ইশরাকের শপথের দাবিতে আবার উত্তপ্ত নগর ভবন

ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নবনির্বাচিত মেয়র ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনকে শপথ পড়ানোর দাবিতে ঈদের বিরতির নগর ভবনে ফের অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। এতে অংশ নিয়েছেন বিএনপি নেতাকর্মী, ইশরাকের অনুসারী ও ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে সংগঠিত সিটি করপোরেশনের কয়েকশ’ কর্মচারী।
রবিবার (১৫ জুন) বেলা ১১টার দিকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে নগর ভবনে উপস্থিত হন ইশরাক হোসেন নিজে।
তিনি বলেন, মেয়রের শপথ পড়ানো সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। এখন আর থামার সুযোগ নেই।
তিনি আরও জানান, সরকার যদি ভাবে আন্দোলন এমনিতেই থেমে যাবে, তারা বোকার স্বর্গে বাস করছে। শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক উপায়ে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। তবে নির্বাচন নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ তুলে ফল বাতিল চেয়ে বিএনপি প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন ২০২০ সালের ৩ মার্চ আদালতে মামলা করেন।
দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার পর, ২০২৫ সালের ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল ওই নির্বাচনের ফল বাতিল করে এবং ইশরাক হোসেনকে বৈধ মেয়র ঘোষণা করে। এরপর ২৭ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশ করে তাকে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
তবে ১৪ মে একটি রিটের মাধ্যমে হাইকোর্টে শপথ অনুষ্ঠান স্থগিত রাখার আবেদন করা হয়। সেইসঙ্গে নগর ভবনের সামনে শুরু হয় অবস্থান কর্মসূচি। পরবর্তীতে একাধিক শুনানি শেষে হাইকোর্ট রিটটি খারিজ করে দেয়, ফলে শপথ গ্রহণে আর কোনো আইনি বাধা নেই বলে জানিয়েছেন ইশরাকের অনুসারীরা।
আরও পড়ুন: ড. ইউনূস-তারেক রহমানের বৈঠক দেশে স্বস্তি ফিরিয়ে এনেছে: দুদু
১৪ মে থেকে ৩ জুন পর্যন্ত টানা ২২ দিন নগর ভবনের সামনে অবস্থান করে আন্দোলনকারীরা। এর ফলে ডিএসসিসির নাগরিক সেবা কার্যক্রম কার্যত অচল হয়ে পড়ে। শুধুমাত্র পরিচ্ছন্নতা বিভাগ কিছুটা সচল থাকলেও, অন্যান্য বিভাগে কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতি ও কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দেয়।
জনগণের ভোগান্তি বিবেচনায় ৩ জুন আন্দোলনে সাময়িক বিরতির ঘোষণা দেন ইশরাক হোসেন।
তখন তিনি বলেন, ঈদের জন্য আন্দোলন শিথিল থাকবে, তবে শপথ না হলে ঈদের পর দুর্বার আন্দোলন শুরু হবে।
১৫ জুন ঈদের ছুটি শেষে আবারও নগর ভবনে অবস্থান নেয় আন্দোলনকারীরা। সকাল থেকেই ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে বিএনপি কর্মী, ইশরাক সমর্থক এবং সিটি করপোরেশনের কর্মচারীরা জমায়েত হয়ে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন।
ইশরাক হোসেন ঘোষণা দেন, আন্দোলন বিরতিহীনভাবে চলবে। নাগরিকদের ভোগান্তি যাতে না হয়, সে জন্য আমরা দৈনন্দিন সেবা তত্ত্বাবধান করব। কিন্তু অবস্থান কর্মসূচি থেকে পিছু হটা যাবে না।
আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেন, গেজেট জারির পরও শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান না করানো সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
তারা আরও বলেন, জনগণের দুঃখ-দুর্দশা আমরা চাই না, কিন্তু আমাদের বৈধ অধিকার থেকে কেউ বঞ্চিত করতে পারবে না।
আন্দোলনকারীরা জানাচ্ছেন, ১৮ জুন আরও বড় পরিসরে কর্মসূচি পালন করা হবে। বিএনপির পক্ষ থেকেও এই দিনটিকে কেন্দ্র করে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আন্দোলনের অংশ হিসেবে নগর ভবন অবরোধ, প্রতীকী শপথ অনুষ্ঠান ও মানববন্ধনের মতো কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে।
এদিকে, করপোরেশনের মূল ভবনে সাধারণ প্রবেশাধিকার সীমিত করা হয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে।
ঢাকা দক্ষিণের মেয়র পদ নিয়ে রাজনৈতিক, আইনগত ও প্রশাসনিক টানাপোড়েন এখন চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে। আদালতের নির্দেশনার পরও শপথ অনুষ্ঠান আয়োজন না হওয়ায় আন্দোলন আরও তীব্র হয়ে উঠছে। এখন নজর থাকবে—স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কী সিদ্ধান্ত নেয় এবং বিএনপি নেতৃত্বাধীন এই গণআন্দোলন কোন দিকে মোড় নেয়।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি