News Bangladesh

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৬:১৯, ১৭ জুন ২০২৫

ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে ঘি ঢাললেন ট্রাম্প: চীনের অভিযোগ

ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে ঘি ঢাললেন ট্রাম্প: চীনের অভিযোগ

ছবি: সংগৃহীত

মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সামরিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হঠাৎ কিছু মন্তব্যকে ‘সংঘাতে ঘি ঢালা’ হিসেবে কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছে চীন। 

তাদের মতে, এ ধরনের বক্তব্য কেবল পরিস্থিতিকে আরও বিপজ্জনক করে তুলছে। একই সঙ্গে ট্রাম্পের পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে বিশ্বজুড়ে কূটনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিচ্ছে।

২০২৫ সালের জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে ইসরায়েল ইরানের অভ্যন্তরে একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে আকস্মিক বিমান হামলা চালায়। 

ইসরায়েল দাবি করে, এই হামলার উদ্দেশ্য ছিল ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের পথ থেকে বিরত রাখা। 

যদিও তেহরান বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে এবং জানায়, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যেই পরিচালিত হচ্ছে।

এই হামলার জেরে ১৫ জুন তেহরানে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে, যাতে আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। 

ইরানি সংবাদমাধ্যম আইআরএনএ জানায়, ধ্বংসস্তূপ থেকে তিনজনকে জীবিত উদ্ধার করেছে রেড ক্রিসেন্ট।

এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই ১৬ জুন, নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ একটি পোস্টে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘সবাই অবিলম্বে তেহরান ত্যাগ করুন!’। তার এই মন্তব্য আন্তর্জাতিকভাবে প্রচণ্ড প্রতিক্রিয়া তৈরি করে।

পরদিন ১৭ জুন, বেইজিংয়ে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুও জিয়াকুন বলেন, আগুন উসকে দেওয়া, ঘি ঢালা, হুমকি দেওয়া এবং চাপ সৃষ্টি করা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সাহায্য করবে না, বরং সংঘাতকে আরও তীব্র ও বিস্তৃত করে তুলবে।

চীন স্পষ্টভাবে জানায়, মধ্যপ্রাচ্যীয় এই সংঘাতে ‘বিশেষ প্রভাব’ রাখা দেশগুলোর উচিত দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা। বিশেষ করে ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্রদের প্রতি চীন শান্তি স্থাপনের আহ্বান জানায়।

এই একই দিন চীনের তেল আবিবস্থ চীনা দূতাবাস একটি সতর্কবার্তা জারি করে। 

দূতাবাস জানায়, চীনা নাগরিকদের, বিশেষ করে যারা ইসরায়েলে অবস্থান করছেন, তাদের দ্রুত দেশটি ত্যাগ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুন: জরুরি ভিত্তিতে তেহরান খালি করার আহ্বান ট্রাম্পের

তেহরানভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর মিডল ইস্ট স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ-এর জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক আবাস আসলানি বলেন, ইসরায়েলের এসব পদক্ষেপ আসলে ইরানের জনগণের মধ্যে ভয় ও বিভ্রান্তি তৈরি করার কৌশল। 

তার ভাষায়, ইসরায়েল মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ চালাচ্ছে—তারা চায় জনসাধারণ ভীত হয়ে পড়ুক এবং সরকার জবাবদিহি এড়িয়ে যাক। তবে এতে উল্টোভাবে জাতির মধ্যে এক ধরনের ঐক্য ও প্রতিরোধের মানসিকতা গড়ে উঠেছে।

তিনি আরও বলেন, ইরান এখনো পূর্ণ শক্তিতে প্রতিক্রিয়া দেখায়নি কারণ দেশটি এখনো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি জড়িত হওয়ার সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখে কৌশল নির্ধারণ করছে।

উল্লেখযোগ্যভাবে, একই দিন ট্রাম্প কানাডায় চলমান জি৭ সম্মেলন অসমাপ্ত রেখে তড়িঘড়ি ওয়াশিংটনে ফিরে আসেন। 

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ সাংবাদিকদের জানান, ট্রাম্প হয়তো যুদ্ধবিরতির আলোচনায় যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলেই দ্রুত ফিরে যাচ্ছেন।

তবে ১৭ জুন রাতে ট্রাম্প তার ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ পোস্টে মাখোঁর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে বলেন, প্রচারপ্রিয় ফরাসি প্রেসিডেন্ট’ যুদ্ধবিরতির কথা বানিয়ে বলেছেন। আমি যুদ্ধবিরতি নয়, এর চেয়েও বড় কিছু নিয়ে আলোচনা করছি।

অন্যদিকে সিএনএন ও আল জাজিরা জানিয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে শিগগিরই ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষ দূতকে ইরানে পাঠানোর পরিকল্পনা করছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রকাশ্য সতর্কতা ও সোশ্যাল মিডিয়া-ভিত্তিক কূটনীতির ফলে ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে এবং এ অঞ্চলে স্থিতিশীলতা আরও ভেঙে পড়তে পারে। একইসাথে, পারমাণবিক আলোচনার পথ বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এই মুহূর্তে পরিস্থিতি যেমন, তাতে একটি ভুল সিদ্ধান্ত গোটা মধ্যপ্রাচ্যে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের দিকে নিয়ে যেতে পারে—আর তার প্রভাব গোটা বিশ্বেই ছড়িয়ে পড়তে পারে। চীনসহ বিভিন্ন বিশ্বশক্তি তাই এখন আগুনের আগেই পানি ঢালার আহ্বান জানাচ্ছে। তবে হোয়াইট হাউজের অবস্থান—নানা বার্তার ভেতর এখনো অস্পষ্ট।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়