News Bangladesh

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২০:৩৭, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এবার সরকারবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল ফ্রান্স

এবার সরকারবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল ফ্রান্স

ছবি: সংগৃহীত

ফ্রান্সে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা নতুন মাত্রা পেয়েছে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ তার ঘনিষ্ঠ মিত্র ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী সেবাস্তিয়ান লেকর্নুকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পর। 

বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে তিনি দায়িত্ব গ্রহণের দিনেই দেশজুড়ে শুরু হয় ব্যাপক সরকারবিরোধী বিক্ষোভ, যা মুহূর্তেই সহিংস রূপ নেয়।

বামপন্থি দলগুলোর নেতৃত্বে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচলিত ‘ব্লক এভরিথিং’ (সবকিছু অচল করে দাও) কর্মসূচির আওতায় রাজধানী প্যারিসসহ লিওঁ, রেনে এবং অন্যান্য শহরে মহাসড়ক, রেলপথ ও গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভকারীরা। তারা টায়ার ও আবর্জনায় আগুন ধরিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে এবং কিছু এলাকায় যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়।

লো মঁদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্দোলনের পেছনে কোনো আনুষ্ঠানিক নেতৃত্ব নেই। বরং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংঘবদ্ধ হয়ে তরুণরা রাজপথে নেমে এসেছে। তারা কেবল ব্যয় সংকোচন নীতির বিরোধিতা করছে না, বরং শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও সামাজিক বৈষম্যসহ নানা ইস্যুতেও ক্ষোভ প্রকাশ করছে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার দেশজুড়ে প্রায় ৮০ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করে। তবুও সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে বহু শহরে। পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় টিয়ারশেল ব্যবহার করা হয়। পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর রেনে-তে একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয় এবং রেললাইনের বিদ্যুৎ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

আরও পড়ুন: আন্দোলন ‘ছিনতাই হয়েছে’, দাবি নেপালের জেন-জি’র

গ্রেফতারের সংখ্যায় ভিন্নতা দেখা গেছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে।

এপি জানিয়েছে, কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অন্তত ২৫০ জনকে আটক করা হয়েছে।

রয়টার্স সূত্রে সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়েছে বলে উল্লেখ করেছে।

আর লো মঁদ জানায়, বিক্ষোভ শুরুর কিছুক্ষণ পরেই ২০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

লিওঁ শহরের এক তরুণ বিক্ষোভকারী ফ্লোরেন্ট সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ম্যাক্রোঁ তার ঘনিষ্ঠ মিত্রকে প্রধানমন্ত্রী করেছেন, যা জনগণের গালে চপেটাঘাতের শামিল। আমরা ক্লান্ত; আমাদের পরিবর্তন প্রয়োজন।

তাদের দাবি, প্রেসিডেন্ট জনগণের প্রত্যাশা ও দাবি উপেক্ষা করেছেন। সংসদ ভেঙে দেওয়া অথবা একজন বামপন্থী নেতাকে প্রধানমন্ত্রী করা উচিত ছিল।

ফরাসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রেতাইয়ো সাংবাদিকদের বলেন, এই বিক্ষোভ পরিকল্পিত। সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের পরিবেশ তৈরির চেষ্টা চলছে।

তিনি আরও জানান, গ্রেফতার হওয়া অনেকেই ইচ্ছাকৃতভাবে সংঘাতে জড়ানোর জন্য রাস্তায় নেমেছিল। তার অভিযোগ, বামপন্থি রাজনীতিবিদদের একটি অংশ আন্দোলনকারীদের মদদ দিচ্ছে এবং অনলাইনে সমর্থন গড়ে তুলে দেশজুড়ে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে।

গত কয়েক মাস ধরে ফ্রান্সে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে। এর ধারাবাহিকতায় গত সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বাইরু সংসদে আস্থা ভোটে হেরে পদত্যাগ করেন। তিনি সংসদে ৪৪ বিলিয়ন ইউরোর সাশ্রয় পরিকল্পনা পাশ করানোর চেষ্টা করেছিলেন, যার মধ্যে সরকারি ব্যয় স্থগিত ও দুটি সরকারি ছুটি বাতিলের প্রস্তাব ছিল।

এই পরিকল্পনা জনগণের মধ্যে তীব্র অস্বস্তি তৈরি করে। ভোটের আগে বাইরু সংসদে বলেন, সরকারকে নামানো সম্ভব, কিন্তু বাস্তবতাকে মুছে ফেলা সম্ভব নয়। ঋণের বোঝা আরও বাড়বে এবং ব্যয়ও থামবে না।

আস্থা ভোটে হেরে যাওয়ার পরই তিনি পদত্যাগ করেন। এরপর প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সেবাস্তিয়ান লেকর্নুকে প্রধানমন্ত্রী মনোনয়ন দেন। তার দায়িত্ব গ্রহণের দিনেই দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়