দেশজুড়ে চিরুনি অভিযান শুরু করা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
ছবি: সংগৃহীত
সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে দেশজুড়ে একযোগে চিরুনি অভিযানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
রবিবার (১৩ জুলাই) সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের ১১তম সভা শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর নজরদারি চালাবে। কোথাও কোনো অপরাধী বা বিশৃঙ্খলাকারীকে ছাড় দেওয়া হবে না।
মঙ্গলবার (৯ জুলাই) রাজধানীর মিটফোর্ড এলাকায় ভাঙারি ব্যবসায়ী মো. সোহাগকে (৩৯) পিটিয়ে ও মাথা থেতলে হত্যার ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের জন্ম দেয়। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার এফআইআরে উল্লেখিত ১৯ আসামির মধ্যে এখন পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ছয়জনকে ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে শনাক্ত করা হয়।
ঘটনার পরপরই মঈন ও তারেক নামে দুই আসামিকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করে পুলিশ ও সেনাবাহিনী। এরপর একে একে আরও পাঁচজনকে গ্রেফতার করে র্যাব, ডিবি ও পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট। তদন্তে নতুন আসামির নাম আসলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ডের বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় প্রশাসনিক বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো শিথিলতা ছিল কি না, সেটিও গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, খুলনায় যুবদল নেতা মাহবুব হত্যার ঘটনায়ও একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অপরাধী যেই হোক, রাজনৈতিক পরিচয়ে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
আরও পড়ুন: আরও বাড়ল সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার মেয়াদ
দেশজুড়ে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী হামলা, ধর্ম অবমাননা কেন্দ্রিক সহিংসতা, মাদক কারবার, নারী নির্যাতনসহ একাধিক অপরাধ উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। পল্লবী, শ্যামলী, চাঁদপুর, খুলনা ও রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনায় ব্যাপক আলোচনা হয়।
পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত দেশে মোট ১,৯৩০টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। শুধুমাত্র জুন মাসেই খুন হয়েছে ৩৪৩ জন, যা বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, দেশে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সরকার কোনো আপস করবে না। জননিরাপত্তা সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।
তিনি বলেন, আইন যেন কেউ নিজের হাতে না তুলে নেয়। কোনো অপরাধ ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানোই উচিত।
তিনি আরও বলেন, অপরাধী অপরাধীই। সে যে দলেরই হোক না কেন, তাকে ছাড় দেওয়া হবে না। পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাউকে রক্ষা করবে না।
ডিসেম্বরের মধ্যে নির্ধারিত নির্বাচন ঘিরে সম্ভাব্য অস্থিতিশীলতা মোকাবিলায় নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করছে সরকার।
উপদেষ্টা আশাবাদ ব্যক্ত করেন, আমাদের প্রশাসনিক ও নিরাপত্তাজনিত দায়িত্ব যথাসময়ে ও সুচারুভাবে সম্পন্ন হবে।
সাম্প্রতিক নৃশংসতা ও সহিংসতার প্রেক্ষাপটে আজ থেকে শুরু হওয়া চিরুনি অভিযান দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কতটা কার্যকর হয়, তা পর্যবেক্ষণের বিষয়। তবে সরকার এই বার্তাই দিতে চায়— অপরাধী যেই হোক, ছাড় নেই।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








