নাগরিকত্ব নিয়ে মিথ্যাচার, টিউলিপের বিরুদ্ধে তদন্তে এনবিআর
ছবি: সংগৃহীত
শেখ রেহানার কন্যা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিকের বাংলাদেশি নাগরিকত্ব নিয়ে নতুন বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, তার বাংলাদেশের ট্যাক্স ফাইল ও ব্যাংক হিসাব পাওয়া গেছে, যা ভিত্তি করে বর্তমানে তদন্ত শুরু করেছে এনবিআর।
এনবিআর সূত্রে জানানো হয়েছে, টিউলিপ বাংলাদেশে নাগরিক হিসেবে নিজেকে উল্লেখ করে নথি জমা দিয়েছেন। এই নথির ভিত্তিতে তিনি ট্যাক্স ফাইল খুলেছেন এবং নিয়মমাফিক রিটার্ন জমা দিয়েছেন। তবে সেই একই তথ্য তিনি ব্রিটিশ ট্যাক্স ফাইলে দেখাননি। বাংলাদেশে থাকা ট্যাক্স ফাইল ও ব্যাংক হিসাবের কারণে এখন যুক্তরাজ্যের আইনেও তার বিরুদ্ধে মামলা হতে পারে, কারণ তিনি মিথ্যা ঘোষণা করেছেন।
গত ১৩ আগস্ট, দ্য ফিন্যান্সিয়াল টাইমস-কে দুদকের আইনজীবী জানিয়েছেন, যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট সদস্য (এমপি) টিউলিপ সিদ্দিকের বাংলাদেশি নাগরিকত্ব রয়েছে। যদিও টিউলিপ বরাবরই দাবি করে আসছেন, তার বাংলাদেশি নাগরিকত্ব নেই।
বিধিবহির্ভূতভাবে সরকারি প্লট নেওয়ার অভিযোগে আগস্টের প্রথমার্ধে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। মামলার শুনানির ফাঁকে দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মোহাম্মদ সুলতান মাহমুদ ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির এই এমপি একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি হিসেবে বাংলাদেশি পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র গ্রহণ করেছেন এবং ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
সুলতান মাহমুদ আরও জানান, টিউলিপের ঠিকানা, একাধিক পাসপোর্ট ও ভোটার তালিকায় তার নাম—all প্রমাণ সংগ্রহ করা হয়েছে এবং যথাসময়ে এগুলো আদালতে দাখিল করা হবে।
আরও পড়ুন: জুলাই সনদেই ভবিষ্যৎ পথরেখা: ড. আলী রীয়াজ
যদিও টিউলিপ এই বিচারকে ‘হয়রানি ও প্রহসন’ আখ্যায়িত করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, তার কখনো বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র বা ভোটার আইডি ছিল না এবং তিনি শিশু বয়স থেকে কোনো বাংলাদেশি পাসপোর্ট নেননি। তিনি বরাবরই বলেছেন, সরকার বিরোধীদের দমন করছে, এবং তার উপর এই মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা হয়েছে।
টিউলিপ সিদ্দিকের খালা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার তীব্র গণঅভ্যুত্থানের মুখে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পালিয়ে আশ্রয় নেন। সেই সময় টিউলিপের মা শেখ রেহানাও তার সঙ্গে পালিয়ে যান।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) টিউলিপ ও তার খালা, মা ও দুই ভাই-বোনসহ তাদের বিরুদ্ধে ঢাকার পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে বেআইনিভাবে সরকারি প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগ এনেছে। সংস্থাটির আইনজীবীরা দাবি করেন, প্লট পাওয়ার যোগ্যতার নিয়ম এড়িয়ে টিউলিপ রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করেছেন।
দুদকের কৌঁসুলি সুলতান মাহমুদ বলেন, “টিউলিপের পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভোটার তালিকায় থাকা ঠিকানায় একটি সমন পাঠানো হয়েছিল। ভোটার আইডি কার্ডে থাকা ঠিকানাগুলো পরিদর্শন করা হয়েছে। আমাদের দুদক টিমগুলো, একাধিক টিম তদন্তের জন্য সেসব ঠিকানায় গিয়েছে এবং যথাসময়ে নোটিশ দেওয়া হয়েছে।”
টিউলিপ সিদ্দিক গত জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যের সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘সিটি মিনিস্টার’ (ইকোনমিক সেক্রেটারি) পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। এই পদে তিনি দেশের আর্থিক খাতে দুর্নীতি রোধের দায়িত্বে ছিলেন।
টিউলিপ প্রথমবারের মতো ফিন্যান্সিয়াল টাইমস-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনের পর রাজনৈতিক চাপের মুখে পদত্যাগ করেন। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, তিনি খালাসহ শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন দলের সংলগ্নদের সম্পদ থেকে সুবিধা নিয়েছেন।
তবে টিউলিপ সব ধরনের অনিয়ম করার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং এই বিচারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলছেন।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








