News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৮:২২, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সমুদ্রের বুকে অপরিমেয় সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত ‘মিডা’

সমুদ্রের বুকে অপরিমেয় সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত ‘মিডা’

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশকে আঞ্চলিক বাণিজ্য ও শিল্পের নতুন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করেছে ‘মহেশখালী–মাতারবাড়ী সমন্বিত উন্নয়ন উদ্যোগ (মিডা)’ নামে নতুন প্রতিষ্ঠান।

বুধবার (০৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ উদ্যোগের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়। 

এতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী সভাপতি আশিক চৌধুরী, যিনি নতুন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েছেন। এছাড়া কমোডর তানজিম ফারুক এবং সারওয়ার আলমকে সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

বিডা চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী জানান, মাতারবাড়ী ও মহেশখালীকে বেছে নেওয়া হয়েছে প্রাকৃতিক গভীর সমুদ্রবন্দরের সুযোগ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি অবকাঠামো, উৎপাদন-শিল্পের সম্ভাবনা এবং পর্যাপ্ত জমির সুবিধা একত্রে ব্যবহারের জন্য। এর মাধ্যমে একটি সমন্বিত অর্থনৈতিক হাব গড়ে তোলাই সরকারের মূল লক্ষ্য।

জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, আগামী দুই থেকে তিন দশকে এ অঞ্চলে ৬০ থেকে ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ হতে পারে। এর মধ্যে প্রায় ৪৭ থেকে ৪৮ বিলিয়ন ডলার আসবে বেসরকারি খাত থেকে, যার উল্লেখযোগ্য অংশ প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই)।

আরও পড়ুন: সমুদ্রই হবে বিশ্বের পথে আমাদের মহাসড়ক: প্রধান উপদেষ্টা

জাইকার পূর্বাভাস অনুযায়ী, প্রকল্পটির ফলে বাংলাদেশের জিডিপিতে অতিরিক্ত ১৫০ বিলিয়ন ডলার যোগ হতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে দেড় লাখ প্রত্যক্ষ ও প্রায় ২৫ লাখ পরোক্ষ কর্মসংস্থান তৈরি হবে।

চারটি খাতকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে মিডা-র উন্নয়ন কাঠামো—

গভীর সমুদ্রবন্দর ও লজিস্টিকস: মাতারবাড়ীর প্রাকৃতিক গভীরতা (১৮.৫ মিটার) বড় জাহাজ ভিড়তে সহায়ক। ধারণা করা হচ্ছে, এটি দেশের মোট বাল্ক ট্রাফিকের প্রায় ২৫ শতাংশ এবং কনটেইনার ট্রাফিকের ৪৫ শতাংশ সামলাতে সক্ষম হবে। এতে পরিবহন ব্যয় কমবে, যা দৈনন্দিন পণ্যের দামে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

উৎপাদন–শিল্প: বন্দরের সরবরাহ সুবিধা কাজে লাগিয়ে ইস্পাত, কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, অটোমোবাইল, ইলেকট্রনিকসসহ অন্তত নয়টি শিল্প খাত গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে।

জ্বালানি ও বিদ্যুৎ: মাতারবাড়ী–মহেশখালী অঞ্চলকে জ্বালানি আমদানির প্রধান কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে। প্রস্তাবিত অবকাঠামো এলএনজি ও এলপিজি আমদানির বড় অংশ মেটাতে সক্ষম হবে।

মৎস্য আহরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ: বঙ্গোপসাগরের গভীর সমুদ্রে মাছ ধরা ও প্রক্রিয়াজাতকরণে নতুন দিগন্ত খুলবে। ইতোমধ্যে ২৮টি লংলাইনার ফিশিং ভেসেল তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

আশিক চৌধুরী জানান, মিডার দীর্ঘমেয়াদি ভিশন তিন ধাপে বাস্তবায়িত হবে—ইনকিউবেশন, এক্সপ্যানশন ও ডাইভারসিফিকেশন। চলতি বছরের শেষ প্রান্তিকে ১২০ দিনের কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে সূচনা হবে। একই সঙ্গে ১০টিরও বেশি সংস্থা ও মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন প্রক্রিয়া চলছে।

সরকার আশা করছে, মিডা বাস্তবায়িত হলে কক্সবাজারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠবে একটি টেকসই অর্থনৈতিক অঞ্চল। এটি শুধু বাণিজ্য নয়, বরং পর্যটন, কর্মসংস্থান ও বৈদেশিক বিনিয়োগেও নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়