News Bangladesh

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৮:২৯, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিল ফ্রান্স

ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিল ফ্রান্স

ছবি: সংগৃহীত

ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইউরোপের অন্যতম প্রভাবশালী দেশ ফ্রান্স। এর আগে যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও পর্তুগাল একে একে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও ফ্রান্সের এই সিদ্ধান্ত ইউরোপীয় রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। 

বিশ্লেষকদের মতে, পশ্চিমা বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোর এই ধারাবাহিক স্বীকৃতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এক ধরনের ‘টার্নিং পয়েন্ট’ তৈরি করতে যাচ্ছে।

আগামী সপ্তাহে নিউইয়র্কে শুরু হতে যাচ্ছে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশন। ইতোমধ্যে বিশ্ব নেতারা সেখানে জড়ো হচ্ছেন। অধিবেশনের অন্যতম আলোচ্য বিষয় হিসেবে গাজায় চলমান যুদ্ধের অবসান এবং ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের স্থায়ী সমাধানে ‘দ্বি-রাষ্ট্রীয় প্রস্তাব’কে সামনে রেখে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক আয়োজন করা হচ্ছে।

ফরাসি সরকারের উচ্চপর্যায়ের এক কূটনৈতিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, প্যারিস এবারের অধিবেশনে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির বিষয়টি জোরালোভাবে উপস্থাপন করবে। 

সূত্রটি আরও জানায়, মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘদিনের সংঘাত নিরসনে ইউরোপীয় দেশগুলোর এই সিদ্ধান্তকে ‘গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক চাপ’ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাজ্যের স্বীকৃতির পর, প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ হিসেবে পশ্চিম তীরের কিছু অংশ দখলের ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল। তবে এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সরাসরি সতর্কতা উচ্চারণ করেছেন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার। 

তিনি বলেন, এ ধরনের পদক্ষেপ একদিকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করবে, অন্যদিকে শান্তি প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করে তুলবে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই স্বীকৃতিকে তীব্রভাবে সমালোচনা করে বলেন, এটি সন্ত্রাসবাদকে বিশাল পুরস্কার।

আরও পড়ুন: এবার ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিল পর্তুগাল 

তিনি দাবি করেন, এই স্বীকৃতিগুলো হামাস ও অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীকে আরও উসকে দেবে এবং পশ্চিমা দেশগুলোকে কঠোর ভাষায় সমালোচনা করেন।

বিশ্লেষকদের মতে, ইউরোপের আরও কয়েকটি দেশ এখন ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক অবস্থানে রয়েছে। তারা যদি একে একে সেই স্বীকৃতি দেয়, তাহলে ইসরায়েলের ওপর কূটনৈতিক চাপ বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। তবে এই স্বীকৃতি প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্পষ্ট বিভাজনও তৈরি করছে।

যুক্তরাষ্ট্র এখনো দৃঢ়ভাবে বলছে, তারা শুধুমাত্র ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে ‘দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান’ সমর্থন করবে, একতরফা স্বীকৃতিকে নয়। 

অন্যদিকে রাশিয়া, চীন ও বেশিরভাগ আরব দেশ বহু আগেই ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের কিছু দেশ—যেমন জার্মানি ও ইতালি—এখনো সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। ফলে পশ্চিমা ব্লকের মধ্যে নতুন ফাটল দেখা দেওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ফিলিস্তিনি প্রশ্ন আন্তর্জাতিক কূটনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। আজ পর্যন্ত জাতিসংঘের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও যুক্তরাষ্ট্র ও অধিকাংশ পশ্চিমা দেশ এত দিন তা এড়িয়ে এসেছে। এবারের পরিবর্তনকে তাই ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা।

বিশ্বজুড়ে মানবিক সংকট, গাজায় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, পশ্চিম তীরে বসতি সম্প্রসারণ এবং আন্তর্জাতিক জনমতের পরিবর্তন—সব মিলিয়ে ফ্রান্সসহ পশ্চিমা শক্তিগুলোর এই স্বীকৃতি হয়তো আলোচনাকে নতুন মাত্রা দিতে পারে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়