News Bangladesh

|| নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৮:৪৩, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
আপডেট: ০২:১০, ২১ আগস্ট ২০২০

সর্বকনিষ্ঠ নোবেল জয়ী নারী মালালা

নারী ডেস্ক

সর্বকনিষ্ঠ নোবেল জয়ী নারী মালালা

মালালা ইউসুফজাই পাকিস্তানের সোয়াত উপত্যকার মিনগোরায় ১৯৯৭ সালের ১২ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। বাবা জিয়াউদ্দিন ও মা তুর পেকাই ইউসুফজাই। শত বাধা ও প্রতিকূলতার মধ্যেও নারী শিক্ষা বিস্তারে সক্রিয় অবদান রেখে আসছেন তিনি। মালালা সর্বকনিষ্ঠ নোবেল জয়ী। শান্তিতে এ পুরস্কার পান তিনি।

তার বাবা জিয়াউদ্দিন একজন শিক্ষা-আন্দোলনকর্মী ও কবি যিনি খুশহাল পাবলিক স্কুল নামক বেশ কয়েকটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা এবং ইংরেজি, উর্দু ও পাশতু ভাষাতে দক্ষ মালালা তার কাছ থেকেই শিক্ষালাভ করেন। একটি সাক্ষাতকারে তিনি জানান যে তার চিকিৎসক হওয়ার ইচ্ছে থাকলেও তার বাবা তাকে রাজনৈতিক জীবন বেছে নিতে উৎসাহত করেন। রাতে সকলে ঘুমিয়ে পড়ার পর জিয়াউদ্দিন মেয়ের সঙ্গে রাজনৈতিক বিষয়ে আলোচনা করতেন।

২০০৭ সালে মাওলানা ফজলুল্লাহর নেতৃত্বে পাকিস্তানি তালেবানের একটি শাখা দেশের উত্তর-পশ্চিমের সোয়াত উপত্যকা দখল করে। কট্টর ইসলামি শরিয়াহ আইনের বলে টেলিভিশন দেখা বন্ধ করে, গান-বাজনা নিষিদ্ধ করে। আর পরের বছর মেয়েদের লেখাপড়া নিষিদ্ধ করে। একই সঙ্গে তারা প্রায় ১৫০টি স্কুল বোমা মেরে ধ্বংস করে দেয়। অথচ পশতু জাতি-অধ্যুষিত এই উপত্যকা চিরকালই শিক্ষার দিকে থেকে পাকিস্তানের বাকি অংশ থেকে এগিয়ে। এখানে মেয়েদের শিক্ষার হার বরাবরই উল্লেখযোগ্য। এই পরিস্থিতি মেয়েদের শিক্ষার ওপরে কী প্রভাব ফেলছে, তা জানার জন্য বিবিসির উর্দু ওয়েবসাইট একটি উদ্যোগ নেয়।

২০০৯ সালে মালালা বিবিসির জন্য ছদ্মনামে একটি ব্লগ লেখেন, যেখানে তিনি তালিবান শাসনের অধীনে তার জীবন ও সোয়াত উপত্যকায় মেয়েদের শিক্ষার ব্যাপারে তার মতামত ব্যক্ত করেন। পরের বছর গ্রীষ্মকালে সাংবাদিক অ্যাডান এলিক তার জীবন নিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমসের জন্য একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন। এরপর মালালা সংবাদমাধ্যম ও টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দিতে থাকেন ও দক্ষিণ আফ্রিকার আন্দোলনকর্মী ডেসমন্ড টুটু দ্বাএয়া আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন।

মালালা ধীরে ধীরে বিখ্যাত হতে শুরু হলে তার বিপদ বাড়তে শুরু করে। সংবাদপত্রে প্রকাশ করে, বাড়িতে ও ফেসবুকেতিনি মৃত্যুর হুমকি দেওয়া শুরু হয়। ২০১২ সালের গ্রীষ্মকালে তালিবান নেতারা তাকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন। ২০১২ সালের ৯ অক্টোবর, মালালা পরীক্ষা দিয়ে বাসে বাড়ি ফেরার সময়, একজন তালিবান বন্দুকধারী সেই বাসে উঠে পড়েন। এই বন্দুকধারী বাসে উঠে মালালাকে তা জানতে চেয়ে বাসের সকল যাত্রীকে মেরে ফেলার হুমকি দেন এবং অবশেষে মালালাকে চিহ্নিত করে তিনটি গুলি ছোড়ে, যার মধ্যে একটি তার কপালের বাঁ দিক দিয়ে ঢুকে মুখুমণ্ডল ও গলা দিয়ে কাঁধে পৌঁছায়।

