News Bangladesh

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৯:০০, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আপডেট: ০৯:১৯, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

হেলিকপ্টারের রশি আঁকড়ে প্রাণ বাঁচালেন নেপালের মন্ত্রীরা

হেলিকপ্টারের রশি আঁকড়ে প্রাণ বাঁচালেন নেপালের মন্ত্রীরা

ছবি: সংগৃহীত

নেপালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞাকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া তরুণ প্রজন্মের বিক্ষোভ ভয়াবহ সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। রাজধানী কাঠমান্ডুসহ বিভিন্ন শহরে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং রাজনৈতিক নেতাদের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সহিংসতায় প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি ও প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট ও সংসদ সদস্যদের বাসভবনে হামলা চালায়। এ সময় শীর্ষ পর্যায়ের বহু কর্মকর্তা ও মন্ত্রী পরিবারসহ বাড়িতে আটকা পড়ে যান। পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারের মাধ্যমে তাদের উদ্ধার করতে হয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, অনেক মন্ত্রী ও পরিবারের সদস্যরা প্রাণ বাঁচাতে হেলিকপ্টারের ঝুলন্ত রশি আঁকড়ে ধরছেন। উদ্ধার শেষে তাদের কাঠমান্ডুর একটি হোটেলের ছাদে নামিয়ে দেওয়া হয়। উদ্ধার অভিযানের সময় শহরের আকাশে ঘন কালো ধোঁয়া ভেসে ওঠে।

বিক্ষোভের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনার একটি ছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবা ও তার স্ত্রী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরজু রানা দেউবার ওপর হামলা। 

সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, কাঠমান্ডুর বাসায় দম্পতিকে বিক্ষুব্ধ জনতা মারধর করছে। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় দেউবাকে মাঠের মাঝে অসহায়ভাবে বসে থাকতে দেখা যায়। সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাকে উদ্ধার করে।

অন্য এক ভিডিওতে দেখা যায়, অর্থমন্ত্রী বিষ্ণু পাউডেলকে রাস্তায় ধাওয়া দিয়ে মারধর করছে বিক্ষোভকারীরা। এছাড়া তার বাসভবনেও ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। একইভাবে তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রী পৃথী সুব্বা গুরুঙ্গের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখক ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের গভর্নর বিশ্ব পাউডেলের বাড়িতেও হামলা চালানো হয়।

আরও পড়ুন: আন্দোলন ‘ছিনতাই হয়েছে’, দাবি নেপালের জেন-জি’র

হাজার হাজার বিক্ষোভকারী মঙ্গলবার জেন-জি প্রজন্মের নেতৃত্বে সরকারি কর্মকর্তাদের বাড়িতে হামলা চালানোর পাশাপাশি সংসদ ভবনে আগুন ধরিয়ে দেন। কাঠমান্ডুতে সরকারি-বেসরকারি বহু স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মঙ্গলবারই সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়। 

বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) সেনারা শহরের বিভিন্ন রাস্তায় টহল শুরু করে। একই সঙ্গে সাধারণ মানুষকে প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা তরুণ প্রজন্মের সংগঠনগুলো দাবি করেছে—তাদের মূল লক্ষ্য ছিল জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা ও দুর্নীতি দমন। তাদের অভিযোগ, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে ‘সুবিধাবাদী অনুপ্রবেশকারীরা ছিনতাই করেছে’।

এক বিবৃতিতে তারা জানায়, আমাদের উদ্দেশ্য ছিল না দৈনন্দিন জীবন ব্যাহত করা বা সহিংসতার সুযোগ সৃষ্টি করা। আন্দোলনে অনুপ্রবেশ করেই সহিংসতা ছড়ানো হয়েছে।

অন্যদিকে নেপালের সেনাবাহিনীও অভিযোগ করেছে, বিভিন্ন ব্যক্তি ও নৈরাজ্যবাদী গোষ্ঠী বিক্ষোভে অনুপ্রবেশ করে ব্যক্তিগত ও সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করছে।

আন্দোলনটি প্রথমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদ হিসেবে শুরু হলেও পুলিশ গুলি চালানোর পর সহিংসতায় রূপ নেয়। দু’দিনের বিক্ষোভে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২০ জন। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিক্ষোভের তীব্রতায় প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি পদত্যাগ করেন। এরপর নেপালের প্রেসিডেন্টও পদত্যাগপত্র জমা দেন। তবে তাদের পদত্যাগের পরও সহিংসতা থামেনি। অনেক জায়গায় এখনও বিক্ষোভ চলছে, আগুন জ্বলছে, সেনারা টহল দিচ্ছে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়