নেপালে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে সাবেক প্রধান বিচারপতি
ছবি: সংগৃহীত
নেপালে চলমান দুর্নীতিবিরোধী তরুণ আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে দেশটির অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন সুপ্রিম কোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি।
সরকারি দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে তরুণ প্রজন্ম, বিশেষ করে জেন-জি আন্দোলনকারীরা রাজপথে নেমে আসেন। টানা দুই দিনের সহিংস বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পাওদেল তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন এবং তিনি বর্তমানে সেনাবাহিনীর সুরক্ষায় রয়েছেন।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে জেন-জি আন্দোলনকারীরা এক ভার্চুয়াল বৈঠকে অংশ নেন, যেখানে প্রায় পাঁচ হাজার সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে সরাসরি সুশীলা কার্কির সঙ্গে কথা না হলেও পরবর্তী ফোনালাপে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব গ্রহণে সম্মতি দেন।
আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তার সম্মতির পর সেনাপ্রধান অশোক সিগডেলের সঙ্গে আলোচনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংযুক্ত যুবকরা আলোচনায় অংশ নেবেন না। বিকল্প প্রার্থী হিসেবে কাঠমান্ডুর মেয়র বালেন্দ্র শাহ ও সাগর ঢাকালের নাম বিবেচনায় এলেও অধিকাংশ প্রতিনিধি কার্কিকেই সবচেয়ে উপযুক্ত প্রার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দেন।
সুশীলা কার্কি নেপালের ইতিহাসে প্রথম এবং এখনও পর্যন্ত একমাত্র নারী প্রধান বিচারপতি। ২০১৬ সালে তিনি এ পদে নিয়োগ পান। তার বিচারিক ক্যারিয়ারে তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে একাধিক ঐতিহাসিক রায় দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: আন্দোলন ‘ছিনতাই হয়েছে’, দাবি নেপালের জেন-জি’র
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, ক্ষমতাসীন সরকারের মন্ত্রী জয়া প্রকাশ গুপ্তকে দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে কারাগারে পাঠানোর রায়, যা নেপালের ইতিহাসে প্রথম।
এছাড়া শান্তিরক্ষী মিশনে দুর্নীতি, বিতর্কিত নিজগড় ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প এবং নারীদের নাগরিকত্ব অধিকার সংক্রান্ত মামলায় প্রগতিশীল রায় দিয়ে তিনি সংস্কারপন্থী বিচারক হিসেবে পরিচিতি পান।
কার্কি ১৯৭৫ সালে ভারতের বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় (বিএইচইউ) থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ১৯৭৮ সালে নেপালের ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নেন। ১৯৭৯ সালে বীরাটনগরে আইনজীবী হিসেবে তার পেশাজীবনের সূচনা হয়। ২০০৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে পদোন্নতি পান এবং ২০১৬ সালে প্রধান বিচারপতি হন।
দ্য হিমালয়ান টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কার্কি জানান, বিএইচইউ-তে কাটানো সময়ের স্মৃতি এখনও তাকে আবেগাপ্লুত করে। সেখানে তিনি শুধু পড়াশোনা নয়, নাচ শেখার সুযোগও পেয়েছিলেন। যদিও চাকরির প্রস্তাব পেয়েছিলেন, তার লক্ষ্য ছিল ভিন্ন—দেশে ফিরে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা।
২০১৭ সালে দুর্নীতিবিরোধী রায় এবং নির্বাহী ক্ষমতায় হস্তক্ষেপের অভিযোগে ক্ষমতাসীন জোট তার বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে অভিশংসন প্রস্তাব তোলে।
বিশেষ করে পুলিশপ্রধান নিয়োগ সংক্রান্ত বিরোধে তিনি চাপে পড়েন। যদিও এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়, তবে তা তাকে আরও জনপ্রিয় করে তোলে।
বিগত কয়েক বছর ধরে কার্কি বিভিন্ন জনসভায় দুর্নীতিবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন এবং তরুণ প্রজন্মের বিভিন্ন গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন। তার আপসহীন অবস্থান ও ব্যক্তিগত সততার কারণে আজ জেন-জির কাছে তিনি সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য নেতা হয়ে উঠেছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, সুশীলা কার্কির নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার নেপালের দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের প্রতীক হয়ে উঠতে পারে এবং তরুণদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করতে পারে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








