে পশ্চিম দিকে ছুটে যাচ্ছে। সম্ভবত এগুলো ছিল দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল, যেগুলো কয়েকশ কিলোমিটার উপরে উঠে লক্ষ্যে আঘাত হানে।

আরও পড়ুন: ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনে ইসরায়েলের হামলা, নিহত ৩

আমার কো-পাইলট স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। আমি নিজের ভেতরেই অনুভব করছিলাম— যদি একটি ক্ষেপণাস্ত্রও পথচ্যুত হয়, তাহলে আমাদের বিমানের কী পরিণতি হতে পারে? সেই চিন্তায় শিরদাঁড়া দিয়ে ঠাণ্ডা স্রোত বয়ে যাচ্ছিল, বলেন ক্যাপ্টেন ইনাম।

তারা দ্রুত ফ্লাইট রুট পর্যালোচনা করে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে গতিপথ পরিবর্তন করেন।

আখেরে, ফ্লাইটটি নিরাপদে রিয়াদে অবতরণ করে। কিন্তু বিমানের ভেতরে থাকা যাত্রীদের কেউই বুঝতে পারেননি তারা কতটা ঝুঁকির মধ্যে দিয়ে পার হয়ে এসেছেন।

মাটিতে নামার পর ক্যাপ্টেন ইনাম যখন মোবাইল ফোন চালু করেন, তখনই আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের শিরোনামগুলো ভেসে ওঠে— “ইসরায়েলের উপর বিশাল ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান”।

সেদিন সকালে আমি কেবল একজন পাইলট ছিলাম না। আমি হয়ে উঠেছিলাম ইতিহাসের এক প্রত্যক্ষদর্শী—স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের কিনারা থেকে আমি প্রত্যক্ষ করেছি এক যুদ্ধের সূচনা, বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের আকাশপথ এখন আর কেবল ট্রানজিট করিডোর নয়। এটি হয়ে উঠছে কৌশলগত দ্বন্দ্ব ও বিপদের এক ঘনিষ্ঠ ক্ষেত্র।

পাইলট ইনামুল হক তালুকদার মনে করেন, এই প্রক্ষেপণ শুধু অস্ত্রের প্রদর্শনী ছিল না— এটি ছিল একটি রাজনৈতিক ও সামরিক বার্তা। আকাশে ঘটে যাওয়া এই মুহূর্তটি ভবিষ্যতের অশনি সংকেত বহন করতে পারে।

তার শেষ কথায় ছিল এক অমোঘ প্রশ্ন— আমরা যে আকাশে উড়ি, তা কি আদৌ আর নিরাপদ?

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়