ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র চার্লি কার্ককে গুলি করে হত্যা
ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী, ডানপন্থি রাজনৈতিক কর্মী, ভাষ্যকার ও জনপ্রিয় তরুণ বক্তা চার্লি কার্ককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) এ তথ্য জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস ও রয়টার্স।
স্থানীয় সময় বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের ইউটাহ অঙ্গরাজ্যের ইউটাহ ভ্যালি ইউনিভার্সিটিতে আয়োজিত ‘আমেরিকান কামব্যাক ট্যুর’–এর প্রথম অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছিলেন ৩১ বছর বয়সী চার্লি কার্ক। এটি ছিল ১৫-স্টপের একটি ভ্রমণভিত্তিক রাজনৈতিক অনুষ্ঠান, যেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরাসরি প্রশ্নোত্তর ও বিতর্কে অংশ নিতেন তিনি।
হঠাৎ প্রায় ২০০ মিটার দূর থেকে ছোড়া একটি গুলি তার মাথায় (কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ঘাড়ে) আঘাত করে। তিনি মঞ্চে লুটিয়ে পড়েন এবং গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, গুলিটি সম্ভবত পাশের কোনো ভবনের ছাদ থেকে ছোড়া হয়েছিল। এ সময় অনুষ্ঠানে প্রায় তিন হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। গুলির পর মুহূর্তেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং দর্শকরা ছুটোছুটি শুরু করেন।
ঘটনার প্রায় ছয় ঘণ্টা পরও হামলাকারীর পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। ইউটাহর গভর্নর স্পেনসার কক্স এক সংবাদ সম্মেলনে এ হত্যাকাণ্ডকে ‘রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
তিনি জানান, একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছিল, তবে তার পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।
ইউটাহ জননিরাপত্তা বিভাগের কমিশনার বো ম্যাসন বলেন, হামলাকারী এখনও পলাতক রয়েছে।
এদিকে, এফবিআই পরিচালক কাশ প্যাটেল সামাজিক মাধ্যমে জানান, একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, তদন্ত চলছে এবং স্বচ্ছতার স্বার্থে ধাপে ধাপে তথ্য প্রকাশ করা হবে।
চার্লি কার্কের হত্যাকাণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ঘটনাটির নিন্দা জানিয়ে কার্কের জন্য প্রার্থনার আহ্বান জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: এবার সরকারবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল ফ্রান্স
হোয়াইট হাউস থেকে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় ট্রাম্প বলেন, যারা এ হত্যাকাণ্ডে বা অন্য কোনো রাজনৈতিক সহিংসতায় যুক্ত, এমনকি যারা অর্থায়ন বা সহায়তা করছে— তাদেরও খুঁজে বের করা হবে।
ট্রাম্প আরও নির্দেশ দিয়েছেন, কার্কের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে যুক্তরাষ্ট্রের সব সরকারি ভবনে রবিবার পর্যন্ত জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে।
চার্লি কার্ক ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী কনজারভেটিভ যুব আন্দোলনের অন্যতম প্রধান মুখ। তিনি ‘টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএ’ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন, যা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় কনজারভেটিভ যুব সংগঠন হিসেবে পরিচিত। ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রচারে তরুণ ভোটারদের সমর্থন আদায়ে এই সংগঠন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ট্রাম্প নিজেও স্বীকার করেছিলেন, তার দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে কার্কের বড় অবদান ছিল।
তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় অত্যন্ত সক্রিয় ছিলেন, যেখানে তার অনুসারীর সংখ্যা ছিল ৫৩ লাখের বেশি। পাশাপাশি তিনি জনপ্রিয় পডকাস্ট ও রেডিও শো ‘দ্য চার্লি কার্ক শো’ পরিচালনা করতেন এবং ফক্স নিউজে অতিথি উপস্থাপক হিসেবেও নিয়মিত উপস্থিত হতেন।
সাম্প্রতিক সময়ে আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তার বক্তৃতা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। সেখানে তিনি মার্কিন রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষাব্যবস্থা ও অভিবাসন বিষয়ক নানা প্রশ্নের উত্তর দিতেন। তার ভিডিওগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায় এবং তিনি সুবক্তা ও বিচক্ষণ যুবক হিসেবে পরিচিতি পান।
রয়টার্স জানায়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা বেড়েছে। গত বছর ট্রাম্পকে হত্যার চেষ্টা হয়েছিল দুই দফা। শুধু রিপাবলিকান নয়, ডেমোক্র্যাট রাজনীতিকরাও হামলা, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাচেষ্টার শিকার হয়েছেন। চার্লি কার্কের হত্যাকাণ্ড সেই ক্রমবর্ধমান সহিংসতার নতুন সংযোজন হিসেবে দেখা হচ্ছে।
কার্ক নিহত হওয়ার মাত্র কয়েক সেকেন্ড আগে এক দর্শকের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে গণহত্যা প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করছিলেন। আর তখনই তাকে লক্ষ্য করে চালানো হয় গুলি।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








