বিপৎসীমার ওপরে শেরপুরের চেল্লাখালীর পানি
ছবি: সংগৃহীত
ভারতের মেঘালয় ও আসামে টানা ভারী বর্ষণ এবং শেরপুর জেলায় গত কয়েক দিনের থেমে থেমে বৃষ্টিপাতের ফলে জেলার নদ-নদীগুলোর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে করে জেলার সীমান্তবর্তী এবং নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
মঙ্গলবার (২০ মে) সকাল ১০টায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, শেরপুরের চেল্লাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ১০৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সোমবার (১৯ মে) রাত ১০টায় এই পানির উচ্চতা ছিল ৩৯ সেন্টিমিটার ওপর, যা রাতেই কিছুটা কমলেও ভোর থেকে মুষলধারে বৃষ্টি এবং উজানে অতিবৃষ্টির ফলে পানি পুনরায় দ্রুত বেড়ে যায়।
এদিকে সোমেশ্বরী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নির্মাণাধীন চাপাতলী সেতুর পাশের নিম্নাঞ্চলে প্রবেশ করেছে, ফলে আশপাশের কয়েকটি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলার ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী, শ্রীবরদী, শেরপুর সদর ও নকলা উপজেলার নিম্নাঞ্চলগুলোতে পাহাড়ি ঢলের পানি ঢুকে পড়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের মঙ্গলবার সকাল ৯টার পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ভোগাই নদীর পানি নকুগাঁও পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৭৯ সেন্টিমিটার নিচে, নালিতাবাড়ী পয়েন্টে ২৫৭ সেন্টিমিটার নিচে এবং পুরাতন ব্রহ্মপুত্র পয়েন্টে ৬৮৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলা প্রশাসন জানায়, পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তবে যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: মোহাম্মদপুরে পাটালি গ্রুপের শাহিনসহ গ্রেফতার ৪৪
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, স্বেচ্ছাসেবী দল প্রস্তুত রাখা হয়েছে, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে মাইকিং করে জনগণকে সতর্ক করা হচ্ছে। প্রয়োজনে আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেওয়া হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আখিনুজ্জামান জানান, গত বছরের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে দ্রুত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পানি আরও বাড়লে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, জেলায় ইতোমধ্যে প্রায় ৯৪ শতাংশ পাকা ধান কাটা শেষ হয়েছে। তবে হঠাৎ পানিবৃদ্ধির ফলে সোমেশ্বরী নদীর তীরবর্তী এলাকার প্রায় ৫ একর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অবশিষ্ট ধান দ্রুত কেটে উঁচু স্থানে সরিয়ে নিতে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর থেকে জারি করা সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, ২০ মে পর্যন্ত জেলার নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হতে পারে। এতে জনজীবন ও কৃষি খাতে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। ঝিনাইগাতী উপজেলার দিঘিরপাড় ফাজিল মাদরাসা সংলগ্ন বাঁধ ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, গত বছরের স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার ক্ষতি তারা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেননি। পুনরায় এমন দুর্যোগের আশঙ্কায় তারা গভীর উদ্বেগে রয়েছেন।
সংগঠিত প্রস্তুতি ও সচেতনতা সত্ত্বেও, উজানে বর্ষণ অব্যাহত থাকলে শেরপুরে বন্যা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকেও সতর্ক অবস্থানে রাখা হয়েছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








