পিআর ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ষড়যন্ত্র’: রিজভী
ছবি: সংগৃহীত
প্রস্তাবিত প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (পিআর) ভোটিং পদ্ধতি দেশের গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ বলে সতর্ক করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে একে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করেন তিনি।
রিজভী বলেন, বিএনপি গণতন্ত্রের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে। গণতন্ত্র মানে ভিন্নমতকে সহ্য করা এবং তা প্রকাশের সুযোগ দেওয়া। দেশের সব রাজনৈতিক দল ও জোট তাদের নিজস্ব মত, দাবি-দাওয়া ও কর্মসূচি প্রকাশের অধিকার রাখে। কিন্তু হঠাৎ করে পিআর পদ্ধতিকে সামনে এনে এটিকে ছাড়া নির্বাচন সম্ভব নয়—এমন অবস্থান নেওয়া উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং গণতন্ত্রকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা।
রিজভী আরও বলেন, দেশের সাধারণ মানুষ পিআর পদ্ধতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নয়। এটি জনগণের চেনা রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও অভ্যস্ত ভোটাধিকার প্রয়োগের প্রথার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। মানুষ চায় পরিচিত, এলাকার প্রার্থীকে ভোট দিতে; অপরিচিত, দলীয় তালিকা-ভিত্তিক ভোটিং তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
তিনি বলেন, যখনই কোনো দল মনে করে একটি পদ্ধতি তাদের রাজনৈতিক সুবিধা দেবে, তখন সেটিকেই জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয়। এটি রাজনৈতিক ঈর্ষা ও স্বার্থান্বেষী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। পিআর পদ্ধতিকে সামনে আনার পেছনে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র আছে। উদ্দেশ্য হলো, নির্বাচন বানচাল করা।
রিজভী আন্তর্জাতিক উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন, ইসরায়েল, নেপালসহ অনেক দেশে পিআর পদ্ধতির কারণে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়েছে। এমনকি ফ্রান্সের মতো উন্নত দেশেও এই পদ্ধতি নিয়ে নতুন করে ভাবা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: দুর্গাপূজায় চক্রান্ত-নাশকতা ঠেকাতে নেতাকর্মীদের সতর্ক করলেন ফখরুল
তিনি সতর্ক করে বলেন, বাংলাদেশের মতো অপরিণত গণতন্ত্রে এই পদ্ধতি ধ্বংসাত্মক হতে পারে। তিনি ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)-এর পরীক্ষামূলক প্রয়োগের উল্লেখ করে বলেন, যেমন সেখানে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে, তেমনভাবে পিআর পদ্ধতির পরীক্ষামূলক প্রয়োগও বিপজ্জনক হতে পারে।
রিজভী বলেন, বিএনপি ১৬–১৭ বছর ধরে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করে আসছে। দলটি ভবিষ্যতেও নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির পথেই থাকবে।
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, যদি পিআর পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে অচলাবস্থা তৈরি হয় বা এটিকে ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্নে’ নিয়ে যাওয়া হয়, তাহলে তা কেবল সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার রাজনৈতিক লাভের পথ প্রশস্ত করবে এবং দেশে পুনরায় ভয়াল অরাজকতার পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে।
তিনি সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, পিআর পদ্ধতি নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো না করে বাস্তবসম্মত ও জনগণকেন্দ্রিক নির্বাচন ব্যবস্থা গঠনে মনোযোগ দেওয়া উচিত। বিএনপি মনে করে, নির্বাচন হতে হবে এমন একটি ব্যবস্থায় যা জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটায় এবং যার প্রতি মানুষের বিশ্বাস আছে।
রিজভী আরও বলেন, আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি (পিআর) কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের সুদূরপ্রসারী চক্রান্ত। এই পদ্ধতি আবার ফ্যাসিবাদ ফিরে আসার পথ সুগম করতে পারে। গত ১৬ বছরে কোনো রাজনৈতিক দল এই পদ্ধতির দাবি জানায়নি; তাই হঠাৎ করে এই দাবি ওঠা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে হচ্ছে।
এই সময় বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, সহ-দফতর সম্পাদক মুনির হোসেন, এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি ডা. জাহেদুল কবির জাহিদ উপস্থিত ছিলেন।
রিজভী সব রাজনৈতিক শক্তিকে আহ্বান জানান, জাতীয় স্বার্থে গঠনমূলক সংলাপ ও সমঝোতার পথে হাঁটুন এবং বিভ্রান্তি সৃষ্টি না করে গণতান্ত্রিক ও জনগণকেন্দ্রিক নির্বাচনের জন্য কাজ করুন।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








