News Bangladesh

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৯:৫০, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আন্দোলন ‘ছিনতাই হয়েছে’, দাবি নেপালের জেন-জি’র

আন্দোলন ‘ছিনতাই হয়েছে’, দাবি নেপালের জেন-জি’র

ছবি: সংগৃহীত

কয়েক দশকের মধ্যে নেপালে সবচেয়ে তীব্র অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে রাজধানী কাঠমান্ডু। মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও সহিংসতায় রূপ নেওয়ায় দেশের সেনাবাহিনী সক্রিয়ভাবে রাস্তায় টহল দিয়েছে। পার্লামেন্টসহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনায় পাহারা দেয়া হচ্ছে এবং যেকোনো সহিংস কর্মকাণ্ডে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে সেনা।

বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে সেনাবাহিনী মূলত আইনশৃঙ্খলার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে এবং সন্ধ্যা থেকে পরদিন সকাল ৬টা পর্যন্ত রাজধানীজুড়ে কারফিউ জারি করেছে। 

প্রয়োজনীয় সেবা—অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, স্বাস্থ্যকর্মী ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য—এই বিধিনিষেধের বাইরে থাকবে।

সেনাবাহিনী জানিয়েছে, বিক্ষোভের আড়ালে সরকারি ও বেসরকারি সম্পদের উপর হামলা, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর বা ব্যক্তি ও সম্পত্তি সংক্রান্ত যে কোন অপরাধমূলক কাজ কঠোরভাবে দমন করা হবে। ইতোমধ্যে সহিংসতা ও লুটপাটের অভিযোগে ২৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং ৩১টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। অস্ত্র উদ্ধারের অভিযান এখনও চলমান।

সোমবার থেকে কাঠমান্ডু ও অন্যান্য জেলায় দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে ছাত্র, যুব ও সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম— ফেসবুক, ইউটিউবসহ ২৬টি প্ল্যাটফর্ম বন্ধ থাকায় বিক্ষোভ আরও তীব্র হয়। প্রথমে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ হলেও নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে কমপক্ষে ২০ জন নিহত হওয়ার পর তা সহিংসতায় রূপ নেয়।

বিক্ষোভকারীরা রাজনীতিবিদদের বাড়িঘর, সরকারি ভবন ও সংসদে আগুন ধরিয়ে দেন। 

এ ঘটনায় সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত কমপক্ষে ২৯ জন নিহত হয়েছেন। পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

তবে বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেয়া জেন-জি গোষ্ঠীগুলো এই ধ্বংসযজ্ঞ থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিয়েছে। 

তাদের দাবি, ‘সুযোগসন্ধানীরা’ তাদের আন্দোলন ‘হাইজ্যাক’ করেছে।

সেনাবাহিনী রাজধানী কাঠমান্ডুর রাস্তায় টহল জোরদার করেছে। সামরিক চেকপয়েন্টে কর্মকর্তারা যানবাহনের পরিচয়পত্র পরীক্ষা করছেন এবং লাউডস্পিকার ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ঘরে থাকার আহ্বান জানানো হচ্ছে।

আরও পড়ুন: নেপালে কারফিউ ও চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি

সেনাবাহিনীর মুখপাত্র রাজারাম বাসনেট জানান, আমরা মূলত তাদের নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছি যারা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও বিভিন্ন অপরাধমূলক ঘটনা ঘটাচ্ছে।

সেনাবাহিনীসহ নিরাপত্তা বাহিনী কারফিউ কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের পাশাপাশি সহিংসতার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির হুঁশিয়ারি দিয়েছে।

বিক্ষোভের প্রভাবে কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দর বুধবার পুনরায় চালু করা হয়েছে। রাজধানী তুলনামূলকভাবে শান্ত ছিলো, কারণ বেশিরভাগ বাসিন্দা কারফিউ মেনে চলেছেন। তবে আগুনে পুড়তে থাকা ভবন থেকে এখনও ধোঁয়া উঠছিল।

রাস্তায় কিছু তরুণ স্বেচ্ছাসেবক জঞ্জাল পরিষ্কারে নেমেছেন। 

এদের মধ্যে ১৪ বছর বয়সী কেসাং লামা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নেপালে দুর্নীতি চলে আসছে। দেশের পরিবর্তন করার জন্য এটাই সেরা সময়। আমি সত্যিই আশা করছি যে এই বিক্ষোভ কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসবে।

২৪ বছর বয়সী পরশ প্রতাপ হামাল, যিনি মঙ্গলবারের বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন, বলেন, আমরা এখন রাস্তায় জঞ্জাল পরিষ্কার করছি। কারণ বিক্ষোভে প্রচুর দূষণ সৃষ্টি হয়েছে।

পূর্ব নেপালে বসবাসকারী ৩৬ বছর বয়সী রাকেশ নিরাউলা বলেন, এই বিপ্লবের পর মানুষ আশাবাদী। আরও ভালো শাসনব্যবস্থা আশা করা যাচ্ছে। এটি নেতাদের জন্য একটি শিক্ষা, যাতে তারা দেশের জন্য উন্নতি আনতে পারে।

ললিতপুরের উদ্যোক্তা প্রভাত পৌডেল বলেন, সুপ্রীম কোর্টের মতো সরকারি ভবন পুড়ে যাওয়ায় আমি হতবাক। আমাদের জাতীয় সম্পদ রক্ষা করা উচিত ছিল।

সামরিক বাহিনীর আহ্বান অনুযায়ী বিক্ষোভকারীরা শান্তিপূর্ণ আলোচনায় যোগ দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ছাত্রনেতারা দেশের শাসন ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক বন্দোবস্ত পরিবর্তনের জন্য দাবিমালা প্রস্তুত করছেন। 
তারা নিশ্চিত করেছেন, বুধবার থেকে আর কোনো বিক্ষোভের সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়নি এবং প্রয়োজনে সেনাবাহিনী ও পুলিশকে কারফিউ বাস্তবায়নে সহায়তা করবে।

বিক্ষোভকারীদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমাদের আন্দোলন অহিংস ছিল এবং এখনও আছে। এটি শান্তিপূর্ণ নাগরিক অংশগ্রহণের নীতির ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা দায়িত্বশীলভাবে পরিস্থিতি পরিচালনা, নাগরিকদের সুরক্ষা ও সরকারি সম্পত্তি রক্ষায় মাঠে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে সক্রিয় আছি।

সেনাবাহিনী জানিয়েছে, বিক্ষোভে বিভিন্ন ‘ব্যক্তি ও অরাজক গোষ্ঠী’ অনুপ্রবেশ করে সরকারি-বেসরকারি সম্পদের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছে। কাঠমান্ডুর বিভিন্ন এলাকায় সামরিক চেকপয়েন্ট বসানো হয়েছে।

পশ্চিম নেপালের বাঙ্কেতে একটি কিশোর সংশোধনাগার থেকে পালানোর সময় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ৫ অল্প বয়সী কয়েদি নিহত হয়েছে। নিহতদের বয়স ১৮ বছরের নিচে।

সামরিক মুখপাত্র বলেন, যারা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও অপরাধমূলক ঘটনা ঘটাচ্ছে, তাদের নিয়ন্ত্রণে আনা আমাদের মূল কাজ।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়