স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতির প্রধান মিঠু গ্রেফতার
ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে স্বাস্থ্যখাতে ব্যাপক দুর্নীতির হোতা হিসেবে পরিচিত ঠিকাদার মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর গুলশানের একটি বাসা থেকে মিঠুকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানিয়েছেন ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম।
ডিবি পুলিশ জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে তিনি স্বাস্থ্যখাতে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে ছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদ ও আইনি প্রক্রিয়া শেষে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম শাখার উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানিয়েছেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (গোয়েন্দা-উত্তর) মোহাম্মদ রবিউল হোসেন ভূঁইয়া বলেন, মিঠুর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) মামলা রয়েছে। দুদকের চাহিদাপত্র অনুযায়ী বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাতেই তাকে গুলশান থেকে গ্রেফতার করা হয় এবং বৃহস্পতিবার দুদকে হস্তান্তর করা হবে।
মিঠুর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, স্বাস্থ্যখাতে সিন্ডিকেট গঠন করে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারে তিনি জড়িত ছিলেন।
আরও পড়ুন: পূবালী ব্যাংকে শেখ হাসিনার লকার জব্দ
দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিঠু লেক্সিকোন মার্চেন্ডাইস ও টেকনোক্রেট নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের মালিক। তিনি কৃষি জমি ক্রয়, জমি লিজ, প্লট, ফ্ল্যাট ও বাড়ি নির্মাণে মোট ১৮ কোটি ৪০ লাখ ৫১ হাজার ৫০০ টাকার স্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন।
এছাড়া বিভিন্ন কোম্পানিতে শেয়ার ও বিনিয়োগ, গাড়ি ক্রয়, ব্যাংক হিসাবের স্থিতি, স্বর্ণালংকার, আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিক সামগ্রী মিলিয়ে আরও ৫৭ কোটি ৪৪ লাখ ৮০ হাজার ২৩৮ টাকার অস্থাবর সম্পদ তার নামে পাওয়া গেছে।
সব মিলিয়ে তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের মোট মূল্য দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭৫ কোটি ৮৫ লাখ ৩১ হাজার ৭৩৮ টাকা। এছাড়া পারিবারিক ব্যয়ের পরিমাণ পাওয়া গেছে ৭১ কোটি ৪৫ লাখ ১৪ হাজার ৪৩৪ টাকা। অর্থাৎ সম্পদ ও ব্যয়সহ তার মোট হিসাব দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৪৭ কোটি ৩০ লাখ ৪৬ হাজার ১৭২ টাকা। অন্যদিকে বৈধ উৎস থেকে প্রাপ্ত আয় ছিল ৭১ কোটি ৪৯ লাখ ৬৮ হাজার ৭৩৫ টাকা। ফলে বৈধ আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণভাবে প্রায় ৭৫ কোটি ৮০ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ মিলেছে। এই কারণে দুদক আইন ২০০৪-এর ২৭(১) ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
২০১৬ সালে প্রকাশিত বহুল আলোচিত পানামা পেপারসে মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুর নাম উঠে আসে।
অভিযোগ রয়েছে, তার মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন মালামাল সরবরাহ ও উন্নয়নকাজের নামে প্রভাব খাটিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে।
সেন্ট্রাল মেডিসিন স্টোরসের (সিএমএসডি) সাবেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহীদউল্লাহ মৃত্যুর আগে লিখিতভাবে সরকারের উদ্দেশে জানিয়েছেন, স্বাস্থ্যখাতে কেনাকাটার অনিয়ন্ত্রিত দুর্নীতির মূল কারণ এই খাত ‘মিঠু চক্রের’ দখলে থাকা। এ প্রতিবেদনের পরই রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা, দুদকসহ একাধিক আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা বিষয়টিতে তৎপরতা শুরু করে।
ডিবি পুলিশ জানিয়েছে, মিঠুর বিরুদ্ধে আরও তদন্ত চলছে এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