এ ঘটনায় কায়নাত রিয়াজ ও শাজিয়া রমজান নামক আরো দুই মেয়ে আহত হন। পরবর্তী বেশ কয়েকদিন তিনি অচৈতন্য ছিলেন ও তার অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল। সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মালালার চিকিৎসার জন্য প্রস্তাব আসতে থাকে। ১৫ অক্টোবর, চিকিৎসক ও পরিবারের সম্মতিতে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সম্পূর্ণ সরকারি খরচে যুক্তরাজ্যের বার্মিংহ্যাম শহরের কুইন এলিজাবেথ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

এই হত্যা প্রচেষ্টা সারা বিশ্বের সংবাদমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং জনসাধারণের মধ্যে মালালার জন্য সহমর্মিতা ও তালিবানদের বিরুদ্ধে ক্রোধের সঞ্চার ঘটে। আক্রমণের পরের দিন পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং কুড়ি লক্ষাধিক মানুষ পাকিস্তানে শিক্ষার অধিকারের পক্ষে স্বাক্ষর করেন, যার ফলে পাকিস্তানের প্রথম শিক্ষার অধিকার বিল আইন হিসেবে স্বীকৃত হয়। পাকিস্তানি আধিকারিকরা আক্রমণকারীদের তথ্য পেতে ও চিহ্নিত করতে এক কোটি টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেন। জিয়াউদ্দিন এই নিরাপত্তাহীনতা ও সংকটের মধ্যেও দেশ ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে অস্বীকৃত হন।

তাকে বিশ্বের বিখ্যাত একজন কিশোরী বলে গণ্য করা হয়। তিনি ২০১১ সালে পাকিস্তানের প্রথম জাতীয় যুব শান্তি পুরস্কার এবং ২০১৩ সালে শাখারভ পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৩ সালের জুলাই মাসে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে বিশ্বব্যাপী শিক্ষার পক্ষে সওয়াল করেন ও অক্টোবর মাসে কানাডা সরকার তাকে সাম্মানিক কানাডীয় নাগরিকত্ব প্রদান করার কথা ঘোষণা করে। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তাকে সুইডেনের বিশ্ব শিশু পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়। ২০১৪ সালের মে মাসে হ্যালিফ্যাক্সে ইউনিভার্সিটি অব কিং'স কলেজ তাকে সাম্মানিক ডক্টরেট প্রদান করে।

২০১৪ সালের ১০ অক্টোবর, শিশুদের প্রতি অবিচারের বিরুদ্ধে ও শিক্ষার অধিকারের লড়াইয়ের জন্য মালালা ইউসুফজাই ও ভারতীয় সমাজকর্মী কৈলাশ সত্যার্থীকে নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রদান করা হয়। মাত্র ১৭ বছরে মালালা এই পুরস্কারলাভের সময় বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ নোবেলজয়ীর সম্মান লাভ করেন। পদার্থবিজ্ঞানী আব্দুস সালামের পর তিনি দ্বিতীয় পাকিস্তানি নাগরিক যিনি এই পুরস্কার লাভ করেন। তার নোবেল জয় সম্বন্ধে বিভিন্ন মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।

২০১৪ ইগুয়ালা গণঅপহরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মেক্সিকোর একজন নাগরিক এই পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে বাধা দিলেও নিরাপত্তারক্ষীরা তাকে দ্রুত সরিয়ে নিয়ে যান। মালালা পরে এই ব্যক্তির প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেন। মাত্র সতেরো বছর বয়সে তিনি ছিলেন বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ নোবেলজয়ী ব্যক্তিত্ব। ২০১৫ সালে একাডেমি পুরস্কারের জন্য বাছাইকৃত তথ্যচিত্র ‘হি নেমড মি’ মালালার জীবন নিয়ে তৈরি হয়। সূত্র: ডব্লিউসি।

নিউজবাংলাদেশ.কম/এমএস

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়