সন্তানহারা এই পিতার ডাকেই নেপালে সরকার পতন

ছবি: সংগৃহীত
নেপালে তরুণদের নেতৃত্বে ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির সরকার পতিত হয়েছে। এই আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন ৩৬ বছর বয়সী সুদান গুরুং, যিনি ‘হামি নেপাল’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি।
২০১৫ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে নিজের সন্তানকে হারানোর পর সুদান প্রান্তিক জনগণের জন্য কাজ করতে এই সংগঠনটি গড়ে তোলেন। ধীরে ধীরে সংগঠনটি ছাত্র ও যুব সমাজের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং সমাজসচেতন আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
সুদান গুরুং প্রথমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। তিনি শিক্ষার্থীদের স্কুল ইউনিফর্ম পরে শান্তিপূর্ণ মিছিলের আহ্বান জানান। তবে সরকার ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করলে জনরোষ বৃদ্ধি পায়। সুদান ডিজিটাল নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে, যেখানে বিকল্প মেসেজিং অ্যাপ, ভিপিএন এবং সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যমে বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়। রাতভর ফোন কল, হ্যান্ডবিল ও পোস্টারের মাধ্যমে আন্দোলনের তথ্য জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
সুদান গুরুং শিক্ষার্থীদের স্কুল ইউনিফর্ম পরে রাস্তায় নামার আহ্বান জানান, যা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে আন্দোলনকে বিশ্বজনমতের সমর্থন দেয়। প্রতিটি শহরে স্থানীয় সমন্বয়ক নিয়োগ দিয়ে ভিড় নিয়ন্ত্রণ, মিডিয়া যোগাযোগ ও পুলিশি বাধা মোকাবিলা করা হয়। আহতদের জন্য চিকিৎসা ব্যবস্থাও নিশ্চিত করা হয়।
আরও পড়ুন: এবার নেপালের প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের গুঞ্জন
আন্দোলনের তীব্রতায় মঙ্গলবার (০৮ সেপ্টেম্বর) বিক্ষোভকারীরা রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পৌডেলের বাসভবনে হামলা চালায়, মন্ত্রীর বাড়িতে আগুন দেয় এবং পার্লামেন্ট ভবনও আক্রমণ করে। নেপাল পুলিশের গুলিতে অন্তত ২০ জন নিহত এবং ৩০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। সেনাবাহিনী সংসদ ভবনের চারপাশে নিয়ন্ত্রণ নেয়। সেনাপ্রধানের পরামর্শে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি পদত্যাগ করেন।
সরকার পতনের পর সুদান গুরুং আন্দোলনকারীদের শান্ত থাকতে, সহিংসতা এড়াতে এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তনের জন্য কাজ চালিয়ে যেতে বলেন।
তিনি বলেন, এটি নেপালের জন্য এক নতুন সূচনা। দুর্নীতি ও অকার্যকর সরকারব্যবস্থা থেকে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক শাসনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
নেপালের এই গণঅভ্যুত্থান প্রমাণ করেছে যে, তরুণ নেতৃত্বে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনও বড় পরিবর্তন আনতে সক্ষম। বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশও এই আন্দোলন থেকে শিক্ষা নিতে পারে। নেপালের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এখন নতুন নেতৃত্বের ওপর নির্ভর করছে, যারা জনগণের প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম হবেন।
সুদান গুরুংয়ের সমাজসেবা ও ডিজে পরিচয় এখনও তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উজ্জ্বল। প্রতিবাদী গানের তালে নেপালের ছাত্র-যুবরা একত্রিত হয়েছে। এই আন্দোলন প্রমাণ করে যে তরুণ সমাজকর্মীরা দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে সক্রিয় পরিবর্তনের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে উঠতে পারে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি