অবরোধে অচল ঢাকার দুই মোড়, ভোগান্তিতে নগরবাসী
ছবি: সংগৃহীত
সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে রাজধানীজুড়ে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ যানজট ও জনদুর্ভোগ। কাকরাইল ও গুলিস্তান—এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় আন্দোলনকারীদের অবরোধে পুরো শহরের রাস্তায় নেমেছে স্থবিরতা। সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে থমকে যায় স্বাভাবিক যানচলাচল। পায়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছানো ছাড়া যেন আর কোনো উপায় ছিল না নগরবাসীর।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) সকালে সচিবালয় মেট্রো স্টেশনে নামার পর রিকশা করে অফিসে যাচ্ছিলেন আমিনুল ইসলাম, যিনি একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন। সিদ্দিকবাজারে পৌঁছেই তার যাত্রা বাধাপ্রাপ্ত হয়। দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সামনের রাস্তায় চলছিল রাজনৈতিক দাবিতে অবরোধ। আধা ঘণ্টা অপেক্ষার পর যখন কোনো সমাধান মিলল না, তখন বাধ্য হয়ে হেঁটেই গন্তব্যে রওনা হন তিনি।
আমিনুল বলেন, এই শহর বসবাসের অনুপযোগী হয়ে গেছে। সপ্তাহে অন্তত তিন থেকে চার দিন এমন ভোগান্তি পোহাতে হয়।
একই দুর্ভোগের শিকার হন গণমাধ্যমকর্মী আলী তালুকদারও। ফায়ার সার্ভিসের প্রশিক্ষণে অংশ নিতে মগবাজার থেকে গুলিস্তানে যাচ্ছিলেন তিনি। বাসে রওনা দিয়ে কাকরাইলে পৌঁছেই থেমে যেতে হয়। সড়ক অবরুদ্ধ থাকায় হেঁটে সেগুনবাগিচা, তারপর প্রেস ক্লাব হয়ে রিকশায় রওনা দেন গন্তব্যের দিকে। কিন্তু সিদ্দিকবাজারে এসে আবারও দেখতে পান, গুলিস্তানের দিকের রাস্তাও বন্ধ। আবারও তাকে রিকশা ছেড়ে হেঁটে চলতে হয়।
কাকরাইল মোড়ে অবস্থান নিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা তিন দফা দাবি জানিয়ে আন্দোলনে নেমেছেন। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি চালু, পূর্ণাঙ্গ বাজেট অনুমোদন এবং দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের প্রকল্প একনেকে অনুমোদন। এই দাবিগুলো নিয়ে বুধবার রাত থেকেই তারা অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছেন। বৃহস্পতিবার সকালেও সেই অবস্থান অব্যাহত থাকায় পুরো কাকরাইল সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
আরও পড়ুন: অনড় অবস্থানে জবি শিক্ষার্থীরা
অন্যদিকে, গুলিস্তানে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) কার্যালয়ের সামনে দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে অবরোধ কর্মসূচি। আন্দোলনকারীরা দাবি করছেন, ইশরাক হোসেনকে মেয়র পদে বসাতে হবে। এই দাবিতে তারা সড়ক দখল করে রেখেছেন, যার ফলে গুলিস্তান মাজার গেট থেকে বঙ্গবাজার পর্যন্ত দু’পাশের সড়কই অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। ফলে মতিঝিল, সিদ্দিকবাজার, পল্টন ও আশপাশের এলাকায় ভয়াবহ যানজট তৈরি হয়।
সকাল ৯টার দিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, আগারগাঁও, মহাখালী, বিজয় সরণি, তেজগাঁও, মগবাজার, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, মালিবাগ, মতিঝিলসহ অধিকাংশ এলাকায় গাড়ির দীর্ঘ সারি তৈরি হয়েছে। অনেক জায়গায় যাত্রীরা বাস ছেড়ে হেঁটে গন্তব্যে যাচ্ছেন। গুগল ম্যাপে কোথাও লাল চিহ্ন, কোথাও পুরোপুরি রুট বন্ধ দেখাচ্ছে।
ট্রাফিক রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার এমনিতেই রাস্তায় চাপ বেশি থাকে। আজ তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দুটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে আন্দোলন ও অবরোধ। এর প্রভাব পড়ে পুরো শহরের রাস্তায়।
তিনি জানান, যানচলাচল স্বাভাবিক রাখতে ডাইভারশন চালু করা হয়েছে এবং বিকল্প রাস্তায় গাড়ি চালানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। মতিঝিল বা গুলিস্তানগামী যাত্রীদের নিউমার্কেট-নীলক্ষেত রুট ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। বাংলামোটর-হেয়ার রোড থেকেও ডাইভারশন দেওয়া হচ্ছে।
তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, কাকরাইল ও গুলিস্তানের অবরোধের কারণে তেজগাঁওয়ের সড়কগুলোতেও অতিরিক্ত চাপ পড়েছে। যানজট সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশকে। প্রতিটি মোড়ে বাড়ানো হয়েছে পুলিশ সদস্যদের সংখ্যা, তবে পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সামনে থেকে জানা যায়, আন্দোলনকারীদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুরোধেও তারা রাস্তা ছাড়তে রাজি হচ্ছেন না। ফলে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান ফটক থেকে বঙ্গবাজারমুখী পুরো সড়কই কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








