News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৫:৫৮, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

দেশে সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান ঘটছে: গয়েশ্বর

দেশে সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান ঘটছে: গয়েশ্বর

ছবি: সংগৃহীত

দেশে সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান ঘটছে বলে উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ফ্যাসিবাদ বিদায় হলেও এখন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ থেকে সাম্প্রদায়িক উগ্র উন্মাদনা সৃষ্টি হচ্ছে, যা ফ্যাসিবাদের চেয়ে দ্বিগুণ কঠিন ও জনবিরোধী।

শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ হলে হিউম্যান রিসার্চ অ্যান্ড এনালাইসিস ফাউন্ডেশন (হিউরাফ) আয়োজিত ‘জুলাই বিপ্লব এবং আগামীর গণতন্ত্র ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। 

সভার সভাপতিত্ব করেন হিউরাফ আহ্বায়ক আহমেদ হুসেইন। উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আব্দুস সালাম আজাদ, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফাত আলী সফু প্রমুখ।

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, মৌলবাদীরা বেহেস্তের টিকেট বিক্রি করছে। তাদের সঙ্গে থাকলে বেহেস্তে যাবেন, না থাকলে দোজখে যাবেন। অথচ তারা নিজেরাই জানে না তারা বেহেস্তে যাবে কি না। দেশে এখন এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, যেখানে সাম্প্রদায়িক শক্তি সমাজকে উন্মাদনার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এই আধুনিক বিশ্বে মুক্তচিন্তা, প্রতিভার বিকাশ তারা হতে দেবে না।

তিনি আরও বলেন, আমরা ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্তি পেয়েছি, কিন্তু গণতন্ত্রের পথে রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে রাখতে না পারলে সাম্প্রদায়িকতা ফ্যাসিবাদের চেয়ে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদ ও মৌলবাদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে চাইলে জনগণের জন্য রাজনীতি করুন। এমপি-মন্ত্রী হওয়ার জন্য পাগল হবেন না। যদি নিঃস্বার্থভাবে গণতন্ত্র উপহার দিতে চান, তাহলে আগে নিজেদের স্বার্থ ত্যাগ করুন। তখন সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে পারবেন।

তিনি আত্মসমালোচনার সুরে বলেন, আমরা রাজনীতি করি এমপি-মন্ত্রী হওয়ার জন্য। এমপি-মন্ত্রী হলে সালাম পাবো, বাড়ি হবে, গাড়ি হবে। এই মানসিকতা পরিবর্তন করতে না পারলে জনগণ আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকবে না।

আরও পড়ুন: আ. লীগের সঙ্গে আঁতাত করেছে জামায়াত: দুলু

জুলাই বিপ্লব প্রসঙ্গে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমাদের অবস্থা হচ্ছে মুসল্লির চেয়ে ইমাম বেশি। জুলাই বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা একেক জনের কাছে একেক রকম। ৫ আগস্টের পর থেকে এই আকাঙ্ক্ষা ভিন্ন ভিন্ন রূপ নিয়েছে। একসঙ্গে আন্দোলন, জেল খাটা—সবই করেছি। এখন আবার ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য আমরা এক সুরে কথা বলতে পারি না।

বিএনপিকে ভারতের দালাল বলা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন করেছেন, তারা নতুন করে বৈষম্য সৃষ্টি করছেন। তাহলে আমরা কী স্বপ্ন দেখলাম? আমরা কোন পথে এগোচ্ছি?

গয়েশ্বর বলেন, ধর্মের সঙ্গে রাষ্ট্র ব্যবস্থার কোনো সাংঘর্ষিক ব্যাপার নেই, আছে অপব্যাখ্যা। ধর্ম আসলে মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত করার জীবনব্যবস্থা। ধর্মে যা পাপ, আধুনিক রাষ্ট্রের আইনেও তাই অন্যায়। কিন্তু এখন অনেক দল ট্রাভেল এজেন্সির মতো বেহেস্তের টিকেট বিক্রি করছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ প্রসঙ্গে গয়েশ্বর বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ নির্ধারিত ৯০ দিন। কিন্তু বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ অনন্তকাল। যতদিন থাকবে, ততদিন বৈধ। তাহলে সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন দিতে তাদের সময় হয় না কেন? তত্ত্বাবধায়ক সরকার ৯০ দিনে নির্বাচন করতে পারে, তাদের দুই বছর লাগে কেন?

তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্কারের গান গাইতে গাইতে অনেক কুসংস্কার তৈরি করছে। বিদেশ থেকে বুদ্ধিমান লোক আনা হয়েছে, আর এত বুদ্ধিমান একসঙ্গে হলে যা হয়, তাই হচ্ছে। আমরা ৩১ দফার ভিত্তিতে প্রায় ৬০টি দল একত্রিত হয়েছিলাম ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে। সেই ৩১ দফায় পিআর (প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) শব্দটি ছিল না। এখন তারা পিআর নিয়ে কথা বলছে।

গয়েশ্বর প্রশ্ন তোলেন, হাসিনা সরকার ছিল ফ্যাসিবাদ। কিন্তু এখনকার সরকার কী করছে? তিন-চারজন ছাড়া কারও কোনো বক্তব্য নেই। মন্ত্রণালয় কীভাবে চলছে, কেউ জানে না। সবই চলছে শেখ হাসিনার রেখে যাওয়া প্রশাসনের ওপর নির্ভর করে। এখন এত বিএনপি-জামায়াত সচিবালয়ে আছে, তাহলে হাসিনার আমলে তারা টিকে ছিল কীভাবে?

তিনি বলেন, এই পিআরের ব্যবস্থাটা এরকম যে, সকালে প্রধানমন্ত্রী একজন, দুপুরে আরেকজন, রাতে আরেকজন। নেপালে এরকম চলছে, যেখানে সকালে-বিকালে প্রধানমন্ত্রী পাল্টায়। এই পদ্ধতি বাংলাদেশের জনগণ মেনে নেবে না।

গয়েশ্বর অভিযোগ করেন, আমরা নিজেরা নিজেদের মধ্যে কাঁদা ছোড়াছুড়ি করি, সোশ্যাল মিডিয়ায় ফাঁসাই। দোষ তাদের না, তারা তো কনটেন্ট পায়, ছড়িয়ে দেয়, ভিউ বাড়ে, আয় হয়। আমরা যদি সংযত না হই, জনগণের জন্য রাজনীতি না করি, তাহলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথ আরও কঠিন হবে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়