News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৮:২৮, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আপডেট: ১৮:৪১, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন না হলে বিঘ্নিত হবে জাতীয় নিরাপত্তা: আলী রীয়াজ

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন না হলে বিঘ্নিত হবে জাতীয় নিরাপত্তা: আলী রীয়াজ

ছবি: সংগৃহীত

আগামী ফেব্রুয়ারিতে যদি জাতীয় নির্বাচন না হয়, তবে দেশে অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতা তৈরি হওয়ার পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তাও বিঘ্নিত হবে বলে সতর্ক করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ। 

তিনি বলেছেন, পরিবর্তনের জন্য নির্বাচন প্রয়োজন, তবে শুধুমাত্র নির্বাচনই যথেষ্ট নয়।

শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ‘নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক সমঝোতার পথ’ শিরোনামে এক গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিয়ে আলী রীয়াজ এ মন্তব্য করেন। 

আলী রীয়াজ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আমি বারবার আহ্বান করেছি। তারা যথেষ্ট সাড়া দিয়েছে, তবে কোনো না কোনো সময় তো প্রক্রিয়াটি শেষ করতে হবে। এটি অনন্তকাল চলতে পারে না। সেক্ষেত্রে নির্বাচনটা করা প্রয়োজন। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন না হলে বাংলাদেশে কেবল অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা তৈরি হবে না, জাতীয় নিরাপত্তাও বিঘ্নিত হবে।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, আগামী নির্বাচনটি রাষ্ট্রকাঠামোর পরিবর্তন নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে। সংস্কার কমিশনে কাজ করার সময় দেখা গেছে, গত ১৬ বছরের যে সংকট ছিল, তা এককালের নয়। এটি ব্যক্তিতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্রের কারণে তীব্রতায় পৌঁছেছিল। কিন্তু কাঠামোগত দিক থেকে আমরা বিভিন্নভাবে এই জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছি। এখন যদি কাঠামো প্রায় অপরিবর্তিত রাখি, সামান্য পরিবর্তন করি, তবে নির্বাচন করে কোথায় পৌঁছাব? 

তিনি বলেন, আমরা একটি কনসলিডেটেড ডেমোক্রেসি চাই। তিন দফা (১৯৭৩, ১৯৯১ ও ২০০৯) চেষ্টা করেও আমরা এটি পাইনি। কাঠামোগত পরিবর্তনগুলোর ব্যাপারে যদি একমত না হওয়া যায়, পরবর্তী নির্বাচনে মৌলিক কোনো হেরফের ঘটবে না।

আলী রীয়াজ উল্লেখ করেন, শেখ হাসিনার ব্যক্তিতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এবং এর পরবর্তী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে ঐক্য তৈরি হয়েছিল, তা ফ্র্যাগমেন্টেড হয়েছে। আমরা কী চাই তা যদি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়, তাহলে এই জায়গায় পৌঁছানো সম্ভব।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাজ শুরু হয়েছিল গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে। বাংলাদেশের ৩০টির বেশি রাজনৈতিক দল প্রাথমিক পর্যায়ে সংবিধান, শাসনব্যবস্থা, আইনি প্রক্রিয়া-বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, পুলিশ ইত্যাদি বিষয়ে মত বিনিময় করেছেন। 

আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ, কিন্তু ভোটাধিকার নয়: ফাওজুল কবির

আলী রীয়াজ মন্তব্য করেন, এই মতবিনিময়ের সময় পরস্পরের সহিষ্ণুতা ছিল সবচেয়ে বড় ইতিবাচক দিক। অনেকে ভয় করেছিলেন, রাজনৈতিক নেতারা চেয়ার ছোড়া শুরু করবে। কিন্তু তা হয়নি; তারা রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তন করতে চায়।

বর্তমানে ৮৪টি বিষয়ে একমত হয়েছে, তবে সব বিষয়ে সম্পূর্ণ ঐকমত্য নেই। প্রাথমিক পর্যায়ে ৬৪টি বিষয়ে ঐকমত্য হয়, যেখানে কিছু ছোটখাটো আপত্তি বা ভিন্নমত আছে। পরবর্তী ২০টি বিষয়ে দেখা গেছে যে ১১টি বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে, একটিতে মাত্র একটি দল নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে।

সংবিধান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সংবিধান এখন যে পরিস্থিতিতে আছে, আমরা সংবিধানের মধ্যেই আছি। অনুচ্ছেদ ১০৬-এর মাধ্যমে বর্তমান সরকার গঠিত হয়েছে। যদি পুরো সংবিধানের মধ্যেই থাকতাম, তাহলে আমরা এখানে বসে আলোচনা করতাম না, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বা সংস্কার কমিশনও তৈরি হতো না। এটি স্বীকার করে এগোতে হবে।

নির্বাচনের পথ বের করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলো ছয়টি পথ প্রস্তাব করেছে। বিশেষজ্ঞরা দুটি প্রধান পথ নিয়ে আলোচনা করছেন, যেগুলো সংবিধানের বাইরে। সংবিধান সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে মতভিন্নতা রয়েছে, যা নির্বাহী ক্ষমতাকে সীমিত করবে, জবাবদিহি তৈরি করবে এবং জনগণের মৌলিক আকাঙ্ক্ষা নিশ্চিত করবে। 

তিনি বলেন, এটি হলো আমরা আরেকটা শেখ হাসিনা চাই না।

গোলটেবিল আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন। 

এছাড়া উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাকের চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান, সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে আজাদ, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, ওসমানী সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড সিকিউরিটির চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. মাহফুজুর রহমান, দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়