News Bangladesh

ফিচার ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৯:২৩, ১৫ জুন ২০২৫

কয়লাখনির বেদনায় গড়া বাবা দিবসের ইতিহাস

কয়লাখনির বেদনায় গড়া বাবা দিবসের ইতিহাস

ফাইল ছবি

আজ ১৫ জুন, ২০২৫—জুন মাসের তৃতীয় রবিবার—বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব বাবা দিবস’। এই দিনে সন্তানের জীবনে বাবার অবদানকে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সঙ্গে স্মরণ করা হয়। বাবা শব্দের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অগাধ ভালোবাসা, নির্ভরতা, এবং দায়িত্বশীলতার প্রতীক হয়ে ওঠা এক অনন্য মানবিক সম্পর্ক।

বিশ্ব বাবা দিবসের ইতিহাসে উঠে আসে এক শোকাবহ ঘটনার কথা, যা যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম ভার্জিনিয়ায় ঘটে। ১৯০৭ সালের ডিসেম্বর মাসে মোনোনগা শহরের একটি কয়লাখনিতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে প্রাণ হারান ৩৬২ জন পুরুষ শ্রমিক, যাদের অধিকাংশই ছিলেন সন্তানের পিতা। প্রায় এক হাজার শিশু এক রাতেই পিতৃহারা হয়ে পড়ে। এই ঘটনা ঘিরেই ১৯০৮ সালের ৫ জুলাই ফেয়ারমন্ট শহরের এক গির্জায় নিহত বাবাদের স্মরণে এক প্রার্থনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। এটিই ইতিহাসে প্রথম কোনো ‘বাবাদের স্মরণে’ জনসম্মিলন।

তবে আধুনিক ‘ফাদারস ডে’ বা বাবা দিবসের প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ওয়াশিংটনের সনোরা স্মার্ট ডড নামের এক নারী। ১৯০৯ সালে মা দিবস পালনের আয়োজন দেখে ডড বিস্মিত হয়ে উপলব্ধি করেন, বাবারাও তো সন্তানদের জন্য সমান ত্যাগ স্বীকার করেন—তাদের জন্যও একটি বিশেষ দিন থাকা উচিত। ডডের নিজের মা ছিলেন না; বাবাই একা হাতে তার সাত ভাইবোনকে বড় করে তোলেন। এই গভীর ভালোবাসা থেকেই ডড ১৯১০ সালে ওয়াশিংটনের স্পোকানে শহরে প্রথমবারের মতো বাবাদের সম্মানে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করেন। সেই বছরের ১৯ জুন পালিত হয় ইতিহাসের প্রথম ফাদারস ডে।

আরও পড়ুন: ৮ মে: বিশ্ব গাধা দিবস, অবহেলিত প্রাণীটি বোকা নয়- পরিশ্রমী

প্রথম দিকে এই দিবসটি শুধু স্থানীয় পর্যায়েই পালিত হলেও ধীরে ধীরে তা ছড়িয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রের এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে। ১৯১৩ সালে মার্কিন কংগ্রেসে এটি ছুটির দিন হিসেবে স্বীকৃতির প্রস্তাব আসে। ১৯২৪ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ক্যালভিন কুলিজ দিবসটির প্রতি আনুষ্ঠানিক সমর্থন দেন। এরপর ১৯৬৬ সালে প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি. জনসন একটি প্রেসিডেনশিয়াল প্রোক্লেমেশন জারি করে জুন মাসের তৃতীয় রবিবারকে জাতীয় বাবা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। শেষমেশ ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন এই দিনটিকে যুক্তরাষ্ট্রের একটি স্থায়ী জাতীয় ছুটি হিসেবে ঘোষণা করেন।

বর্তমানে বিশ্বজুড়ে—বাংলাদেশসহ—বেশিরভাগ দেশেই জুন মাসের তৃতীয় রবিবার বাবা দিবস পালন করা হয়। যদিও কিছু দেশে দিনটি ভিন্ন তারিখে পালিত হয়, তবুও এই দিবসের মূল বার্তা সর্বত্রই এক—বাবাদের প্রতি শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা প্রকাশ।

বাংলাদেশেও বাবা দিবস উপলক্ষ্যে আজ নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা এবং স্মরণ আয়োজন করছে। সন্তানদের প্রতি বাবাদের নিরব, নিঃস্বার্থ ত্যাগ আর ভালোবাসার কৃতজ্ঞতা প্রকাশে এই দিবসটি হয়ে উঠেছে এক গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ। তবে শুধু একদিন নয়—এই ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও স্মৃতির উদযাপন হওয়া উচিত প্রতিদিনের।

বিশ্ব বাবা দিবস কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং তা হৃদয়ের গভীর থেকে উৎসারিত সম্পর্কের বন্ধনকে আরও দৃঢ় করার এক অনন্য প্রয়াস।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়