News Bangladesh

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১২:০৫, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আপডেট: ১২:১০, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে পারে যুক্তরাজ্য

ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে পারে যুক্তরাজ্য

ফাইল ছবি

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দিতে পারেন বলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জোরালো প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। 

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও দ্য গার্ডিয়ান এ তথ্য জানিয়েছে।

স্টারমার প্রশাসন গত জুলাই মাসে জানিয়েছিল, ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার আনুষ্ঠানিক পদক্ষেপ সেপ্টেম্বর মাসে নেওয়া হবে। তখন প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করে বলেছিলেন, যদি ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ না হয়, এবং দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের জন্য দীর্ঘমেয়াদি শান্তি চুক্তি না করে, তাহলে যুক্তরাজ্য তাদের অবস্থান পরিবর্তন করবে এবং ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে।

এই পদক্ষেপ মূলত গাজায় মানবিক পরিস্থিতির তীব্র অবনতি ও পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণের আশঙ্কার প্রেক্ষাপটে আসছে। ব্রিটিশ সরকার আশঙ্কা করছে, পশ্চিম তীরে দ্রুতগতির বসতি স্থাপন কার্যক্রম দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের যেকোনও সম্ভাবনা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

যুক্তরাজ্যের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও জাতিসংঘে যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধিত্বকারী ডেভিড ল্যামি বলেছেন, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ পশ্চিম তীরে গুরুতর সম্প্রসারণ, বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা এবং ই১ এলাকায় উন্নয়ন প্রকল্পের মতো পদক্ষেপ দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের সম্ভাবনাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

লেবার পার্টি জানিয়েছে, এই স্বীকৃতিকে হামাসের জন্য পুরস্কার হিসেবে দেখা যাবে না। বরং গাজার ভবিষ্যৎ শাসনে হামাসের কোনো ভূমিকা থাকবে না। একই সঙ্গে যুক্তরাজ্য সরকার সময়মতো হামাসের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরও জোরদার করবে এবং জিম্মিদের মুক্তির দাবিও চালিয়ে যাবে।

তবে, পরিস্থিতি সহজ নয়। ফিলিস্তিনকে ইতোমধ্যে জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ১৪৭টি দেশ স্বীকৃতি দিয়েছে, কিন্তু যুক্তরাজ্যের নির্ধারিত তিনটি শর্ত — যুদ্ধবিরতি, দীর্ঘমেয়াদি শান্তি উদ্যোগ এবং জাতিসংঘকে সাহায্য সরবরাহ পুনরায় শুরু করার অনুমতি — ইসরায়েল পূরণে অনীহা দেখাচ্ছে। ফলে এই শর্তগুলো পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। 

স্টারমার পূর্বে জানিয়েছিলেন, এসব শর্ত পূরণ হলে তিনি স্বীকৃতির পদক্ষেপ থেকে সরে দাঁড়াবেন।

অন্যদিকে, এখনো বন্দি থাকা জিম্মিদের কিছু পরিবারের সদস্যরা খোলা চিঠি লিখে এই ঘোষণার বিরোধিতা করেছেন। 

তারা মনে করেন, জাতিসংঘ অধিবেশনের আগে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিলে জিম্মিদের মুক্তি আরও জটিল হয়ে উঠবে। 

তাদের অভিযোগ, হামাস ইতিমধ্যেই যুক্তরাজ্যের সিদ্ধান্তকে বিজয় হিসেবে প্রচার করছে এবং যুদ্ধবিরতি আলোচনায় অনীহা দেখাচ্ছে। 
পরিবারের আবেদন, আমাদের প্রিয়জনরা বাড়ি ফিরে না আসা পর্যন্ত এই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত নয়।

আরও পড়ুন: ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিচ্ছে পর্তুগাল

বিরোধী দলও স্টারমারের সমালোচনায় নামছে। ছায়া পররাষ্ট্র সচিব প্রীতি প্যাটেল অভিযোগ করেছেন, প্রধানমন্ত্রী আসলে তার ব্যাকবেঞ্চারদের চাপের কাছে ‘আত্মসমর্পণ’ করেছেন।

ডেভিড ল্যামি এ প্রসঙ্গে বলেন, গাজায় যা ঘটছে তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম অগ্রাধিকার জিম্মিদের উদ্ধারের প্রচেষ্টা। হামাসের জন্য কোনো অবস্থান থাকতে পারে না। গাজার মানবিক পরিস্থিতি ভয়াবহ এবং যুক্তরাজ্য ইসরায়েলের ওপর চাপ অব্যাহত রাখবে যাতে অনাহার ও অপুষ্টি মোকাবিলায় যথেষ্ট সাহায্য পৌঁছানো যায়, আরও সাহায্যের রুট খোলা যায় এবং গাজা শহরে অব্যাহত সামরিক হামলা বন্ধ হয়।

এদিকে, গাজার সামরিক অভিযানের তীব্রতাও বাড়ছে। শনিবার রাতভর আক্রমণে কমপক্ষে ১৪ জন নিহত হয়েছে বলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ইসরায়েলের ভেতরে হাজার হাজার মানুষ জিম্মিদের পরিবারের সঙ্গে মিলে বিক্ষোভ করেছেন এবং প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহুর কাছে যুদ্ধ বন্ধের জন্য আলোচনার দাবি জানিয়েছেন।

যুক্তরাজ্যের আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত ও এর আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সময় আরও পরিষ্কার হবে। তবে এখনই স্পষ্ট যে, গাজার মানবিক পরিস্থিতি, পশ্চিম তীরে বসতি সম্প্রসারণের গতি এবং আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক চাপ—সব মিলিয়ে এই ঘোষণার পেছনে বড় ভূমিকা রাখছে।

যুক্তরাজ্যের এই পদক্ষেপকে ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিকভাবে ফ্রান্স, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, পর্তুগাল ও লুক্সেমবার্গ সমর্থন জানিয়েছে। তবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এটিকে ‘সন্ত্রাসকে পুরষ্কৃত করা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়